বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের মুদিদোকান ব্যবসায়ী ওয়ালি উল্লাহ। ফেসবুক পোস্টে তিনি নিজের দোকানের পাঁচটি ছবি যুক্ত করে লেখেন, ‘এক দিন আগে, আর এক দিন পরে।’ ওই এক লাইনেই তিনি জানালেন, মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ওই দোকান আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ভোররাতে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ভয়াবহ আগুন লাগে। এতে এই মার্কেটে থাকা পাঁচ শতাধিক দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ দোকানই আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলোর একটি লিজা ট্রেডিংয়ের মালিক ওয়ালি উল্লাহ।
ওয়ালি উল্লাহর দেওয়া ফেসবুক পোস্টে দেখা গেছে, এক দিন আগেও তাঁর দোকানে সারি করে সাজানো ছিল বিভিন্ন মুদিপণ্য। পণ্য রাখার জন্য দোকানে ছিল তিনটি বড় ফ্রিজ। ভেতরে ছিল হিমায়িত মাংস আর নানা রকম প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উপকরণ। কিন্তু সবকিছুই পুড়ে গেছে।
কৃষি মার্কেটে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর আগে মুদিদোকান দিয়েছিলেন তিন ভাই—ওয়ালি উল্লাহ, আবদুল জলিল ও আল আমিন। মুদিপণ্যের পাশাপাশি রেস্তোরাঁর জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খাদ্য উপকরণও বিক্রি করতেন তাঁরা।
পাঁচ বছর ধরে দোকানটিতে ধীরে ধীরে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছিলেন তিন ভাই, পুড়ে যাওয়ার সময় সেখানে ছিল দেড় কোটি টাকার মতো পণ্য ও সরঞ্জাম। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েও বিনিয়োগ করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু আগুনে সব হারিয়ে একপ্রকার নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
পুড়ে যাওয়া লিজা ট্রেডিংয়ের সামনে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন দোকানের মালিক ওয়ালি উল্লাহ। জানালেন, আগে একই মার্কেটে মামার একটি দোকানে সহকারী হিসেবে কাজ করতেন তাঁরা তিন ভাই। ২০১৭ সালের শেষের দিকে নিজেদের সব পুঁজি খাটিয়ে একটি মুদিদোকান দেন। পরে রেস্তোরাঁয় প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খাদ্য উপকরণও বিক্রি শুরু করেন তাঁরা।
কয়েক ঘণ্টার আগুনে দোকানের সবকিছু পুড়ে যেতে দেখেছেন ওয়ালি উল্লাহ। একটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে যে ঋণ নিয়েছেন, তাতে প্রতি মাসেই কিস্তি দিতে হয়। এখন সেই ঋণ পরিশোধ নিয়েই বড় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বলে জানালেন এই ব্যবসায়ী।
ওয়ালি উল্লাহ বলেন, ‘গত রাত ১০টার সময় দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরি। আগুনের খবর পেয়ে এসে শুরুতে দোকান খোলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু খুব বেশি তাপের কারণে তা আর সম্ভব হয়নি। চোখের সামনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’
ক্ষতিগ্রস্ত এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়ে নিজেদের সব পুঁজি দোকানে বিনিয়োগ করেছিলাম এই দোকানে। এখন ছাই ছাড়া আমাদের আর কিছুই অবশিষ্ট রইল না।’