বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসেই (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ঋণ পরিশোধ ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। গত জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে সব মিলিয়ে ২০৩ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশকে ৪৩ শতাংশ বেশি অর্থ ঋণ হিসেবে পরিশোধ করতে হয়েছে। এই সময়ে ঋণের সুদ পরিশোধ দ্বিগুণ হয়ে ৮০ কোটি ডলার হয়েছে।
বিদেশি ঋণের হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে আজ সোমবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সবশেষ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
ইআরডির তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের সুদ ও আসল মিলিয়ে প্রায় ২০৩ কোটি ১০ হাজার ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। গত বছর একই সময়ে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১৪২ কোটি ৪১ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৬১ কোটি ডলার।
ডলারের বাড়তি দামের কারণে টাকার অঙ্কেও ঋণ পরিশোধ অনেক বেড়েছে। জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে সব মিলিয়ে ২২ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা বেশি।
ইআরডি সূত্রে জানা যায়, গত ২০২২–২৩ অর্থবছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে সব মিলিয়ে ২৬৮ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছিল।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পর থেকে দেশের বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতি কিছুটা চাপের মধ্যে পড়েছে। চীন ও রাশিয়ার ঋণের কারণে এখন ঋণ পরিশোধ বাড়ছে। ভবিষ্যতে এই চাপ আরও বাড়বে।
ইআরডি সূত্রে আরও জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে উন্নয়ন সহযোগীরা সব মিলিয়ে ৪৯৯ কোটি ৭৫ লাখ ডলার ঋণ দিয়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৪৮৭ কোটি ৬৫ কোটি ডলার।
এই সময়ে সবচেয়ে বেশি অর্থ ছাড় করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এই সংস্থা অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে ছাড় করেছে ১৩০ কোটি ডলার। এরপর রয়েছে জাপান। এ সময় জাপান দিয়েছে ১০৪ কোটি ডলার। তৃতীয় স্থানে থাকা বিশ্বব্যাংক ছাড় করেছে ৮৮ কোটি ডলার। এ ছাড়া রাশিয়া ৮১ কোটি ডলার, চীন ৩৬ কোটি ডলার এবং ভারত ১৯ কোটি ডলার ছাড় করেছে।
ইআরডির তথ্য অনুসারে, জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে উন্নয়ন সহযোগীরা ৭২০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ঋণ ও অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আগের বছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ১৭৮ কোটি ডলার।
চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ায় বিদেশি ঋণ পরিশোধে চাপ বেড়েছে বলে মনে করেন ইআরডির কর্মকর্তারা। তাঁদের মতে, এসব ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ও ঋণ পরিশোধের সময়সীমা কম, তাই কিস্তির পরিমাণও বেশি। ইআরডি সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে মেট্রোরেল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নেওয়া ঋণের বিপরীতে অর্থ পরিশোধ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বেশ কিছু চীনা ঋণের কিস্তি দিতে হচ্ছে।