দুই বছরের জন্য মাত্র ৪৯০ টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে দুই লাখ টাকার বিমা পলিসি করার সুবিধা পাবেন বিদেশগামী বাংলাদেশিরা। বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এ সুবিধা দিতে গত ১৪ অক্টোবর ‘প্রবাসী কর্মী বিমা নীতিমালা’ নামে একটি নীতিমালা জারি করেছে।
প্রবাসী কর্মীদের আর্থিক সক্ষমতা এবং কর্মকালীন সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে আইডিআরএ এ সেবা চালুর জন্য নীতিমালাটি জারি করে। সংস্থাটি পরীক্ষামূলকভাবে এক বছরের জন্য এ সেবা চালুর দায়িত্ব দিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থা জীবন বীমা করপোরেশনকে। তবে এক বছর পর তা বেসরকারি কোম্পানিগুলোর জন্যও উন্মুক্ত করা হতে পারে।
আইডিআরএর সদস্য গোকুল চাঁদ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘নীতিমালা জারি হয়েছে, সেবাটি এখন চালু হওয়ার অপেক্ষায়। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এবং জীবন বীমা করপোরেশন এ নিয়ে কাজ করছে।’
সাধারণত বয়সভেদে প্রিমিয়ামের হার কমবেশি হয়ে থাকলেও প্রবাসী কর্মীদের একটি গ্রুপ ধরে নিয়ে অভিন্ন প্রিমিয়াম হার আরোপের কথা বলা হয়েছে আইডিআরএর নীতিমালায়। আর পলিসি হবে দুই ধরনের—দুই লাখ ও পাঁচ লাখ টাকার। পলিসির মেয়াদ হবে দুই বছরের। তবে বিদেশে অবস্থানকালে নিজ অর্থায়নে আরও দুই বছরের জন্য পলিসি নবায়ন করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
নীতিমালাটি করা হয়েছে ১৮ থেকে ৫৮ বছর বয়সীদের জন্য। প্রথম দফায় প্রথমবার বিদেশগামী কর্মীদের এ সেবার আওতায় আনার কথা চিন্তা করা হলেও দ্বিতীয় দফার জন্য ভাবা হচ্ছে বিদেশে ইতিমধ্যে কর্মরত থাকা বাংলাদেশিদের।
দুই লাখ টাকার পলিসির ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম ৯৯০ টাকা। আর পাঁচ লাখ টাকার পলিসির ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম ২ হাজার ৪৭৫ টাকা। দুই লাখ টাকার পলিসি বাধ্যতামূলক। আর পাঁচ লাখ টাকারটি ঐচ্ছিক। বিদেশ যাওয়ার আগে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে যেসব ছাড়পত্র নিতে হয়, সেগুলোর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হলো দুই লাখ টাকার জীবনবিমা পলিসি করা।
>প্রবাসীদের জন্য সুবিধা
পলিসিটি চালুর জন্য নীতিমালা জারি করেছে আইডিআরএ
এক বছরের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জীবন বীমা করপোরেশনকে
এদিকে প্রিমিয়ামের অঙ্ক যা–ই হোক না কেন, উভয় পলিসির ক্ষেত্রেই সরকার দেবে ৫০০ টাকা। অর্থাৎ ৯৯০ টাকা প্রিমিয়ামের মধ্যে বিমাগ্রহীতাকে দিতে হবে ৪৯০ টাকা। আর অন্যটিতে বিমাগ্রহীতাকে দিতে হবে ১ হাজার ৯৭৫ টাকা।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, পলিসি কার্যকর থাকা অবস্থায় বিমা গ্রহণকারী মারা গেলে তাঁর বৈধ উত্তরাধিকারী বিমা অঙ্কের টাকা পাবেন। তবে আত্মহত্যা; এইচআইভি বা এইডসের কারণে মৃত্যু; মাদকাসক্তি, যুদ্ধ বা গুরুতর আইন লঙ্ঘনের কারণে মৃত্যুদণ্ড হলে বিমা অঙ্কের টাকা দেওয়া হবে না। বিমা মেয়াদের মধ্যে কোনো কর্মী আহত হয়ে পরবর্তী সময়ে ৯০ দিনের মধ্যে মারা গেলে তার উত্তরাধিকারীকে মূল বিমা অঙ্কের টাকা পরিশোধ করা হবে। তবে বিমাগ্রহীতা দুর্ঘটনাজনিত স্থায়ী, সম্পূর্ণ বা আংশিক অক্ষমতার জন্য কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকলে সেই পরিমাণ অর্থ বাদ দিয়ে বাকি টাকা দেওয়া হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, এ সেবা চালুর জন্য বিমাকারী প্রতিষ্ঠান একটি তহবিল গঠন করবে। আর বিমা দাবি নিষ্পত্তি হবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী।
বিদেশগামী কর্মীদের জন্য বিমা সেবাটি চালু হওয়ার পর জীবন বীমা করপোরেশন ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এ ব্যবস্থার সার্বিক পর্যালোচনা করবে। সংস্থাটি ৯ মাস পর বিমাগ্রহীতার সংখ্যা, বিমা অঙ্ক, বিমা দাবির সংখ্যা, বিমা দাবি নিষ্পত্তির সংখ্যাসহ পুরো ব্যবস্থার কার্যকারিতা তুলে ধরবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে। মন্ত্রণালয় পরে তা পর্যালোচনা করবে।
সূত্রগুলো জানায়, সেবা চালুর উদ্বোধন যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। উদ্বোধনের দিন থেকেই আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে।
বিমা কোম্পানির মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন উদ্যোগটিকে স্বাগত জানান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এক বছরের জন্য জীবন বীমা করপোরেশনকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেটি ভালো। কিন্তু এক বছর শেষ হওয়ার আগেই যোগ্যতার ভিত্তিতে সব কোম্পানিকে এই ব্যবসায়ের আওতায় আনতে হবে।