ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি ব্যাপকভাবে কমেছে। তবে ভারতে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই স্থলবন্দর দিয়ে মাত্র ৭ কোটি ৫ হাজার টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে, যা এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ৫৮ কোটি ৯৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা কম। আবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থলবন্দরটি দিয়ে প্রায় ৪২৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৫১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মার্কিন ডলারের সংকট, গম আমদানি বন্ধ হওয়া ও বাংলাদেশে পণ্যের দাম বাড়ার কারণেই মূলত আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি কমেছে।
এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই স্থলবন্দরে ৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৫ লাখ ৭৮ হাজার ও ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৭ কোটি ৬২ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছিল।
আখাউড়া স্থলবন্দর সাধারণত পেঁয়াজ, আদা, জিরা ও পাথর আমদানি হয়ে থাকে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয় সিমেন্ট, তাজা মাছ, শুঁটকি, তুলা, ম্যাঙ্গো ফ্রুট ড্রিংকস, প্লাস্টিকের আসবাব, মেলামাইনের সামগ্রী, পিভিসি পাইপ ও দরজা, থ্রেসিং মেশিন, ডিফরমেট বার ইত্যাদি পণ্য।
জানতে চাইলে আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের চাহিদা গম আমদানিতে; কিন্তু ভারত সরকার গম রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। তারা আরও কিছু পণ্য রপ্তানির অনুমতি দিচ্ছে না। আবার দাম বেশি বলে আমরা কিছু পণ্য আমদানি করতে পারছি না। আমরা রাবার থ্রেড, থ্রি-পিস, শাড়ি, ডিম, পশুর খাবার ও বাদাম আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছি। এতে এই স্থলবন্দরের রাজস্ব আয় বাড়বে।’
গত আট অর্থবছরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মোট ৩ হাজার ৫২৭ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। বন্দর ও কাস্টমসের সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই স্থলবন্দর দিয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২১৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৭৫ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৩২ কোটি টাকা ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫৪২ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬৯৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬৮০ কোটি ১২ লাখ টাকা ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি শুরু হয় ১৯৯৪ সালে। এটি মূলত রপ্তানিমুখী স্থলবন্দর। আমদানিও হয়, তবে তা খুবই কম।
২০২২-২৩ অর্থবছরে গম, পাথর, ভুট্টা ও পেঁয়াজ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পেঁয়াজ, আদা, পাথর ও জিরা আমদানি হয়েছে।
এই স্থলবন্দর দিয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে (প্রথম ৯ মাসে) ১ কোটি ১০ লাখ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৮৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই স্থলবন্দরে ভ্রমণকর বাবদ আদায় করেছে ১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা।
আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্টের ইনচার্জ পরিদর্শক খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশ প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজার যাত্রী এসেছে, এর বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ৫১ হাজার যাত্রী ভারত ভ্রমণে গেছেন।