ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে প্রচণ্ড গরমের কারণে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এয়ারকন্ডিশনার (এসি) বিক্রি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
দেশে কয়েক দিন ধরে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। গতকাল শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অসহনীয় তাপমাত্রায় স্বস্তি পেতে অনেকেই শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) কিনতে বৈদ্যুতিক পণ্যের শোরুম বা বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছেন। ফলে এসি বিক্রি বেশ বেড়ে গেছে।
এসি উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে এখন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এসি বিক্রি ২০–৩০ শতাংশ বেড়েছে। বাসাবাড়ির জন্যই বেশি এসি কেনা হচ্ছে।
ঈদের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে এসি বিক্রি বাড়ছে। এসি বিক্রিতে আমরা গত বছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত ভালো অবস্থানে রয়েছি।নুরুল আফসার, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইলেক্ট্রোমার্ট
বর্তমানে দেশে ওয়ালটন, ইলেক্ট্রোমার্ট, ট্রান্সকম, এসকোয়্যার, সিঙ্গার বাংলাদেশ, বাটারফ্লাই, র্যাংগ্স, ইলেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল, মিনিস্টার, ভিশন, এলজিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসি উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, রোজার ঈদের আগেই এ মৌসুমের এসি বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে এক সপ্তাহ ধরে বিক্রি বেশি বেড়েছে।
এসি বিক্রি বৃদ্ধির চিত্রটি বোঝা যায় বিভিন্ন বিক্রয়কেন্দ্রে খোঁজ নিলে। যেমন ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠান র্যাংগ্স ই-মার্টের শেওড়াপাড়ার বিক্রয়কেন্দ্রে গত এক সপ্তাহে ৩০টি এসি বিক্রি হয়েছে। অথচ স্বাভাবিক সময়ে মাসে তাদের ৩০টির মতো এসি বিক্রি হতো। বিক্রয়কেন্দ্রটির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক শাহরিয়ার নূর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এভাবে বিক্রি হতে থাকলে আমার কাছে এসির যে মজুত রয়েছে, তা আগামী পাঁচ–ছয় দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।’
কোম্পানিগুলো জানায়, প্রচণ্ড গরমের কারণে এসি বিক্রির পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। যেমন চীনের তৈরি গ্রি ব্র্যান্ডের এসির বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ইলেক্ট্রোমার্টের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আফসার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে এসি বিক্রি বাড়ছে। এসি বিক্রিতে আমরা গত বছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত ভালো অবস্থানে রয়েছি।’
ঢাকার বাইরেও বিক্রি বেড়েছে
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে সাড়ে পাঁচ লাখ থেকে ছয় লাখ ইউনিট এসি বিক্রি হয়। বাসাবাড়িতে এক থেকে দুই টন ক্ষমতার এসির চাহিদা বেশি। তবে এখন বেশি বিক্রি হচ্ছে দেড় টন ক্ষমতার বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী প্রযুক্তির ইনভার্টার এসি।
বিক্রেতারা জানান, রাজধানী ঢাকায় এসির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তবে ঢাকার বাইরে জেলা–উপজেলা পর্যায়েও এসির বেশ চাহিদা রয়েছে। যেমন বরিশালের একটি উপজেলায় অবস্থিত সিঙ্গারের একটি বিক্রয়কেন্দ্রে গত এক সপ্তাহে ১২টি এসি বিক্রি হয়েছে।
সরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সাইফ সুজন চলতি মাসে দেড় টনের একটি এসি কিনেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অতিরিক্ত গরম ও ঘামের কারণে আমার ছোট্ট মেয়ের ঠান্ডা লেগে যায়। চার্জার ফ্যান দিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায় না। এ জন্য মেয়ের কথা চিন্তা করেই এসি কিনেছি।’
বেড়েছে উৎপাদন, দামও বাড়তি
চলতি বছর অনেক বেশি গরম পড়তে পারে, এমন ধারণা আগেই ছিল এসি প্রস্তুতকারকদের। দেশে গত বছর গরমে ব্যাপক চাহিদার কারণে শেষ সময়ে এসির সংকট তৈরি হয়েছিল। তা বিবেচনা করে এ মৌসুমে এসি উৎপাদন বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। যেমন চলতি মৌসুমের জন্য প্রায় ৩০ শতাংশ এসি উৎপাদন বাড়িয়েছে দেশি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ। ওয়ালটনের এসি পণ্যের উপপ্রধান ব্যবসা কর্মকর্তা সন্দীপ বিশ্বাস জানান, চলতি বছর তাঁদের প্রায় দুই লাখ ইউনিট এসি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রার ৭০ শতাংশ বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তাঁরা।
কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ব্র্যান্ডভেদে প্রতিটি এসির দাম ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা বেড়েছে। তবে কেউ কেউ দাম বাড়ায়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, দেড় বছর ধরে ডলার–সংকটের কারণেই মূলত এসির দাম বেশি বেড়েছে। এ সময়ে প্রতিটি এসির দাম ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেড়েছে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, চলতি মৌসুমে এসির দাম বাড়ানো হয়নি। বরং ক্রেতাদের জন্য মূল্যছাড় ও মানিব্যাক গ্যারান্টিসহ বিভিন্ন সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
গত রোজার ঈদের পর থেকেই দেশে তাপমাত্রা মোটামুটি ৩৫ ডিগ্রির ওপরে রয়েছে। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তাপমাত্রার তীব্রতা বেশি থাকবে। এমন অবস্থায় এসি বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা বিক্রেতাদের। এলিট হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নূর এ আলম বলেন, আগামী চার–পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত এসি বেচাকেনা চলবে। তবে লম্বা সময় ধরে দাবদাহ থাকলে এসির চাহিদা আরও বাড়বে; তখন বাজারে এসির কিছুটা সংকটও দেখা দিতে পারে।