প্রায় ১৮ লাখ ভরি ‘কালো’ সোনা ‘সাদা’ হয়েছে। তবে সোনার রং বদলায়নি। রং বদলেছে হিসাবে। সোনা ব্যবসায়ীরা এত দিন এই বিপুল পরিমাণ সোনা কখনোই ঘোষণা দেননি। তাঁদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয়কর রিটার্নে এই সোনা দেখাননি, আড়াল করে রেখেছিলেন। এবার যা বৈধ তালিকায় এল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ২৮ মে কালো সোনা সাদা করার সুযোগ দেয়। এ জন্য ভরিপ্রতি সোনার বার ও গয়নায় ১ হাজার টাকা কর ধার্য করা হয়। এর পাশাপাশি প্রতি ক্যারেট কাট ও পোলিশড ডায়মন্ডের জন্য ৬ হাজার টাকা ও প্রতি ভরি রুপার জন্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সময় বেঁধে দেওয়া হয় ৩০ জুন পর্যন্ত। এই সময়ে সব মিলিয়ে হীরা, সোনা, রুপা সাদা করা বাবদ এনবিআর কর পেয়েছে প্রায় ১৮৩ কোটি টাকা।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সোনা সাদা করায় প্রায় ১৮০ কোটি টাকা কর পাওয়া গেছে। সেই হিসাবে প্রায় ১৮ লাখ ভরি সোনা সাদা হয়েছে। আর হীরা ও রুপায় কর মিলেছে ৩ কোটি টাকার কিছু বেশি। সোনা আড়াল করে রাখা ব্যবসায়ীর সংখ্যাও কম নয়। প্রায় পাঁচ হাজার ব্যবসায়ী এই সুযোগে আড়ালে রাখা সোনা প্রদর্শন করেছেন। এই ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ সোনা তাঁদের ব্যবসার মূলধারায় বা মজুতে ঘোষণা দিয়েছেন। বছর শেষে তাঁদের এই সোনার বেচাকেনার হিসাব দিতে হবে। আয় হলে করও দিতে হবে।
এত দিন শুধু কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছিল সরকার। এবার নতুন করে অপ্রদর্শিত সোনাও ঘোষণায় আনার সুযোগ দেয় এনবিআর। শুধু তা–ই নয়, কালো সোনা সাদা করতে নজিরবিহীনভাবে অভিনব মেলার আয়োজন করা হয়। রাজধানীর পাঁচ তারকা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে গত মাসের ২৩ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত মেলা হয়। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীতেও সোনা মেলা হয়। সেখানেই ৭০ শতাংশ সোনা সাদা করেন সোনা ব্যবসায়ীরা।
এনবিআরের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, শুধু তিন দিনের সোনা মেলায় ১৩৩ কোটি টাকার কর আদায় হয়েছে। সোনা থেকে এসেছে ১২৫ কোটি টাকার বেশি। সেই হিসাবে ১৮ লাখের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ ভরির মতো সোনা সাদা হয়েছে মেলায়। এর মধ্যে ঢাকার ব্যবসায়ীরা ১০ লাখ ভরির বেশি সোনা সাদা করেন।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘোষণায় আসা সোনা বাজারে কী প্রভাব ফেলবে, তা এখনই বোঝা যাবে না। এখনো আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে ভরিপ্রতি সোনার দাম কম আছে। আমরা চাই, ভরিপ্রতি সোনার দাম আরও দুই-আড়াই হাজার টাকা বাড়ানো হোক। এতে ব্যবসায়ীদের আয় কিছুটা বাড়বে।’ তাঁর মতে, পর্যাপ্ত প্রচারণার অভাবে জেলা পর্যায়ের অনেক ব্যবসায়ী তাঁদের সোনা ঘোষণায় আনতে পারেননি। তাই আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত এই সুযোগের সময় বৃদ্ধির দাবি করেন তিনি।
বাংলাদেশে সোনা আমদানির সুযোগ নেই বললেই চলে। বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে সোনা আমদানি করতে হয়। ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, একাধিক ব্যবসায়ী সোনা আমদানির আবেদন করলেও কেউ অনুমোদন পাননি। বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের বিশাল সোনার বাজারে অঘোষিত সোনার পরিমাণই বেশি। নানা উপায়ে এই সোনা দেশের বাজারে আসে। কিন্তু অঘোষিত বিপুল পরিমাণ সোনার লেনদেন হলেও তা কর নথিতে দেখাতে পারতেন না অনেক ব্যবসায়ী। এর ফলে সেই আয়ের ওপর করও আরোপ করা সম্ভব হচ্ছিল না। এমন প্রেক্ষাপটে এনবিআর নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে অঘোষিত সোনা প্রদর্শনের সুযোগ দেয়।
এনবিআরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, এখন থেকে এনবিআর সোনা ব্যবসায়ীদের করের নথি কঠোরভাবে নজরদারি করবে। অঘোষিত সোনা পাওয়া গেলে নির্ধারিত করের পাশাপাশি জরিমানা আদায় করা হবে।