বিদ্যুত
বিদ্যুত

বিদ্যুতের বকেয়া পরিশোধে আরও ৫,০০০ কোটি টাকার বিশেষ বন্ড ছাড়া হচ্ছে

বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর বকেয়া পরিশোধে নতুন করে আরও ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বন্ড ছাড়তে যাচ্ছে সরকার। বন্ড ছাড়া হবে কয়েকটি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ বন্ড ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অর্থ বিভাগ এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানায়, বিদ্যুৎ খাতে বকেয়ার পরিমাণ বর্তমানে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এ বকেয়া মাসে মাসে বাড়ছে। এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। বিদ্যমান বরাদ্দ দিয়ে বকেয়া পরিশোধ করা কঠিন হতে পারে।

বিদ্যুতের বকেয়া পরিশোধের জটিলতা বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই শুরু হয়। চলতি পঞ্জিকা বছরের শুরু থেকে ৫ আগস্ট বিদায় নেওয়ার আগপর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বন্ড ছেড়েছে বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া পরিশোধে।

পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও নতুন করে বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বকেয়া জমে গেছে। এ জন্য বিশেষ বন্ড আগেও ছাড়া হয়েছে। তুলনামূলক ভালো বিকল্প হিসেবে নতুন করে আরও ৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া আছে। অর্থ বিভাগ এ প্রক্রিয়া শিগগির বাস্তবায়ন করবে।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বন্ড ছাড়ার ইতিবাচক দিক হচ্ছে, এর ফলে ব্যাংকের কাছে কোম্পানিগুলোর দায়টা সমন্বয় হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা করতে তাদের আর অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে না। আর ব্যাংকের সুবিধা হচ্ছে, তারা বন্ড রেখে টাকা নিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে, অন্য ব্যাংকের কাছে এগুলো বিক্রিও করতে পারবে।

এ বন্ডের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তাদের নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমার (এসএলআর) বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে পারবে। সরকারের জন্য সুবিধা হলো, নগদ টাকা আপাতত পরিশোধ করতে হবে না। অর্থাৎ দায় পরিশোধে সরকারও একটু সময় পেল।

জানা গেছে, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর তা বিক্রি করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে। এ উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয়। এলসি খোলা ও ঋণের কারণে তারা ব্যাংকের কাছে দেনাদার থাকে। এদিকে বিপিডিবি যে দামে কেন্দ্রগুলোর কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনে, তার চেয়ে অনেক কম দামে বেচে বাজারে। তবে কেনা দাম ও বাজার দামের পার্থক্য ভর্তুকি আকারে দেয় অর্থ বিভাগ।

বিপিডিবির মোট দেনা ৪৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে আইপিপিগুলো পাবে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। বাকি অর্থের মধ্যে গ্যাস বিল রয়েছে ১৭ হাজার কোটি, সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ১০ হাজার কোটি এবং ভারতের আদানি গোষ্ঠী পাবে ১০ হাজার কোটি টাকা।

বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন (বিআইপিপিএ)। সংগঠনটির সদস্য এখন ৬২।

বিআইপিপিএর সাধারণ সম্পাদক ইমরান করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেনা পরিশোধে বিশেষ বন্ড ছাড়ার বিষয়টি আমরা গণমাধ্যম সূত্রে জেনেছি। তাতে আদানি পাওয়ারের বকেয়া পরিশোধের সুযোগ নেই। সরকার অবশ্য আদানির জন্য কোনো পদ্ধতি বের করতে পারে।’

সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের দিক থেকে আদানি পাওয়ারের ঝাড়খন্ড কেন্দ্রই সবচেয়ে বড়। এ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের পাওয়ার কথা দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, পাচ্ছে তার অর্ধেক। কারণ, অর্ধেক উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে ভারতীয় কোম্পানিটি। আদানি পাওয়ার ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় বিপিডিবিকে বিদ্যুৎ দিয়ে আসছে ২০২৩ সালের মার্চ থেকে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য বাংলাদেশ দিচ্ছে ১২ টাকা করে, যে দর ভারতীয় বেসরকারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় ২৫ শতাংশের বেশি।

তবে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর জন্য বন্ড ছাড়ার পাশাপাশি সরকার এখন আদানির বকেয়া পরিশোধ নিয়েও সজাগ বলে জানা জানা গেছে। বাংলাদেশের কাছে আদানির পাওনা দাঁড়িয়েছে ৮৫ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর আদানিকে মাসে মাসে পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তিন মাসে আদানিকে অন্তত ৩৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। আদানি বকেয়ার আরও অর্থ চায়। বকেয়া পরিশোধের জন্য কোম্পানিটির একটি তাগিদের শেষ দিন আগামী বৃহস্পতিবার।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান আদানির বকেয়া পরিশোধও যথেষ্ট মাত্রায় করা হচ্ছে বলে জানান।