তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সফলতা এসেছে। ১৬ মে পর্যন্ত যে ৬৭ শতাংশ পোশাকশ্রমিক মজুরি পেয়েছেন, তার মধ্যে ৮২ শতাংশ ডিজিটাল পদ্ধতিতে পেয়েছেন। গত এপ্রিল মাসে যা ছিল মাত্র ২৮ শতাংশ।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং(সানেম) ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মাইক্রোফাইন্যান্স অপরচুনিটিসের (এমএফও) এক যৌথ সমীক্ষায় এই তথ্য পাওয়া গেছে।
২৮ থেকে ৮২ শতাংশ—এক মাসের মধ্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মজুরি পাওয়ার ক্ষেত্রে এত বড় উল্লম্ফন উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের কয়েক বছর ধরে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মজুরি দেওয়া হচ্ছে। করোনার পরিপ্রেক্ষিতে বাকি শ্রমিকদেরও ডিজিটাল পদ্ধতিতে মজুরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত ডিজিটাল পেমেন্টের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, নারীরা যেখানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মজুরি পেয়েছেন ৮২ শতাংশ, পুরুষেরা সেখানে পেয়েছেন ৮৪ শতাংশ। অন্যদিকে টাকা তোলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ৯৩ শতাংশ পুরুষ যেখানে তাৎক্ষণিকভাবে মজুরির টাকা তুলেছেন, নারীদের মধ্যে তার হার ৮৪ শতাংশ।
এই প্রসঙ্গে বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর বলেন, ' তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে মজুরি দেওয়ার জন্য গত কয়েক মাসে বিপুল হিসাব খোলা হয়েছে এবং কয়েক সপ্তাহে বিপুলসংখ্যক তৈরি পোশাক কারখানা ডিজিটাল পদ্ধতিতে মজুরি দিয়েছে। এদের বড় একটি অংশ বিকাশের মাধ্যমে মজুরি দিয়েছে। '
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পোশাকশ্রমিকসহ সব খাতের শ্রমিকদের মজুরি ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেওয়া উচিত। এতে ঝামেলা কমবে। পাশাপাশি এই শ্রমিকরোও ব্যাংকিংয়ের আওতায় চলে আসবেন। অন্যদিকে করোনার মতো ছোঁয়াচে মহামারির সময় ডিজিটাল পদ্ধতিতে মজুরি দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে অপ্রয়োজনীয় ভিড় এড়ানো যাবে।
অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে মজুরি প্রদান বা লেনদেনের কারণে তৃণমূলের মানুষের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে। সহজে টাকা লেনদেন করার যে সুযোগ মোবাইল ব্যাংকিং দিচ্ছে, তার প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। অনেক জায়গায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কারণে নতুন নতুন ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরিতে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
অন্যদিকে এপ্রিলের শেষ দিকে শ্রমিকদের যেভাবে মজুরি নেওয়ার জন্য শত শত মাইল হেঁটে কর্মস্থলে আসতে হলো, আগে থেকেই এই ব্যবস্থা থাকলে সেই অমানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।
সমীক্ষায় জানা গেছে, এই শ্রমিকদের মধ্যে বড় একটি অংশই জীবনে প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতিতে মজুরি পেয়েছেন। নগদায়ন করতেও বিশেষ বেগ পেতে হয়নি তাঁদের।
১৫ ও ১৬ মে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারের ১ হাজার ৩৮৪ জন গার্মেন্টস শ্রমিকের ওপর মোবাইল ফোনে পরিচালিত সমীক্ষায় এই তথ্য পেয়েছে তারা। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বড় অংশই নারী।