ঘাটতি মেটাতে উড়োজাহাজে করে পেঁয়াজ আমদানি করতে গিয়ে কেজি প্রতি ১৫০ টাকার মতো ভাড়া দিতে হয়েছে। এ তথ্য জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, মানুষের উপকারের জন্য সরকার এটা করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মন্ত্রী এ তথ্য জানান। ব্যবসায়ী ও ক্রেতার সুবিধার জন্য বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিয়ে এ সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য শামসুল আলম, বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দীন, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম এবং প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. আবদুর রউফ বক্তব্য দেন।
পেঁয়াজ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায় মুনাফা কতটা করা যাবে, তার কোনো মানদণ্ড নেই। ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত যখন পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিল, সেদিন সন্ধ্যায় ঢাকার বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। এ পেঁয়াজ তো আমদানি হয়েছে আগে। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়েছে। তাঁদের যখন ধরা হয়, তারা বলেন, এখন সুযোগ পেয়েছেন বলে লাভ করেছেন। যখন লোকসান হয়, তখন তো কেউ খোঁজ নিতে আসে না।’
বাণিজ্যমন্ত্রী মনে করেন, পেঁয়াজের দাম এমন একটা পর্যায়ে থাকা উচিত, যেখানে কৃষকের লোকসান হবে না। মানুষেরও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। এ জন্য প্রতিযোগিতা কমিশনের কাজ করার আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। এতে দামও কমছে।
আলোচনা সভায় মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন দেশে মূল্যস্ফীতির চারটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। একটি হলো, ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সালে। তিনি বলেন, ওই সময় সমস্যাসংকুল বৈশ্বিক অর্থনীতির কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল। দ্বিতীয়টি হলো ২০০৭ সালে। ওই সময় খাদ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আগাম বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারেনি। ফলে ১১-১২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়ে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন ২০১১ সালে শেয়ারবাজারে শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিকে একটি মূল্যস্ফীতির ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ‘একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, যেখানে আমি কাজ করেছি, তারা পুঁজিবাজার সম্পর্কে বেশ অজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে, সেটাকে নিয়ন্ত্রণ না করার ফলে শেয়ারবাজার রমরমা হয়ে যায়।’
ফরাসউদ্দিন আশা প্রকাশ করেন এবং প্রার্থনা করেন যে, এবার যেন মূল্যস্ফীতি ততটা বেড়ে না যায়।
শামসুল আলম এবারের পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা তথ্যের ঘাটতির জন্য হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পেঁয়াজের উৎপাদন ১৮ লাখ টনের বেশি হবে না। পেঁয়াজের আমদানিকারক ২৫০ থেকে ৩২০ জন। এত লোক মিলে সিন্ডিকেট করা যায় না।
এবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলেছে, পেঁয়াজের উৎপাদন ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন। অন্যদিকে পরিসংখ্যান ব্যুরো বলেছে, উৎপাদন ১৮ লাখ টন।