আসন্ন ২০২৪–২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের কর ও মূল্যবৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, কার্যকরভাবে কর আরোপ ও মূল্যবৃদ্ধি হলে গ্রাহক পর্যায়ে তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার কমবে। পাশাপাশি এই খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়তে পারে।
বেসরকারি সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুওর (ডর্প) ও অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) যৌথভাবে আয়োজিত এক কর্মশালায় তাঁরা এসব কথা বলেন। আসন্ন বাজেটে তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপ ও মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে আজ শনিবার রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে কর্মশালাটির আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসকারি সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী। ডর্পের অনুষ্ঠান সমন্বয়ক রুবিনা ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাফিউন নাহিন; ডর্পের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন ও নির্বাহী উপদেষ্টা আজহার আলী তালুকদার এবং ইআরএফের সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা।
কর্মশালায় জানানো হয়, তামাকপণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে কর বাড়িয়ে এটির দাম বাড়ানো আন্তর্জাতিকভাবে অনুসৃত একটি পদ্ধতি। তবে বাংলাদেশের বর্তমান কর কাঠামো তামাক ব্যবহার কমাতে কার্যকর প্রভাব রাখতে পারছে না। ২০১৭–১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তামাক ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এ দেশে ১৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী নাগরিকদের মধ্যে ধূমপানের হার ১৮ শতাংশ। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
আতিউর রহমান আরও বলেন, কর ও মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে তামাকপণ্যকে জনসাধারণের নাগালের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে তরুণেরা যাতে এটি গ্রহণ করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপ হলে কেবল সিগারেট খাত থেকেই প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় হবে। এই আয় আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ২৮ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া বাড়তি কর আরোপের ফলে প্রায় ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হতে, ১০ লাখ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হতে পারেন। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ১১ লাখ জনগোষ্ঠীর তামাক ব্যবহারজনিত অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তামাক-কর ও তামাকপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য কয়েকটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে সব ধরনের সিগারেট ব্র্যান্ডে অভিন্ন করভারসহ মূল্যস্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক প্রচলন; ফিল্টারযুক্ত ও ফিল্টারবিহীন বিড়িতে অভিন্ন করভারসহ চূড়ান্ত খুচরা মূল্যে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং জর্দা–গুলের কর ও মূল্যবৃদ্ধিসহ চূড়ান্ত খুচরা মূল্যে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ ইত্যাদি।