আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দাবি করেছে বাংলাদেশ হস্তশিল্প প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বাংলাক্রাফট)। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটেও সংগঠনটি একই দাবি করেছিল, যা বাস্তবায়ন হয়নি। বর্তমানে হস্তশিল্প রপ্তানিতে নগদ সহায়তার পরিমাণ ১০ শতাংশ।
নগদ সহায়তা চাওয়ার বিষয়ে এবার বাংলাক্রাফটের বক্তব্য হচ্ছে, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে হস্তশিল্প পণ্য উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় বিদেশি ক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে না। এ জন্য ক্রেতা হারাচ্ছেন দেশের উদ্যোক্তারা। সংগঠনটি বলেছে, বিশ্ববাজারে হস্তশিল্প পণ্যের চাহিদা বেড়েছে; কিন্তু বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, চীন ও ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পড়েছেন। এর কারণ, গবেষণা ও উন্নয়নসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কিছু আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাক্রাফট। এতে জাতীয় বাজেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন কয়েকটি দাবিও করেছে সংগঠনটি। আগের কয়েকটি বাজেটেও এসব প্রস্তাব দিয়েছিল সংগঠনটি।
বাংলাক্রাফট দীর্ঘদিন ধরে একটি কারুপল্লি স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে। আগামী বাজেটে বাস্তবায়নের জন্য তারা আবারও দাবিটা তুলেছে। সংগঠনটি বলছে, দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের এক ছাদের নিচে হস্তশিল্প পণ্য বাছাইয়ের সুযোগ দিতে কারুপল্লি স্থাপন সময়ের দাবি। ভারত, চীন, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে সরকারের সহায়তায় কারুপল্লি গড়ে উঠেছে। সেখান থেকে বিদেশি ক্রেতারা লাখ লাখ ডলারের হস্তশিল্প পণ্যের জন্য ক্রয়াদেশ দিয়ে থাকে।
এ ছাড়া হস্তশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, যেমন বাঁশ, বেত, হোগলা, তালপাতা ইত্যাদির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে বাংলাক্রাফট। সংগঠনটির প্রস্তাব, সরকারি খাসজমি ও অনাবাদি জমিতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এসব পণ্যের চাষ করা যেতে পারে। তাহলে সহজলভ্য হবে রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল। বিদেশে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকাও সম্ভব হবে।
বাংলাক্রাফট আধুনিক নকশা উদ্ভাবনের মাধ্যমে হস্তশিল্পের বৈশ্বিক বাজারে টিকে থাকতে ও রপ্তানি বাড়াতে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে। তারা বলছে, রপ্তানিসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির অষ্টম সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাক্রাফটকে কাকরাইলে সরকারি খাসজমি বরাদ্দ দেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তা দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়ন করা হয়নি। এর পরিবর্তে পূর্বাচলে সরকারি অধিগ্রহণ করা জমি থেকে বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন। আগের অর্থবছরগুলোতেও সংগঠনটি এই প্রস্তাব করেছিল।
বাংলাক্রাফট বলেছে, গত বছর হস্তশিল্পের বৈশ্বিক বাজারের আকার ছিল আনুমানিক ৭৫ হাজার ২০০ কোটি ডলারের। আগামী ২০২৩-২৮ সালের মধ্যে এই বৈশ্বিক বাজারের এই আকার বেড়ে দাঁড়াবে ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে দেশ থেকে ৩৯ হাজার মার্কিন ডলারের হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। পরে তা অবশ্য তেমন বাড়েনি। যেমন, ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে ৩৪ লাখ ৪৯ হাজার ডলার এবং ২০১০-১১ অর্থবছরে ৪৪ লাখ ৭০ হাজার ডলারের হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানি হয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, গত এক দশকে হস্তশিল্প পণ্যের রপ্তানি কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি ৩ কোটি ৩৯ লাখ ডলারে ওঠে, যা গত বছর (২০২১–২২) বেড়ে ৪ কোটি ২৮ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৪৫৪ কোটি টাকার মতো।
অবশ্য বাংলাক্রাফট দাবি করেছে, বাংলাদেশের হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ১০০ কোটি ডলারের ওপরে হবে। কিন্তু এইচএস কোড জটিলতার কারণে হস্তশিল্পের প্রকৃত পরিমাণ জানা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে ৫০টির বেশি দেশে হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।