দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ও জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে হরতাল, অবরোধ ও সহিংসতাসহ অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর যেকোনো অসহিষ্ণু রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহারের আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সংগঠনটি আজ বুধবার এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানিয়েছে। এতে জানানো হয়, বর্তমান রাজনৈতিক সহিংসতার পরিস্থিতিতে ব্যবসা, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) বিবৃতিতে বলেছে, বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়েছে। বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ডলার-সংকট, জ্বালানি তেলের মূল্য ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসা পরিচালনার বায় অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। অন্যদিকে আমদানি কমে যাওয়ায় ইতিমধ্যে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে এবং রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে। এরই মধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ, যা দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে আরও নাজুক করে তুলছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই হরতাল, অবরোধসহ রাজনৈতিক অস্থিরতা জাতীয় অর্থনীতিকে আরও শঙ্কার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করে এফবিসিসিআই। সংগঠনটি বলেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি সাপ্লাই চেইন তথা সরবরাহ ব্যবস্থাকে ভীষণভাবে বিঘ্নিত করছে। এর প্রভাব ইতিমধ্যে পণ্যের বাজারমূল্য ও রপ্তানির ওপর পড়ছে। উদ্যোক্তারা নির্ধারিত সময়ে পণ্য জাহাজীকরণ করতে না পারলে ক্রয়াদেশ বাতিলের ঝুঁকিতে পড়বেন। সেই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ সব পণ্য সামগ্রীর ঊর্ধ্ব মূল্যের প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর।
এফবিসিসিআই বলেছে, হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচির কারণে বিদেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা যাবে। এর ফলে বিদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবেন। অন্যদিকে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে এবং কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়বে, যা কখনোই কাম্য নয়। শুধু তা-ই নয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃত করে শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনটি জানায়, এক দিন হরতাল বা অবরোধে দেশের অর্থনীতির প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। হরতাল-অবরোধের মতো অসহিষ্ণু কর্মসূচি চলতে থাকলে বাংলাদেশের মতো একটি উদীয়মান অর্থনীতি সেই ভার সইতে পারবে না।
এফবিসিসিআই বলেছে, ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা হরতাল, অবরোধ ও সহিংস কোনো কর্মসূচি চান না। তাঁরা চান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। কারণ, এটা ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধরে রাখা সম্ভব হবে না। সাধারণ মানুষ ও অর্থনীতির বৃহৎ স্বার্থের কথা বিবেচনা করে হরতাল-অবরোধের মতো অসহিষ্ণু কর্মসূচি থেকে রাজনৈতিক দলগুলো ফিরে আসবে বলে সংগঠনটি বিশ্বাস করে।
সংগঠনটির মতে, চলমান বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও দেশের অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী কাঠামোর ওপর দাঁড় করানোর লক্ষ্যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু চলমান হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রলম্বিত হলে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট) অর্জনসহ জাতীয় লক্ষ্যসমূহ অর্জন ব্যাহত হবে।
এফবিসিসিআই বিশ্বাস করে, দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের উন্নয়ন তথা দেশের সার্বিক উন্নয়নে রাজনীতিবিদরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন হিসেবে এফবিসিসিআই দেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে হরতাল, অবরোধসহ অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর এমন রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহারের আহ্বান জানায়।