রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি—উভয় বাজারেই দেশি পেঁয়াজের দাম আরও বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে গতকাল বৃহস্পতিবার খুচরায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১২ থেকে ১৫ টাকা এবং পাইকারিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়। ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়ছে পেঁয়াজের বাজারে।
এদিকে পাইকারিতে মাঝারি আকারের বিআর-২৮ ও মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা কমেছে। তবে খুচরা বাজারে দোকানিরা এখনো আগের দামে চাল বিক্রি করছেন। এ ছাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে মোটা (গুটি স্বর্ণা) ও নাজিরশাইল চালের দাম।
গতকাল রাজধানীর কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার এবং পাড়া–মহল্লার দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দু–তিন দিন আগের কেনা প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ খুচরা বিক্রেতারা ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। বুধবারের কেনা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহ আগেও এ দাম ছিল ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। পাইকারিতে এক পাল্লা (পাঁচ কেজি) ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ গতকাল বিক্রি হয়েছে ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকায়।
ঢাকার হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে মূলত ভারতীয় পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বাজারে এখন ভারতীয় পেঁয়াজ নেই। তাই দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছেমালিক বাহার উদ্দিন
মহাখালী কাঁচাবাজারের আল আমিন স্টোরে গতকাল বেলা তিনটার দিকে দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। মালিক বাহার উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকার হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে মূলত ভারতীয় পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বাজারে এখন ভারতীয় পেঁয়াজ নেই। তাই দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।’
শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নারায়ণ সাহা জানান, গতকাল দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। বুধবার ছিল ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা। আর এক সপ্তাহ আগে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। তাঁর দাবি, সরকার দ্রুত পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দিলে দাম কেজিতে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ টাকা কমে যাবে।
দেশের স্থানীয় হাটবাজারেই প্রতি মণ (৪০ কেজি) পেঁয়াজ এখন ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা।
পেঁয়াজে স্বস্তি না থাকলেও বাজারে বোরো ধানের নতুন চাল আসতে শুরু করায় পাইকারিতে বিআর-২৮ ও মিনিকেটের দাম কমেছে।
তবে মোটা (গুটি স্বর্ণা) ও নাজিরশাইল চালের দামে পরিবর্তন নেই। গতকাল কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে প্রতি কেজি নাজিরশাইল চাল মানভেদে ৭৬ থেকে ৮৪ টাকা দরে বিক্রি করা হয়।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও মহাখালী কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৬৫-৬৮ টাকায় এবং বিআর-২৮ চাল ৫৪-৫৬ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ দুই বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, এক সপ্তাহ আগেও মিনিকেট চাল ৬৮ থেকে ৭২ এবং বিআর-২৮ চাল ৫৭ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
মহাখালী কাঁচাবাজারের বিক্রেতা মানিক মিয়া বলেন, নতুন ধানের চাল বাজারে আসায় চালের দাম কমতির দিকে। কারওয়ান বাজারের ঢাকা রাইস এজেন্সির মালিক মো. সায়েম আলী বলেন, পাইকারিতে চালের দাম বস্তায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
তবে মোটা (গুটি স্বর্ণা) ও নাজিরশাইল চালের দামে পরিবর্তন নেই। গতকাল কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে প্রতি কেজি নাজিরশাইল চাল মানভেদে ৭৬ থেকে ৮৪ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। এই বাজারের নিউ সুপারমার্কেট অংশে প্রতি কেজি গুটি স্বর্ণা চাল ৪৬ টাকায় বিক্রি করছিলেন দেলোয়ার হোসেন।
চলতি মাসের শুরু থেকেই চালের দাম কমতির দিকে জানিয়ে কৃষিমার্কেট চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন চাল আসায় বাজারে চাল এখন ভরপুর।’ পাইকারিতে গুটি স্বর্ণা ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৪৮ থেকে ৪৯ টাকা, মিনিকেট ৫৬ থেকে ৫৭ টাকা এবং নাজিরশাইল ৭৫ থেকে ৭৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কিছুটা কমল সবজির দামও
রাজধানীর বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতারা জানান, এ সপ্তাহে তুলনামূলকভাবে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবে আলুর দামে কোনো পরিবর্তন নেই। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। তবে পাইকারিতে এক পাল্লা আলু বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়।
মহাখালী কাঁচাবাজারের বিক্রেতা মো. সুমন মিয়ার দোকানে গতকাল ১০০ গ্রাম ধনেপাতা ৩০ টাকায় (এক কেজি ৩০০ টাকা) বিক্রি করা হয়। সপ্তাহ আগে ধনেপাতা ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল। কাঁচা মরিচের দামও কেজিতে ১৫-২০ টাকা কমে ১২৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঢ্যাঁড়স, করলা, বরবটি, কাঁকরোল, পটোল, চিচিঙ্গা ও ঝিঙার মতো সবজি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে।