সরকার নিজে আমদানি করতে চায় ১০ লাখ টন। বেসরকারি খাতে আমদানির সুযোগ দিতে চায় ১০ লাখ টনের।
বাজারে দাম কমাতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ই ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের গুদামে মজুত বাড়াতে এই পরিমাণ চাল আমদানি করা হবে। আর বেসরকারি খাতে ১০ লাখ টনের মতো আমদানির সুযোগ দেওয়া হতে পারে। বাজার নিয়ন্ত্রণে না এলে সেটা আরও পাঁচ লাখ টন বাড়বে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বেসরকারি খাতে চাল আমদানিতে করভার ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার ক্ষেত্রে কী কী শর্ত থাকবে, তা ঠিক করতে কাজ করছে সরকার। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার গত রোববার চালের শুল্ক কমানোর এ ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি জানান, চাল আমদানি উন্মুক্ত হবে না। আমদানির জন্য ব্যবসায়ীদের মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে।
সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি খাতকে চাল আমদানির সুযোগ দিতে ১৩টি শর্তের একটি নীতিমালা তৈরি করেছে সরকার। আমদানি করতে ইচ্ছুক ব্যবসায়ীদের জন্য একটি নতুন ফরম তৈরি করা হয়েছে। এই ফরম ও আমদানির শর্তের বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। সেখানে মূলত আমদানিকারকের আর্থিক সক্ষমতার পাশাপাশি অতীত অভিজ্ঞতা আমলে নেওয়া হবে। খাদ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি শর্তগুলো তৈরি করেছে।
বেসরকারি খাতে চাল আমদানিতে করভার ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার ক্ষেত্রে কী কী শর্ত থাকবে, তা ঠিক করতে কাজ করছে সরকার।
মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, আগ্রহী আমদানিকারকদের আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানির পরিমাণ, সম্ভাব্য দামসহ বিস্তারিত তথ্য খাদ্য মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দিতে হবে। এরপর তাদের কী পরিমাণ চাল আমদানির সুযোগ দেওয়া হবে, জানানো হবে।
এ বিষয়ে খাদ্যসচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম প্রথম আলোকে বলেন, সরকার প্রাথমিকভাবে যে ১০ লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে, তা দিয়ে মূলত সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। আর বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি খাতকে আমদানির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত আমদানির সুযোগটি থাকবে।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে ভারত থেকে আমদানি করা তাদের ৫০ হাজার টন চাল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস হয়েছে। আরও ৪৫ হাজার টন পথে রয়েছে। ভারত থেকে মোট ৪ লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে আড়াই লাখ টন এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে দেড় লাখ টন চাল আনা হচ্ছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, চাল যে আমদানি করতে হবে, তা গত জুন-জুলাই মাসেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও পর্যবেক্ষকেরা বুঝতে পেরেছিলেন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তা বুঝতে এত দিন কেন লাগল। তিনি বলেন, গরিব মানুষকে ৫০ টাকা কেজি দরে মোটা চাল কিনতে হচ্ছে। এতে তারা সংকটে রয়েছে।
সরকার প্রাথমিকভাবে যে ১০ লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে, তা দিয়ে মূলত সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। আর বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি খাতকে আমদানির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, খাদ্যসচিব
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমন মৌসুমে চালের সংগ্রহের অভিযান সফল হচ্ছে না। সরকার গত ৭ নভেম্বর থেকে চাল সংগ্রহ শুরু করে। গত রোববার পর্যন্ত সংগ্রহ করেছে মাত্র ১৭ হাজার টন।
আমনে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ২ লাখ টন ধান, ৩৭ টাকা কেজি দরে ৬ লাখ টন সেদ্ধ চাল এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার টন আতপ চাল কেনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। অবশ্য চালকলের মালিকদের বেশির ভাগই আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, কেজিপ্রতি ৪১ টাকা না দিলে তাঁদের পক্ষে চাল দেওয়া সম্ভব নয়। হাতে গোনা কিছু চালকলমালিক সরকারি গুদামে চাল দিচ্ছেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সরকারি চালের মজুত দ্রুত কমছে। গতকাল মঙ্গলবার সরকারি গুদামে ৫ লাখ ৩৬ হাজার টন চাল ছিল। গত বছর একই সময়ে তা ছিল ১০ লাখ ৬৬ হাজার টন।
আমদানির ঘোষণার পর ধানের দাম কমলেও বাজারে চালের দামে প্রভাব পড়েনি। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গতকাল ঢাকায় মোটা চাল ৪৬ থেকে ৫০ টাকা, মাঝারি চাল ৫৩ থেকে ৬০ টাকা ও সরু চাল ৬০ থেকে ৬৬ টাকা কেজি বিক্রি হয়। টিসিবি বলছে, গত দুই দিনে মাঝারি ও সরু চালের দাম কিছুটা বেড়েছে।
খাদ্য নীতিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ইফপ্রি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আখতার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে দ্রুত চালের জোগান না বাড়ালে দাম আরও বেড়ে যাবে। এতে গরিব মানুষের বিপদ বাড়বে।