বিশ্বব্যাংকের সততা বিভাগ অপদার্থ: অর্থমন্ত্রী

'পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি'

আবুল মাল আবদুল মুহিত
আবুল মাল আবদুল মুহিত

বিশ্বব্যাংকের সততা বিভাগকে ‘অপদার্থ’ আখ্যায়িত করে সেটি বন্ধের দাবি তুললেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বিশ্বব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের অপদার্থ বিভাগ থাকার কোনো অধিকার নেই দাবি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকে সততা বিভাগ (ইন্টিগ্রিটি ইউনিট) বলে যেটি বিদ্যমান রয়েছে, সেটি অবশ্যই রাবিশ (ইটস মাস্ট বি রাবিশ)। এটা নিয়ে আমি সারা জীবন কথা বলব। এটাই আমার প্রতিজ্ঞা (দ্যাটস মাই প্রমিজ)।’
মুহিত আরও বলেন, ‘সরকারে থাকি আর না-ই থাকি, এ রকম একটি অপদার্থ ইউনিট থাকার কোনো অধিকার নেই। ইন্টিগ্রিটি ইউনিটের একটি ওয়েবসাইট আছে। আপনারা সেখানে দেখেন এটি কী কাজ করে, কীভাবে করে।’
বাংলাদেশের অর্থনীতির হালচাল তুলে ধরতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গতকাল রোববার অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। পদ্মা সেতুর দুর্নীতি বিষয়ে কথা বলার একপর্যায়ে তিনি বিশ্বব্যাংকের সততা বিভাগটি নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য করেন। তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের শুরুতে সততা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, যাঁর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো ধরনের দুর্নীতি হয়নি এমন দাবি পুনর্ব্যক্ত করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে দুর্নীতির প্রচেষ্টা হয়েছিল। সেটির বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। বিশ্বব্যাংকের কারণে দুর্নীতি প্রতিহত করার ক্ষেত্রে আমাদের সার্মথ্য বেড়েছে।’
মুহিত আরও বলেন, ‘ অনেকে প্রশ্ন করেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি না হলে বিশ্বব্যাংকের অর্থ কেন নেওয়া হলো না? বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে আমরা সরে এসেছি, কারণ তাদের প্রক্রিয়াগত দীর্ঘসূত্রতা আছে। তাদের টাকা নিতে হলে আমাদের আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে। কারণ কানাডার আদালতে এ-সংক্রান্ত মামলা চলছে। আমার ধারণা, সেটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে আরও দুই বছর সময় লাগবে। তাহলে কি আমরা বিশ্বব্যাংকের টাকার জন্য আরও দুই বছর বসে থাকব?’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জিহাদি স্পিরিট বড় বেশি ধ্বংসাত্মক। এটি দেশের জন্য অতিমাত্রায় ক্ষতিকর। এর ফলে উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। দুর্নীতি ধরতে হলে অত্যন্ত সাবধানে এগোতে হবে। সেখানে জিহাদি হয়ে গেলে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে বেকসুর খালাস হয়ে যাবে। কারণ জিহাদি স্পিরিটের কারণে দুর্নীতিপরায়ণ অপদার্থ লোক সাবধান হয় এবং অন্য উপায় খোঁজার সুযোগ পায়। এ জন্য বিশ্বব্যাংকের নিজের মধ্যে সংস্কার প্রয়োজন।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির দুর্গন্ধের খবর দেবে। খবর দিয়ে সরকার কী ব্যবস্থা নেয়, তার জন্য অপেক্ষা করবে। কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় তারা যেটি করল, সেটির কোনো প্রয়োজন ছিল না, কোনো অধিকার ছিল না।’
এ সময় মন্ত্রী আগামী ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শুরুতে অর্থমন্ত্রী সংবাদমাধ্যম ও অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের ওপর কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবাদপত্রগুলোতে শুধু অর্থনৈতিক সংকটগুলোর কথা বলা হয়। বর্তমানে অর্থনীতির যে শক্তি, সেটির কথা কেউ বলেন না। তাই সরকারের পক্ষ থেকে তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন উপস্থাপন প্রয়োজন। সংবাদপত্রগুলোতে যাঁরা অর্থনীতি বিষয়ে প্রতিবেদন (রিপোর্ট) দেন, তখন তাঁরা বিশ্ব পরিস্থিতিটা একবারও দেখেন না। এ কারণে ওই প্রতিবেদন “বোগাস” প্রতিবেদনে পরিণত হয়।” তবে এ কথা বলার পরপর অর্থমন্ত্রী ‘বোগাস’ শব্দটি ব্যবহারের জন্য দুঃখ প্রকাশও করেন।