সারা দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে দু-দণ্ড শান্তি মেলে নিজ ঘরে। ছায়ায়-মায়ায় ঘেরা সেই ঘরটাকে তাই আমরা সাজিয়ে তুলি সাধ্যমতো, নানাভাবে। হোক নতুন ফ্ল্যাট বা নিজের আগের আবাস—একটু সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখলে সেটা প্রশান্তির জোগান দেয়। আমরা অনেকেই বুঝে উঠতে পারি না, কোন ঘরের সাজ কেমন হবে। তখন শরণাপন্ন হই ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের। পেশাগত দক্ষতায় তাঁরা ঘরবাড়ি সাজিয়ে দেন মনের মতো করে।
কোন ফ্ল্যাটের কেমন সাজ হবে, সে বিষয়ে ভাবনা ভাগাভাগি করেছেন ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রতিষ্ঠান ‘হেডরুম’–এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিজন বাড়ৈ শান্ত। বিজন জানান, ‘দিন শেষে ঘর হলো শান্তির জায়গা। তাই ঘরবাড়ির সাজসজ্জা হতে হবে নিজের পছন্দ ও রুচি অনুযায়ী। ইন্টেরিয়রে আমরা যেটা খেয়াল করি, তা হলো হালকা রং।
দেয়ালে বা ঘরের অন্যান্য জায়গায় চোখের প্রশান্তিমতো রং ব্যবহার করি। পরামর্শ দিই, এটার সঙ্গে সবাই যেন পর্দা, বিছানার চাদরও হালকা রঙের ব্যবহার করেন। আর যাঁরা নতুন বাড়ি বানানোর আগে আমাদের পরামর্শ নেন, আমরা চেষ্টা করি তাঁদের বোঝাতে যেন জানালাগুলো বড় ও খোলামেলা রাখেন। তাহলে আলো-বাতাস পেতে সুবিধা হয়। ঝলমল করে ঘরও। একটু বুদ্ধি করে ঘর সাজালে ঘর হয় সত্যিকারের প্রশান্তির জায়গা।
বড় জানালা, হালকা রং এবং খোলামেলা আবহের পরই আমাদের ঘর সাজানোর ধাপে আসে আসবাবপত্র। যাঁরা বিশাল আয়তনের বাড়িতে থাকেন, তাঁদের আসবাব নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। ঘরের যেকোনো জায়গায় পছন্দমতো আসবাব সাজিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু নীড় যদি ছোট হয়, তখন?
‘নীড় ছোট, ক্ষতি নেই…’ এমনটাই মন্তব্য করলেন হাতিল ফার্নিচারের পরিচালক শফিকুর রহমান। তিনি জানান, ছোট বাসার জন্য এখন আসবাবগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়, যেন জায়গা নিয়ে বেশি ভাবতে না হয়। মনে রাখতে হবে, আসবাব এমনভাবে রাখা উচিত, যাতে সেগুলো রাখার পরও পর্যাপ্ত জায়গা থাকে।
শফিকুর রহমানের পরামর্শমতে, ছোট ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টে কীভাবে আসবাব নির্বাচন করলে জায়গা খালি থাকবে, সে সম্পর্কে রইল কিছু ধারণা।
ঘর সাজানোর শুরুতেই আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে কেমন আসবাব দিয়ে ঘর সাজাবেন। যেমন খাবার টেবিল, বড়দের ও বাচ্চাদের বিছানা এবং পড়ার টেবিল—নির্দিষ্ট সময় ছাড়া এগুলো তেমন ব্যবহার করা হয় না। তাই ভাঁজযোগ্য ফার্নিচার ব্যবহার করা ভালো। প্রয়োজন না হলে উঠিয়ে রাখুন। এতে বাচ্চারা ঘরে খেলার বাড়তি জায়গা পাবে।
ফ্ল্যাট সাজাতে বেছে নেওয়া যায় কাস্টমাইজড ফার্নিচার। ছোট ফ্ল্যাটে ফার্নিচার কিনতে গেলে বড় সমস্যা হচ্ছে, ঠিকঠাক মাপের ফার্নিচার পাওয়া। কাস্টমাইজড ফার্নিচারে সঠিক মাপের ফার্নিচার পাওয়া যাবে। পাশাপাশি ফার্নিচার রাখার পর বাড়িতে যথেষ্ট জায়গাও খালি থাকবে। যেমন সোফা, ওয়ার্ডরোব কিংবা বিছানা ইত্যাদি ঘরের নির্দিষ্ট জায়গায় সেট করতে সেই অনুযায়ী কাস্টমাইজড করে তৈরি করে নেওয়া যায়। ঘর ছোট হলে খাটের সঙ্গে যোগ করতে পারেন বই রাখার শেলফ। খাটের চারপাশে ছোট ছোট বই রাখার শেলফ আর নিচে জামা রাখার জায়গা করে নিলে, অনেকটা জায়গা বাঁচবে।
একই আসবাবের কয়েক রকম ব্যবহার ঘরের জায়গা বাঁচাবে অনেকটাই। যেমন কফি বা ল্যাপটপের টেবিল আলাদা না করে ব্যবহার করতে পারেন একটি নেস্টিং টেবিল। এটি ছোট বসার ঘরের জন্য আদর্শ। এই নেস্টেড টেবিলগুলো সাইড ও কফি টেবিল—দুভাবেই সুন্দর কাজ করে। সোফার নিচে লুকানো স্টোরেজ রাখতে পারেন, এতে অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস রাখতে সুবিধা হবে। ফলে ঘর আরও বেশি পরিপাটি এবং খোলামেলা দেখা যাবে।
ছোট পরিবারগুলোয় বেড়েছে সোফা কাম বেডের ব্যবহার। এ ধরনের সোফা কাম বেড বাসায় মেহমান এলে ঝামেলা কমিয়ে দেয় অনেকটা। এভাবে বসার ঘরটিকে অতিরিক্ত বেডরুম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। জিনিসপত্র, বই, রিমোট ও খেলনাগুলোর জন্য আরও বেশি হলে টিভির ওপর উলম্ব স্থানটি ব্যবহার করতে পারেন। এসব সংরক্ষণের জন্য টিভি ক্যাবিনেটের ওপর আলাদা তাক লাগিয়ে নিলে জিনিস থাকবে গোছানো।
আধুনিক বাড়িঘরের রান্নাঘরগুলোও হয়ে গেছে একচিলতে। তাই প্রতিটি ইঞ্চিও কাজে লাগাতে হয় বুদ্ধি করে। অন্য সবকিছুর সঙ্গে একটি চাকাযুক্ত কার্ট লাগিয়ে মসলা রাখার বাড়তি স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন অনায়াসে।
খোলা তাকগুলো ব্যবহার করতে পারেন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য। এতে রান্নাঘর এলোমেলো লাগবে না। বরং লাগবে খোলামেলা।