জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গতকাল ওই সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদের হাতে কর কার্ড, সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দিয়েছে।
সেরা করদাতাদের সম্মাননা দিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণিতে ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ ক্রেস্ট, কর কার্ড ও সনদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৭৫ ব্যক্তি, ৫৪ প্রতিষ্ঠান ও ১২টি অন্যান্য।
গতকাল বুধবার এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেরা করদাতা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও তাদের প্রতিনিধিদের হাতে এই সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সেরা করদাতা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও তাদের প্রতিনিধিদের হাতে এই সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
কর কার্ডধারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সুবিধা ও অগ্রাধিকার পাবেন। যেমন বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার; তারকা হোটেলসহ বড় আবাসিক হোটেলে বুকিং; নিজে, স্ত্রী বা স্বামীর ও নির্ভরশীল সন্তানের জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন; আকাশ-রেল-নৌপথে সরকারি যানবাহনের টিকিট এবং জাতীয়, সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ। এই কর কার্ড হবে এক বছরের।
আলোচনা
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্মাননা পাওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের মতো দেশপ্রেমিক করদাতাদের জন্য দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। গত ১৫ বছরে আয়কর ১২ গুণ বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার অবকাঠামো উন্নয়নে বেশি করে খরচ করতে পারছে।’
করদাতাদের ওপর হয়রানি বন্ধের দাবি
জানান ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, কর কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা কমাতে হবে। হয়রানি না হয়ে করবান্ধব পরিবেশ চান ব্যবসায়ীরা। কর দেওয়া সহজ করতে প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়াতে হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম বলেন, ‘কর কেন দেব, এই প্রশ্নের উত্তর যত সহজে পাবেন করদাতারা, তাঁরা ততই কর দিতে উৎসাহিত হবেন। করদাতারা এখন দেখছেন পদ্মা সেতুর মতো বড় সেতু হচ্ছে। জীবনমানের উন্নতি হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ের সেরা করদাতা ছাড়াও ঢাকা বিভাগের সিটি করপোরেশন ও জেলা পর্যায়ের সেরা করদাতা, দীর্ঘ সময় ধরে কর প্রদানকারী, নারী এবং তরুণ করদাতাদের সম্মাননা দেওয়া হয়।
যাঁরা কর কার্ড পেলেন
জ্যেষ্ঠ নাগরিক: বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক খাজা তাজমহল, ব্যবসায়ী খন্দকার বদরুল হাসান, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোস্তাফিজুর রহমান ও ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান।
গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা: নাসির উদ্দিন মৃধা, জয়নাল আবেদীন, কোহিনুর ইসলাম খান এবং এস এম আবদুল ওয়াহাব।
প্রতিবন্ধী: ঢাকার আকরাম মাহমুদ ও লুবনা নিগার, সিলেটের মামুনুর রশিদ।
নারী: ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহনাজ রহমান; আনোয়ারা হোসেন, সেলিনা মাহবুব, ফারহানা মোমেন এবং মোরশেদা নাসমিন।
তরুণ: আহমেদ ইমতিয়াজ হাসান, এস এম মঞ্জুরুল আলম, ফয়সাল হোসেন, লুৎফর রহমান, আনিকা তারান্নুম আনাম।
ব্যবসায়ী: হাকিমপুরী জর্দার মালিক কাউছ মিয়া, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, ব্যবসায়ী নাফিস সিকদার, ইস্টার্ণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত আলী চৌধুরী ও ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন।
