তাসের জুয়ার বাজার নিয়ে এখন দেশজুড়ে আলোচনা। অবৈধ এ বাজারে বছরে কয়েক শ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে বলে অভিযোগ। অথচ তাস বেচাকেনার বৈধ বাজার খুবই ছোট্ট। তা–ও আমদানিনির্ভর।
এই একটি পণ্যের দুই রূপ আছে বাজারে। যেমন তাস দিয়ে ব্রিজ খেলা হয়। এটার আবার বিশ্বকাপও হয়। চীনের উহানে শনিবার শেষ হলো ‘ব্রিজ বিশ্বকাপ’। তাতে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরাও। সবাই অপেশাদার। তাস নিয়ে এমন খেলার বিপরীতে চিত্র হলো জুয়ার আসর। ক্যাসিনো বা ক্লাবগুলোতে তাস দিয়ে জুয়া খেলার আসর বসে। সেখানে ‘পেশাদার জুয়াড়ি’রা অংশ নেন।
তাসের দুই রকম ব্যবহার হলেও সবই আসছে বৈধভাবে। তাস আমদানি খাতে সরকারও বছরে গড়ে কমবেশি পাঁচ কোটি টাকা রাজস্ব পাচ্ছে। জুয়ার মতো তাসের আমদানিরও ঠিক নেই। কখনো খুব বেশি, কখনোবা খুব কম। এই যেমন গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকার তাস। তার আগের অর্থবছরে আমদানি হয় ১৫ কোটি টাকার। আবার ২০১৬–১৭ অর্থবছরে আমদানি হয় সবচেয়ে বেশি, ৪২ কোটি টাকার। বৈদেশিক বাণিজ্যে বছরে কমবেশি চার হাজার শ্রেণির পণ্য আমদানি হয়। মূল্য বা পরিমাণের হিসাবে এই তালিকায় তাসের অবস্থান শেষ দিকে।
বাজার থেকে তাস নিয়ে মেপে দেখা যায়, প্যাকেটসহ এক সেট তাসের ওজন ৯০–৯৫ গ্রাম। আমদানির পরিমাণের সঙ্গে এই হিসাব মিলিয়ে দেখা যায়, গত অর্থবছর সাড়ে আট লাখ প্যাকেট তাস আমদানি হয়েছে। কয়েক বছরের গড় হিসাবে বছরে আমদানির পরিমাণ ৪৭ লাখ প্যাকেট তাস।
বছরে তাস বেচাকেনার বাজার কত কোটি টাকার, তার কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে আমদানির হিসাব থেকে এর একটা ধারণা পাওয়া যায়। বাজারে এখন সাধারণ মানের প্রতি প্যাকেট তাস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। গত ছয় বছরের তথ্য গড় করে দেখা যায়, বছরে তাসের বেচাকেনার বাজারের আকার দাঁড়ায় ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকা।
ক্রীড়াসামগ্রীর মধ্যে তাসের বাজারকে ছোট হিসেবেই দেখছেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রামের ক্রীড়াসামগ্রী আমদানিকারক ও বিক্রেতা রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাসের বাজার খুবই ছোট। মুদিদোকান থেকে শুরু করে অলিগলিতে তাস পাওয়া যায়। বেশির ভাগই আসে চীন থেকে। ঢাকার গুটিকয় ব্যবসায়ী তাস আমদানি করেন।
বলা হয়ে থাকে, তাস খেলার শুরু হয়েছিল চীন থেকে। বাংলাদেশে আমদানি হওয়া সিংহভাগ তাস আসছে এই দেশ থেকে। যুক্তরাষ্ট্র থেকেও আসছে তাস। এর বাইরে সিঙ্গাপুর, হংকং ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেও তাস আমদানি হয়। তাসের আমদানিকারকও হাতে গোনা। গত অর্থবছর বন্দর দিয়ে ১৪ জন ব্যবসায়ী তাস আমদানি করেন। তবে খুচরা বিক্রেতার সংখ্যা অসংখ্য। সারা দেশের মুদি ও পাড়ার দোকানে তাস পাওয়া যায়।
চীনের উহানে তাসের বিশ্বকাপ যখন শুরু, তখন বাংলাদেশে জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযানও শুরু। ক্লাবগুলোতে তাস দিয়ে জুয়া খেলা চলে, এমন অভিযোগে পুলিশ–র্যাব হানা দিয়েছে অনেক ক্যাসিনো ও ক্লাবে। তাতে জব্দ হচ্ছে তাসের প্যাকেট। জুয়ায় ব্যবহৃত তাসের ঠাঁই হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জব্দ তালিকায়। এ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ঘর বা ক্লাবে নির্মল বিনোদনের কাজে ব্যবহৃত তাস। এখন সামনের দিনগুলোতে তাসের আমদানি বা ব্যবসা বাড়বে না কমবে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন।