নেটফ্লিক্স
নেটফ্লিক্স

নেটফ্লিক্সের প্যাকেজের দাম বেড়েছে, বেড়েছে গ্রাহকসংখ্যা ও শেয়ারের দামও

যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সে কিছু কিছু প্যাকেজের মূল্য বাড়িয়েছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স। এ মূল্যবৃদ্ধিতে নতুন গ্রাহকেরা আশাহত হয়েছেন। যদিও নেটফ্লিক্সের জন্য সুখবর হলো, এ খবরে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১৩ শতাংশ বেড়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞাপনহীন সম্প্রচারের জন্য মাসিক মাশুল ৩ ডলার বৃদ্ধি করে ২২ দশমিক ৯৯ ডলার করেছে নেটফ্লিক্স। ব্রিটেনে একই সেবার মাশুল ২ পাউন্ড বৃদ্ধি করে ১৭ দশমিক ৯৯ পাউন্ড এবং ফ্রান্সের জন্য ২ ইউরো বৃদ্ধি করে তা ১৯ দশমিক ৯৯ ইউরো করা হয়েছে।

এ খবরে বিনিয়োগকারীরা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। এতে লেনদেনের বর্ধিত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে নেটফ্লিক্সের শেয়ারের দাম ৩৪৬ ডলার থেকে বেড়ে ৩৯০ ডলারে উন্নীত হয়েছে।

চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে সারা বিশ্বের প্রায় ৯০ লাখ মানুষ নেটফ্লিক্সে যোগ দিয়েছেন, যদিও ওয়াল স্ট্রিটের পূর্বাভাস ছিল ৬০ লাখ মানুষের। নেটফ্লিক্স বলেছে, চতুর্থ প্রান্তিকেও এ পরিমাণ মানুষ গ্রাহক হবে বলে তারা আশা করছে।

হলিউডের অভিনেতা ও কলাকুশলীদের ধর্মঘট সত্ত্বেও এত পরিমাণ মানুষের নেটফ্লিক্সে যোগ দেওয়ার অর্থ হলো, তারা ভালো করছে। ধর্মঘটের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক চলচ্চিত্র ও ওয়েব সিরিজের শুটিং ব্যাহত হয়েছে। তবে নেটফ্লিক্সের বেশির ভাগ কনটেন্টের শুটিং অন্যান্য দেশে হচ্ছে।

এ সফলতার পেছনে স্থানীয় গল্পের বৈশ্বিক আবেদন তৈরির ভূমিকা আছে বলে মনে করে নেটফ্লিক্স। স্ট্রিমিং সাইটটি জাপানের বিখ্যাত মাঙ্গা সিরিজের পুনর্নির্মাণ করেছে ‘ওয়ান পিস’ নামে। সিরিজটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চলা কিছু টিভি শোয়ের কারণেও গ্রাহক বেড়েছে বলে জানিয়েছে নেটফ্লিক্স, যেমন আইনবিষয়ক নাটক ‘সুটস’। এটি সম্প্রচারের লাইসেন্স তারা নিয়েছে কমকাস্ট ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত এইচবিওর সিরিজ ‘ব্র্যান্ড অব ব্রাদার্স’ থেকে।

নেটফ্লিক্সের সহকারী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টেড স্যারানডোস রয়টার্সকে বলেছেন, ‘এ সময় সমৃদ্ধ ও বৃহৎ পরিসরে আবেদন আছে—এমন অনুষ্ঠান নির্বাচন করতে পেরে আমরা আনন্দিত; করোনার সময়ও আমরা একইভাবে গ্রাহক বাড়াতে পেরেছিলাম, তখনো দীর্ঘ সময়ের জন্য কনটেন্ট নির্মাণ ব্যাহত হয়েছে।’

এদিকে হলিউডের চলচ্চিত্র ও টিভি লেখকেরা চলতি মাসে নতুন চুক্তি গ্রহণ করেছেন; যদিও অভিনেতারা এখনো ধর্মঘটে আছেন। টেড স্যারানডোস রয়টার্সকে বলেন, নেটফ্লিক্স এই ধর্মঘটের অবসান ঘটাতে শতভাগ অঙ্গীকারবদ্ধ।

বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে নেটফ্লিক্সের এ গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের পর সর্বোচ্চ। তখন সারা বিশ্ব লকডাউনে ছিল। মানুষ ঘরে বসে সময় কাটাতে নেটফ্লিক্সসহ বিভিন্ন স্ট্রিমিং সাইটের গ্রাহক হয়েছেন। সে জন্য তাঁদের গ্রাহকসংখ্যা অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল।

পিপি ফোর সাইটের বিশ্লেষক পাওলো পেসকাটোর রয়টার্সকে বলেন, নেটফ্লিক্সের গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, তারা যে সম্প্রতি পাসওয়ার্ড বিনিময়ের ওপর খড়্গহস্ত হয়েছে, তাতে ভালো ফল মিলছে। সেই সঙ্গে তারা বিজ্ঞাপন নিচ্ছে, সেখান থেকেও ভালো অঙ্কের রাজস্ব আসছে। অর্থাৎ সব দিক থেকেই তারা ভালো করছে।

নেটফ্লিক্সের আর্থিক বিবরণী থেকে জানা যায়, সেপ্টেম্বর মাসের শেষে কোম্পানির বৈশ্বিক গ্রাহকসংখ্যা ২৪ কোটি ৭০ লাখে উঠেছে। সবচেয়ে বেশি নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়েছে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে—এ অঞ্চল থেকে নতুন পাওয়া গ্রাহকের সংখ্যা ৪০ লাখ। ফলে নেটফ্লিক্সের ৭০ শতাংশ গ্রাহক এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের।

চলচ্চিত্র, টিভি ও সব ধরনের অনুষ্ঠান বিবেচনায় বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে সুটস ছিল নেটফ্লিক্সের সবচেয়ে বেশি দেখা অনুষ্ঠান। নেটফ্লিক্সে আসার পর টানা ১২ সপ্তাহ এটিই সবচেয়ে বেশি দেখা হয়েছে। এ সিরিজে অভিনয় করেছেন প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী মেগান মার্কেল। এটি প্রথম মুক্তি পেয়েছিল ইউএসএ কেবল নেটওয়ার্কে-২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চলেছে এটি।

এ ছাড়া তৃতীয় প্রান্তিকে নেটফ্লিক্সের রাজস্ব আয় হয়েছে ৮৫৪ কোটি ডলার, আর শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৩ দশমিক ৭৩ ডলার।