পোশাকপল্লির জমি

৫০০-এর মধ্যে ৪৪১ একরই শেষ

>
  • পোশাকপল্লির জমি
  • ৭৬টি কোম্পানি সেখানে জমি নিয়েছে
  • প্রধানমন্ত্রী পোশাকপল্লিসহ ১৩টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বুধবার
প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের পোশাকপল্লিতে জমি নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকেরা। সেখানে পোশাকপল্লির জন্য রাখা ৫০০ একর জমির ৪৪১ একর ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। জমি ইজারা নিতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) ১০০ কোটি টাকা দিয়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

এর মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের জন্য পরিকল্পিত শিল্পনগর প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে। এর আগে মুন্সিগঞ্জের বাউসিয়ায় গার্মেন্টস শিল্পপার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ মাঝপথে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিল।

বঙ্গবন্ধু শিল্পপার্কে জমি বরাদ্দের বিষয়ে বিজিএমইএর সঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চুক্তি হয় ২০১৮ সালের ২১ মার্চ। এরপর বিজিএমইএ সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে জমি বরাদ্দ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। ইতিমধ্যে ৭০টি কোম্পানি সেখানে জমি নেওয়ার জন্য টাকা জমা দিয়েছে। আরও ৬টি কোম্পানি জমি নেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করলেও টাকা এখনো জমা দেয়নি। আগামী বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৩টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার কথা রয়েছে, যার মধ্যে একটি বিজিএমইএর পোশাকপল্লি।

বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির প্রথম আলোকে বলেন, ‘জমি বুঝিয়ে দিলেই আমরা কারখানার নির্মাণকাজ শুরু করব। সেখানে মূলত বড় ও মাঝারি উদ্যোক্তারা জমি নিয়েছে। তারা ওই জমিতে বৈচিত্র্যপূর্ণ পোশাক পণ্য উৎপাদনের চিন্তা করছে।’

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফেনী ও সীতাকুণ্ড ঘিরে গঠিত হচ্ছে। এর প্রস্তাবিত আকার ৩০ হাজার একর। এটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় শিল্প এলাকা। এতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ১ হাজার ১৫০ একর, শিকদার গ্রুপ, বসুন্ধরা ও গ্যাসমিন মিলে এসবিজি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে ৫০০ একর, বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ ৫০০ একর এবং পিএইচপি গ্রুপ পিএইচপি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক প্রতিষ্ঠার জন্য ৫০০ একর জমি নিয়েছে। অনেক দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান সেখানে কারখানা করার জন্য জমি নিয়েছে।

সব মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ৫৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৭৭ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে বেজা। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ২৫৯ কোটি মার্কিন ডলার। এতে প্রায় সাত লাখ মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করছেন উদ্যোক্তারা।

বেজা জানিয়েছে, মিরসরাইয়ে ইতিমধ্যে ২০ একর জমিতে এশিয়ান পেইন্টস, ১০ একর জমিতে আরমান হক ডেনিম, ১০ একর জমিতে মডার্ন সিনটেক্স এবং ১০ একর জমিতে জুজু জিনইউয়ান কেমিক্যাল কারখানা তৈরির কাজ শুরু করেছে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিজিএমইএর জমিতে মাটি ভরাটের কাজ শেষ হবে আগামী মাসে। এরপর রাস্তাঘাট
ও অন্যান্য অবকাঠামোর কাজ শুরু হবে। আগামী বছরের মাঝামাঝিতে কারখানা করা যাবে বলে আশা করা যায়।

