দেশে সিগারেট, বিড়ি ও অন্যান্য তামাকজাতীয় পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন এবং তামাকপাতা কেনাবেচা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করার জন্য যে অনুরোধ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, তা রাখতে পারছে না শিল্প মন্ত্রণালয়। ফলে সিগারেট-বিড়ি উৎপাদন ও বিপণন আগের মতোই চলবে।
অনুরোধ না রাখার পেছনে কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় মনে করে, অর্থনৈতিক কারণে ও কর্মসংস্থানের বিষয়টি চিন্তা করে হুট করে তামাকের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ করা সম্ভব নয়। আবার সাময়িক নিষিদ্ধ করলেও ধূমপান বন্ধ হবে না। বরং কালোবাজারি হবে, সরকার রাজস্ব হারাবে। সামগ্রিক বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ শিল্প চালু রাখা যুক্তিসংগত হবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় মনে করে।
তবে শিল্প মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ২০৪১ সালের মধ্যে ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীতিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ও পূর্ণাঙ্গভাবে সমর্থন করে। এ লক্ষ্যে তারা কাজ করছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল থেকে গত সোমবার শিল্প মন্ত্রণালয়কে তামাক পণ্যের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়। এ খবর গণমাধ্যমে আসে গতকাল মঙ্গলবার। আজ বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে অবস্থান তুলে ধরা হয়। মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তিটি দিয়েছে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পরিবেশিত সংবাদের ব্যাখ্যা হিসেবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাককে কোভিড-১৯ সংক্রমণে সহায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার কথা বলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের কোভিড-১৯ সংক্রমণে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সাধারণ ছুটি শুরুর পর গত ৪ এপ্রিল ইউনাইটেড ঢাকা টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড সিগারেট উৎপাদন, তামাক ক্রয় এবং উৎপাদিত সিগারেট বিতরণ ও বিক্রির অনুমতি চেয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মোখলেছুর রহমান আকন্দকে চিঠি দেয়। তারা উল্লেখ করে যে ১৯৫৬ সালের জরুরি পণ্য আইন অনুযায়ী সিগারেট একটি জরুরি পণ্য। এর পরদিন আবেদন অনুযায়ী তাদের সব ধরনের সহায়তা করতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে চিঠি পাঠায় শিল্প মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে শিল্প মন্ত্রণালয় বলেছে, তামাক বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। এ শিল্পের সঙ্গে দেশের হাজার হাজার প্রান্তিক চাষি ও শ্রমিকের কর্মসংস্থানের বিষয়টি জড়িত। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও শিল্পোন্নত দেশসহ গোটা বিশ্বে এখন পর্যন্ত তামাক শিল্প চালু রয়েছে। বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এককভাবে এ শিল্পের অবদান সবচেয়ে বেশি। জাতীয় রাজস্ব আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ এ শিল্প খাত থেকে আসে।
শিল্প মন্ত্রণালয় মনে করে, তামাক শিল্প হুট করে বন্ধ করে দেওয়া হলে একদিকে দেশ বিরাট অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগও বন্ধ হয়ে যাবে। তামাক পাতা না কিনলে প্রান্তিক চাষিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি নেতিবাচক ধারণা দেবে। ফলে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ধূমপান কিংবা তামাক জাতীয় পণ্যের ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও এর সেবনকারীরা তা জেনেশুনেই করছেন বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে। বলা হয়, এ শিল্প সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিলেও তাঁরা এটি সেবন করবেন। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ‘মোটিভেশন’ ছাড়া শুধু সাময়িক উৎপাদন বন্ধ করে করোনাকালে ধূমপান প্রতিরোধ করা যাবে না। উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে কালোবাজারিরা উৎসাহিত হবে।
শিল্প মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল ধূমপায়ী ও তামাক জাতীয় পণ্যসেবীদের মধ্যে এটি পরিহারের জন্য প্রচার জোরদার করতে পারে।
করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই বৈশ্বিক অর্থনীতির মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যথেষ্ট চাপে হয়েছে বলে উল্লেখ করে শিল্প মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, আগামী দিনে অনিবার্যভাবে এই চাপ বাড়বে। এই অবস্থায় বিদ্যমান কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং শিল্প উৎপাদন বন্ধ করলে তা হবে মারাত্মক ক্ষতি।
সবশেষে শিল্প মন্ত্রণালয় বলেছে, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল প্রয়োজনীয় ‘মোটিভেশনাল’ কার্যক্রম গ্রহণ করবে বলে তারা আশা প্রকাশ করে।