বেতনভোগী: এ শ্রেণির সবাই ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল পরিবারের সদস্য—মোহাম্মদ ইউসুফ, রুবাইয়াৎ ফারজানা হোসেন, এম এ হায়দার হোসেন, হোসনে আরা হোসেন ও লায়লা হোসেন।
চিকিৎসক: জাহাঙ্গীর কবির, এ কে এম ফজলুল হক, প্রাণ গোপাল দত্ত, এন এ এম মোমেনুজ্জামান ও নার্গিস ফাতেমা।
সাংবাদিক: ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, চ্যানেল আইয়ের এমডি ফরিদুর রেজা, ইমপ্রেস গ্রুপের পরিচালক আবদুল মুকিত মজুমদার ও চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল মালেক।
আইনজীবী: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, কাজী মোহাম্মাদ তানজিবুল আলম, আহসানুল করিম, নিহাদ কবির ও তৌসিকা আফতাব।
প্রকৌশলী: ঢাকার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, মোখলেছুর রহমান ও রাজশাহীর জহুরুল ইসলাম।
স্থপতি: ঢাকার মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ, রফিক আজম ও এনামুল করিম নির্ঝর।
হিসাবরক্ষক (অ্যাকাউনট্যান্ট): মোহাম্মদ ফারুক, মাশুক আহমেদ ও মুশতাক আহমেদ।
নতুন করদাতা: ঢাকার শাহিন আক্তার, মীযানুল করীম, রোকশানা পারভীন, বাধন বণিক ও রিয়াদ উর রহমান; কুমিল্লার মো. সালাহ উদ্দীন; চট্টগ্রামের রাশেদা আকতার চৌধুরী।
খেলোয়াড়: ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ, তামিম ইকবাল খান ও সৌম্য সরকার।
অভিনেতা-অভিনেত্রী: সুবর্ণা মুস্তাফা, বিদ্যা সিনহা সাহা ও বাবুল আহমেদ।
গায়ক-গায়িকা: তাহসান রহমান খান, এস ডি রুবেল ও কুমার বিশ্বজিৎ।
অন্যান্য: মাহমুদুল হক, খন্দকার মনির উদ্দিন ও সাইফুল ইসলাম।
ব্যাংক: ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, এইচএসবিসি, ব্র্যাক ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক।
অ-ব্যাংকিং আর্থিক: ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এবং ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স (ডিবিএইচ)।
টেলিকমিউনিকেশন: গ্রামীণফোন।
প্রকৌশল: উত্তরা মোটরস, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি ও উত্তরা অটোমোবাইলস।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক: নেস্লে বাংলাদেশ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও প্রাণ ডেইরি।
জ্বালানি: তিতাস গ্যাস, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) ও পেট্রোম্যাক্স রিফাইনারি।
পাটশিল্প: আকিজ জুট মিলস, আইয়ান জুট মিলস ও আই আর খান জুট মিলস।
স্পিনিং ও টেক্সটাইল: কোটস বাংলাদেশ, বাদশা টেক্সটাইলস মিলস, নোমান টেরিটাওয়েল মিলস, নাহিদ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস, ইসমাইল আঞ্জুমান আরা ফেব্রিকস, প্রিমিয়ার ১৮৮৮ ও নাহিদ কটন মিলস।
ওষুধ ও রসায়ন: ইউনিলিভার, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস ও রেনাটা লি.।
প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া: মিডিয়াস্টার লিমিটেড, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ, ট্রান্সক্রাফট ও সময় মিডিয়া।
আবাসন: রেব-আরসি, রিজভি কনস্ট্রাকশন ও বে ডেভেলপমেন্টস।
তৈরি পোশাক: ইউনিভার্সেল জিনস, ইয়াংওয়ান হাইটেক স্পোর্টসওয়্যার, জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস, রিফাত গার্মেন্টস, স্কয়ার ফ্যাশন, জিএমএস কম্পোজিট নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ এবং হা-মীম ডেনিম।
চামড়াশিল্প: বাটা শু, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার ও লালমাই ফুটওয়্যার।
অন্যান্য শ্রেণিতে: ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি, আমেরিকান লাইফ ইনস্যুরেন্স, সাধারণ বীমা করপোরেশন, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি), এস এন করপোরেশন, মেসার্স মো. জামিল ইকবাল, মেসার্স এ এস বি এস, মেসার্স ছালেহ আহম্মদ, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), সেতু কর্তৃপক্ষ, আশা, সেনাকল্যাণ সংস্থা হেড অফিস, ব্যুরো বাংলাদেশ, রফিক কনস্ট্রাকশন, আরএকে পাওয়ার প্রাইভেট, সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট ইনোভেশন অ্যান্ড প্র্যাকটিস।