বিজিএমইএর যারা জমি নিয়েছে

পোশাকপল্লিতে ইতিমধ্যে জমি নিয়েছে স্টারলিং ডেনিমস, বান্দু ডিজাইন, স্টারলিং স্টাইলস, দ্যাটস ইট স্পোর্টসওয়্যার, অ্যাপারেল গ্যালারি, আরটিস্টিক ডিজাইন, ইপিলিয়ন স্টাইল, গ্লোবাল শার্ট, মেনস ফ্যাশন, ইউনিগিয়ার লিমিটেড, এসকিউ সেলসিয়াস, মার্স স্পোর্টসওয়্যার, গ্রাফিকস টেক্সটাইল, জেনেসিস ফ্যাশনস্, কলম্বিয়া গার্মেন্টস, কলম্বিয়া অ্যাপারেলস, আরডিএম অ্যাপারেলস, ডব্লিউ অ্যাপারেলস, ব্যাবিলন গার্মেন্টস, ব্যাবিলন ক্যাজুয়ালওয়্যার, ক্লিফটন কন, ক্লিফটন অ্যাপারেলস, ফোর এইচ ফ্যাশন, চার্ম ফ্যাশন, ভ্যানকট লিমিটেড, করিম টেক্সটাইল, এসএফ ডেনিম অ্যাপারেলস, মজুমদার গার্মেন্টস, তুসুকা ট্রাউজারস, ভিজ্যুয়াল নিটওয়্যার, এনার্জিপ্যাক ফ্যাশন ও ইভা সোয়েটারস।

আরও রয়েছে অ্যালপস্ অ্যাপারেলস, আরও টেক্সটাইল মিলস, ফাউন্টেন গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং, পশ গার্মেন্টস, মেসার্স এআরএল অ্যাপারেলস, স্যামস অ্যাটায়ার লিমিটেড, ফারসিয়িং নিট কম্পোজিট, ডেনিম ফ্যাশনস, ইএইচ ফেব্রিকস, প্যাসিফিক কটন, কটনলাইন বিডি, কটন ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস, তুসুকা জিনস, উরানাস অ্যাপারেলস, আফরাহ ড্রেসেস, ওয়েল ফ্যাশন, তাফফ অ্যাপারেলস, ইমেজ গার্মেন্টস, শামসের রাজিয়া ফ্যাশন ও শামসের অ্যাপারেলস।

এ ছাড়া শানশিন কোম্পানি (বিডি) লিমিডেট, মাস্ক ট্রাউজারস, আরআর ফ্যাশন, টাওয়েল টেক্স লিমিটেড, টিবিএইচ ফ্যাশনটেক্স, আদিলা অ্যাপারেলস, এস-সিক্স ফ্যাশনস, অ্যাডভান্স ওয়ার্ল্ড, আল-ইত্তেফাক টেক্সটাইল, বিএলপি ওয়ার্ম ফ্যাশন, গার্মেন্টস হোম (প্রা.) লিমিটেড, প্রোগ্রেসিভ অ্যাপারেলস ইন্ডাস্ট্রিজ, মিলো ফ্যাশনস, কে গার্মেন্টস, চৌধুরী ফ্যাশন ওয়্যার, মদিনা গার্মেন্টস ও আরএনএসসিও সোয়েটারস লিমিটেড বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে জমি নিয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের সুবিধা

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর হবে পূর্ণাঙ্গ শিল্পশহর। এতে কারখানার পাশাপাশি আবাসন, বিনোদন ও অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা থাকবে। মিরসরাইয়ে এখন ভূমি উন্নয়নের পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। এখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি দেবে সরকার। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য আলাদা একটি বন্দর থাকবে, যেটি দিয়ে সহজেই চট্টগ্রাম ও অন্যান্য বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরণি নামে চার লেনের একটি সড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে, যেটি পরে আট লেন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে এককালীন ৫০ বছরের ভাড়া পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটার অনুন্নত জমির ইজারামূল্য ধরা হয়েছে শূন্য দশমিক ৩০ ডলার এবং উন্নত জমির মূল্য ধরা হয়েছে দশমিক ৬০ ডলার। বেজা জানিয়েছে, বিজিএমইএর ৫০০ একর জমির ৫০ বছরের ইজারামূল্য ৫০০ কোটি টাকা। তারা তিন কিস্তিতে ১০০ কোটি টাকা দিয়েছে বেজাকে।

মিরসরাইয়ে জমি বরাদ্দের জন্য ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে আবেদন নেওয়া শুরু করে বেজা।