দেশে নারীপ্রধান খানার সংখ্যা কমে গেছে। অর্থাৎ যেসব পরিবার বা খানার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নারীরা নেন, এমন পরিবারের সংখ্যা কমেছে দেশে। তার বিপরীতে বেড়েছে পুরুষ প্রধান পরিবারের সংখ্যা । বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত বুধবার খানা আয় ও ব্যয়ের যে জরিপ প্রকাশ করেছে, তাতে এ চিত্র উঠে এসেছে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয়ভাবে এখন দেশে পুরুষপ্রধান পরিবার ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ। তার বিপরীতে নারীপ্রধান পরিবার ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ পরিবারের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৮৭ শতাংশ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত নেন পুরুষেরা। আর মাত্র সাড়ে ১২ শতাংশ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রয়েছে নারীদের হাতে। এর আগে ২০১৬ সালের জরিপে দেখা যায়, জাতীয়ভাবে দেশে পুরুষপ্রধান পরিবার ছিল ৮৬ দশমিক ৯ শতাংশ। আর নারীপ্রধান পরিবার ছিল ১৩ দশমিক ১ শতাংশ।
গত তিন–চার বছরে আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অনেক পরিবার গ্রাম থেকে শহরে চলে এসেছে, আবার অনেক পরিবারে বিদেশে চলে গেছে। এতে নারীপ্রধান পরিবারের ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন এসে থাকতে পারে।সায়মা হক, অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বিবিএসের পক্ষে গতকাল বুধবার খানার আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২–এর প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে জরিপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির উপপরিচালক এবং খানা আয় ও ব্যয় জরিপ প্রকল্পের পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস কার্যালয়ে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
এদিকে, পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত তিন–চার বছরে আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অনেক পরিবার গ্রাম থেকে শহরে চলে এসেছে, আবার অনেক পরিবারে বিদেশে চলে গেছে। এতে নারীপ্রধান পরিবারের ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন এসে থাকতে পারে। এ ছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, জরিপের সময় অনেক নারী হয়তো তাঁদের নিজেদের পরিবারপ্রধান হিসেবে পরিচয় দিতে চান না। পরিবারের সিদ্ধান্ত হয়তো নারীরা নিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু কেউ যখন তাঁকে প্রশ্ন করেন, তখন তিনি পরিবারের প্রধান হিসেবে পুরুষকেই সামনে তুলে ধরেন।’
সায়মা হক বলেন, ‘আমরা এখনো খানা আয়–ব্যয় জরিপের পরিপূর্ণ তথ্য জানি না। খানাপ্রধান হিসেবে কী ধরনের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা–ও এখনো আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। পুরো জরিপের তথ্য যখন সামনে আসবে, তখন সেসব তথ্য–উপাত্ত পর্যালোচনা করে এ ধরনের পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা পাব।’
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয়ভাবে এখন দেশে পুরুষপ্রধান পরিবার ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ। তার বিপরীতে নারীপ্রধান পরিবার ১২ দশমিক ৬ শতাংশ।
বিবিএসের জরিপের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে নারীপ্রধান পরিবার বেশি। ২০২২ সালের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, গ্রামাঞ্চলে নারীপ্রধান পরিবার ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। শহরাঞ্চলে এ ধরনের পরিবার ১২ দশমিক ২ শতাংশ। তবে উভয় ক্ষেত্রে নারীপ্রধান পরিবারের সংখ্যা বা হার ২০১৬ সালের তুলনায় কমেছে। ২০১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী, গ্রামাঞ্চলে নারীপ্রধান পরিবার ছিল ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ আর শহরাঞ্চলে এ ধরনের পরিবার ছিল ১২ দশমিক ৭ শতাংশ।