শেয়ারবাজারের সূচক

৫ হাজারের পর নতুন গতি

  • প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর প্রধান সূচকটি গতকাল ৮৩ পয়েন্ট বেড়েছে। চট্টগ্রামের সার্বিক সূচকটি বেড়েছে ২৩৯ পয়েন্ট। লেনদেনেও চাঙাভাব।

  • বড় উত্থানের ফলে ঢাকার বাজারের প্রধান সূচকটি গতকাল দিন শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৪ পয়েন্টে।

  • এক বছরের বেশি সময় পর সূচকটি এ উচ্চতায় উঠেছে।

পাঁচ হাজার পয়েন্টের মাইলফলক অতিক্রম করার পর শেয়ারবাজারের সূচক ও লেনদেনে যেন নতুন করে গতি এসেছে। তাতে সূচকের বড় উত্থান হয়েছে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে। লেনদেনেও ছিল বেশ গতি। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল রোববার এক দিনেই ৮৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়েছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি বেড়েছে ২৩৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

বড় উত্থানের ফলে ঢাকার বাজারের প্রধান সূচকটি গতকাল দিন শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৪ পয়েন্টে। এক বছরের বেশি সময় পর সূচকটি এ উচ্চতায় উঠেছে। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ২৯ আগস্ট ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ৯৬ পয়েন্টের সর্বোচ্চ উচ্চতায় ছিল। সেখান থেকে নামতে নামতে এ সূচকটি গত মার্চে ৩ হাজার ৬০০ পয়েন্টে নেমে গিয়েছিল।

সূত্র: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ

বাজারের পতন থামাতে ১৯ মার্চ থেমে শেয়ারের দামের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়া হয়। এতে পতন থামলেও লেনদেন নেমে আসে ১০০ কোটি টাকার নিচে। সেখানে গতকাল দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৩০ টাকায়, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। চট্টগ্রামের বাজারে গতকাল লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪৮ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৬৪ শতাংশ বেশি।

পতনমুখী বাজার উত্থানের ধারায় ফিরে আসে মূলত পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নেতৃত্ব বদলের পর। ৯ বছর দায়িত্ব পালন শেষে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন বিদায় নেন বিনিয়োগকারীদের সামনে চরম আস্থাহীন এক বাজার রেখে। যেখানে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। গত মে মাসে শেয়ারবাজার বন্ধ থাকা অবস্থায় বিদায় নেয় খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন। পুনর্গঠিত কমিশনের নেতৃত্বে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। দায়িত্ব নিয়ে তিনি প্রথমে বন্ধ শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু করেন। এরপর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাজার ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে। এর মধ্যে বেশ কিছু সংস্থার পদক্ষেপ নেওয়া হয় বিএসইসির পক্ষ থেকে। তার কারণে বাজার ছেড়ে যাওয়া বিনিয়োগকারীরা আবারও বাজারমুখী হতে শুরু করেন।

এদিকে, গতকাল বাজারের বড় উত্থানের পেছনে বিএসইসির চেয়ারম্যানের দেওয়া বক্তব্যও বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। গত শনিবার এক অনলাইন আলোচনায় বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, কেউ যাতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের টাকা মেরে পালিয়ে যেতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করা হবে। কারণ, তিনি মনে করেন, পুঁজির নিরাপত্তা না পেলে কেউই তাঁর কষ্টার্জিত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবেন না। মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বিএমবিএ ও পুঁজিবাজারবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন সিএমজেএফ যৌথভাবে এ অনলাইন আলোচনার আয়োজন করে। এ ছাড়া সভায় শেয়ারবাজারের বাজে কোম্পানি ও ন্যূনতম শেয়ারধারণে ব্যর্থ উদ্যোক্তা–পরিচালকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান।

তাঁর ওই বক্তব্যের পর গতকাল সকাল থেকে বাজারের সূচক ও লেনদেনে ছিল তেজি ভাব। একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচকটি আগের দিনের চেয়ে ১০০ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ১০০ ছাড়িয়ে যায়। তবে দিন শেষে এ উত্থানে কিছু ছেদ পড়ে।

ব্যাংকে আমানতের সুদের হার অনেক কম। সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। আবার করোনার কারণে সব ধরনের ব্যবসা–বাণিজ্য কমে গেছে। এ অবস্থায় মানুষ শেয়ারবাজারমুখী হচ্ছেন।
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী

জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর ঝিমিয়ে পড়া বাজারে নতুন করে প্রাণসঞ্চার হয়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন বিনিয়োগকারী বাজারে আসছেন। বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের নতুন করে আগ্রহ তৈরির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ব্যাংকে আমানতের সুদের হার অনেক কম। সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। আবার করোনার কারণে সব ধরনের ব্যবসা–বাণিজ্য কমে গেছে। এ অবস্থায় মানুষ শেয়ারবাজারমুখী হচ্ছেন। আবার শেয়ারবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের যে সুযোগ বাজেটে দেওয়া হয়েছে, সেটিও এ উত্থানের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেন হওয়া সব ব্যাংকের শেয়ারের দাম গড়ে ৪ শতাংশ করে বেড়েছে। আর বিদ্যুৎ–জ্বালানি খাতের লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর দাম গড়ে প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ। আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর দাম গড়ে ২ দশমিক ৮ শতাংশ করে বেড়েছে।

বর্তমান বাস্তবতায় শাকিল রিজভী মনে করেন, এখন বাজারের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে বেশি মনোযোগী হতে হবে। আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বাজে কোম্পানির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকাটাও জরুরি।

বেসরকারি ইস্টার্ণ ব্যাংকের সহযোগী ব্রোকারেজ হাউস ইস্টার্ন সিকিউরিটিজের গতকালের বাজার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংক, বিদ্যুৎ–জ্বালানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির ওপর ভর করে গতকাল সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। আর লেনদেন বেড়েছে ওষুধ, ব্যাংক ও প্রকৌশল খাতের কোম্পানির ওপর ভর করে। ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেন হওয়া সব ব্যাংকের শেয়ারের দাম গড়ে ৪ শতাংশ করে বেড়েছে। আর বিদ্যুৎ–জ্বালানি খাতের লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর দাম গড়ে প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ ও আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর দাম গড়ে ২ দশমিক ৮ শতাংশ করে বেড়েছে। ঢাকার বাজারের গতকালের মোট লেনদেনের ৩০ শতাংশই ছিল ওষুধ ও ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলোর।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ ভালো মৌল ভিত্তি ও বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে এক দিনেই ডিএসইর বাজার মূলধন প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বা দেড় শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকায়।