আরও একটি বছর শেষ হচ্ছে। বছরটিতে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে সুসংবাদ যেমন ছিল, তেমনি ছিল নেতিবাচক খবরও। ২০২১ সালের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের ২১টি আলোচিত ঘটনা নিয়ে এ আয়োজন।
১
এলডিসি থেকে উত্তরণ
গত ৫০ বছরে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমৃদ্ধির স্বীকৃতি মিলল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের সিডিপি স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশকে চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বের হয়ে যাবে বাংলাদেশ।
২
সচল প্রবৃদ্ধির চাকা
করোনার কারণে দেশে দেশে প্রবৃদ্ধি কমেছে। কোনো কোনো দেশে জিডিপি সংকুচিত হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সেই তুলনায় ভালো করেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গত ২০২০–২১ অর্থবছরে সাময়িক হিসাবে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
৩
ব্যাংকারদের চাকরির সুরক্ষা
করোনার মধ্যে চাকরি হারান অনেক ব্যাংকার। তবে চলতি বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাকরিচ্যুত করা ব্যাংকারদের কাজে ফেরাতে নির্দেশ দেন।
৪
ভল্ট কেলেঙ্কারি
ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার ভল্টে ১৯ কোটি টাকা কম পায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বছর শেষ হলেও এর প্রকৃত কারণ বের হয়নি এখনো। তদন্ত করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকও।
৫
প্রবাসী আয়
করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে বন্ধ হয়ে যায় বৈশ্বিক যোগাযোগ। ফলে বৈধ পথে প্রবাসী আয়ে বড় উল্লম্ফন হয়। এ ধারাবাহিকতা ছিল চলতি বছরের মে পর্যন্ত। এরপর অবশ্য প্রবাসী আয় কমতে শুরু করে।
৬
রিজার্ভে রেকর্ড
প্রবাসী আয় বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও নতুন নতুন রেকর্ড হয়। আগস্টে তা ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। প্রবাসী আয় কমায় ও আমদানি বাড়ায় রিজার্ভ এখন ৪৬ বিলিয়ন ডলার।
৭
ডলার তেজি
আমদানির চাপ বাড়ায় ও প্রবাসী আয় কমায় ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে এক টাকা। ব্যবসায়ীদের প্রতি ডলার কিনতে হয় ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায়। আর খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ওঠে ৯০ টাকায়।
৮
বছরজুড়ে ঋণে ছাড়
করোনার কারণে বছরজুড়ে ঋণ পরিশোধে ছাড় ছিল। পুরো কিস্তি না দিলেও খেলাপি হননি অনেকে। নতুন বছরে সেই সুযোগ না থাকলেও ব্যবসায়ীরা সুবিধা চাচ্ছেন।
৯
পর্যটনে রমরমা ব্যবসা
চলতি বছরের শেষ দিকে করোনার প্রকোপ কমে যায়। ফলে দুই বছরের ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় পর্যটন পর্যটন খাত। ডিসেম্বর মাসের ছুটির দিনগুলোতে দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট কক্সবাজারে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। সিলেট, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়িসহ অন্য পর্যটন স্পটগুলোতে বেশ ভিড় দেখা যায়।
১০
বছরজুড়ে আলোচনায় ন্যাশনাল ব্যাংক
ন্যাশনাল ব্যাংকের বিভিন্ন অনিয়ম ছিল আলোচনায়। এ জন্য ব্যাংকটির ঋণ বিতরণও বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আর সিকদার পরিবারের ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির সূত্র ধরে ব্যাংকটির এমডিকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।
১১
ই-কমার্স কাণ্ড
বছরজুড়েই ই–কমার্স খাতে অনিয়মের চিত্র উঠে আসে। একের পর এক মামলা হয়। পাওনার দাবিতে রাস্তায় হয় বিক্ষোভ–সমাবেশ। ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), ই–অরেঞ্জের চেয়ারম্যান ও এমডি, কিউকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ গ্রেপ্তার হন। তদন্ত চলমান অন্তত ২০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
১২
প্রণোদনার ঋণে নয়ছয়
করোনায় ব্যবসায়ীদের প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এতে অর্ধেক সুদ ভর্তুকি দেয় সরকার। সেই অর্থের বড় অংশ অন্য ঋণ শোধে, শেয়ারবাজারে ও জমি কেনায় ব্যবহৃত হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে ধরা পড়ে।
১৩
রপ্তানি আয়ে স্বস্তি
মহামারির মধ্যেও পণ্য রপ্তানি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরে ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ শতাংশবেশি। আবার চলতি অর্থবছরেও ভালো হয়েছে রপ্তানি।
১৪
দ্বিতীয় স্থানে নেই পোশাক
বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে নেমে গেছে। হিসাবটি ২০২০ সালের হলেও ডব্লিউটিও চলতি বছর পরিসংখ্যানটি প্রকাশ করেছে।
১৫
বিজিএমইএর নির্বাচন
ব্যবসায়িক সংগঠনে নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটের প্রথা প্রায় উঠেই গেছে। তবে বিজিএমইএতে সাত বছর পর এপ্রিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট হয়েছে।
১৬
রডের দামে রেকর্ড
বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ায় এ বছর রডের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। প্রতি টন রডের দাম ৮০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। বছর শেষে দাম সংশোধন হয়ে ৭৭-৭৮ হাজার টাকায় নেমেছে।
১৭
পণ্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতি
করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর বিশ্বব্যাপী ঊর্ধ্বমুখী চাহিদায় দেশেও পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে এবার। গড়ে পণ্যের আমদানি মূল্য বেড়েছে ৪২ শতাংশ। কোনোটির দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি।
১৮
আইপিওর লটারি বাতিল
শেয়ারবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর লটারি পদ্ধতি উঠে গেছে এ বছর। এর ফলে এখন আইপিওতে যিনিই আবেদন করছেন, তিনিই শেয়ার পাচ্ছেন।
১৯
ওটিসি বাজার অকার্যকর
শেয়ারবাজারের ওটিসি প্ল্যাটফর্মকে অকার্যকর করা হয়েছে। ওটিসি বাজারের তালিকাভুক্ত ৪১ কোম্পানিকে এসএমই প্ল্যাটফর্ম ও বিকল্প লেনদেন বোর্ডে স্থানান্তর করা হয়।
২০
শেয়ারবাজারে এসএমই বোর্ড
শেয়ারবাজারে এ বছর চালু হয়েছে স্বল্প মূলধনি কোম্পানির জন্য আলাদা এসএমই প্ল্যাটফর্ম বা এসএমই বোর্ড। জুন মাসে প্রথম এসএমই বোর্ড চালু হয় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে। আর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে চালু হয় সেপ্টেম্বরে।
২১
চাঙা বন্ড বাজার
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ২২টি কোম্পানি বন্ড ছেড়ে১২ হাজার কোটি টাকার বেশি সংগ্রহ করেছে। সর্বোচ্চ ৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে বেক্সিমকো গ্রুপ। সরকারও বন্ড ছেড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।
নতুন বছর
৪,৬০০ কোটি ডলারের রিজার্ভ।
২০% এর বেশি রপ্তানি প্রবৃদ্ধি।