বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান

সরকারের সঙ্গে সখ্য ব্যবসায়ের ভিত্তি হতে পারে না: জ্বালানি উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে সখ্য ব্যবসায়ের ভিত্তি হতে পারে না। এর মাধ্যমে খারাপ ব্যবসায়ীরা ভালো ব্যবসায়ীদের দূরে ঠেলে দিয়েছে। আমরা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই।’

আজ শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন জ্বালানি উপদেষ্টা। দেশের শিল্প খাতে জ্বালানি–সংকট সমাধানের পথ শীর্ষক এ সেমিনার আয়োজন করে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এ ছাড়া বিভিন্ন শিল্প খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা ও প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বিগত সময়ে সরকারের সঙ্গে (পাবলিক সেক্টর) ব্যবসার ক্ষেত্রে অন্যতম মানদণ্ড ছিল—আপনাকে মন্ত্রী চিনতে হবে। সরকারের সঙ্গে সখ্যের ভিত্তিতে দেশে অনেকে ব্যবসায়ী হয়েছেন। এই সমস্যার দিকে এখন চোখ ফেরাতে হবে।’ স্বজনতোষী ব্যবসা খুব দীর্ঘস্থায়ী হয় না উল্লেখ করে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এটা না করে বরং আপনারা প্রতিযোগিতামূলকভাবে ব্যবসা করুন। আমরা স্বজনতোষী, শৃঙ্খলিত অর্থনীতি থেকে মুক্ত হতে চাই।’

সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় যেখানে বিনিয়োগ হওয়া দরকার ছিল সেখানে বিনিয়োগ হয়নি। এর পরিবর্তে অপ্রয়োজনীয় জায়গায় বিনিয়োগ হয়েছে, যা ছিল মূলত অপচয়। এগুলো যখন বন্ধ করা হয়েছে, তখন প্রবৃদ্ধি কমেছে। এখন বলা হচ্ছে, আগেই ভালো ছিলাম।’ এ সময় ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কি অপচয়ের প্রবৃদ্ধি চান, নাকি প্রকৃত প্রবৃদ্ধি চান, সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। আমরা উন্নয়নকে মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে চাই।’

ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘ব্যবসার ক্ষেত্রে বড় দুটি সমস্যা আমরা দেখছি। একটা হচ্ছে প্রতিযোগিতার অভাব, আরেকটি অপচয়। দুটি সমস্যা সমাধানে আমরা কাজ করছি। সরকারি খাতের ব্যবসায় প্রতিযোগিতার অনেক অভাব রয়েছে। আমরা এখন যেখানে যেটা পারছি, উন্মুক্ত (প্রতিযোগিতামূলক) করে দিচ্ছি। আপনারা (ব্যবসায়ীরা) এ সুযোগের পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করুন।’

এ প্রসঙ্গে কয়েকটি উদাহরণ দেন জ্বালানি উপদেষ্টা। তিনি জানান, দেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য আগে ২৩টি কোম্পানির একটা তালিকা ছিল। অর্থাৎ কেবল এই কোম্পানিগুলোই এলএনজি আমদানি করতে পারত। বর্তমান সরকার এটি উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তিনি জানান, দ্বীপজেলা ভোলা বর্তমানে ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের উপযোগী অবস্থায় রয়েছে। তবে পাইপলাইন না থাকায় তা অন্যত্র নেওয়া যাচ্ছে না। বিগত সরকারের সময়ে শুধু একটি কোম্পানিকে ওই গ্যাস সরবরাহের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এটিও উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ভোলা থেকে এখন ব্যবসায়ীরা চাইলে সিএনজি হিসেবে গ্যাস এনে শিল্পে ব্যবহার করতে পারেন।

এ ছাড়া আগামী ডিসেম্বর মাসে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ঠিকাদার নিয়োগপ্রক্রিয়া উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে জানান ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, এর ফলে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কিংবা দেশি-বিদেশি যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান উন্মুক্ত এ দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে।