পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন ছাড়াই কমোডিটি এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম শুরু করেছে দেশের একটি শিল্প গ্রুপ। এ জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনও প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ জুট অ্যান্ড কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নামে পণ্য লেনদেনের এই আয়োজনের আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই কমোডিটি এক্সচেঞ্জটি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত দেশবন্ধু গ্রুপ নামে একটি শিল্প গ্রুপ। রাজধানীর দিলকুশায় বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) ভবনে এর কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে ওয়েবসাইট। এই এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার কারিগরি সহযোগিতার জন্য দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান প্রাইড গ্রুপের সঙ্গে চুক্তিও করেছে বলে দেশবন্ধু গ্রুপের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। তাঁরা বলছেন, সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিএসইসি বলছে, তাদের অনুমোদন ছাড়া এই ধরনের এক্সচেঞ্জ পরিচালনার আইনগত বৈধতা কারও নেই।
এদিকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনসংক্রান্ত নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ২৯ জুলাই এক সভায় দেশবন্ধু গ্রুপের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় পরীক্ষামূলকভাবে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য দেশবন্ধু গ্রুপকে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পাঁচটি ক্রয়কেন্দ্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।
এই প্রাথমিক অনুমোদনকেই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার বৈধতা হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এই ধরনের ঘোষণা ও পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে বিএসইসি বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের যে অনুমোদনের চিঠি আমরা হাতে পেয়েছি, তা কোনোভাবে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। ওই চিঠিতে শুধু পাট ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য সরকারি কয়েকটি কেন্দ্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই ক্রয়-বিক্রয় আর কমোডিটি এক্সচেঞ্জ এক বিষয় নয়। মন্ত্রণালয়ের ওই অনুমতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটি নিজেরাই নিজ উদ্যোগে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু বিএসইসির অনুমতি ছাড়া এটি করা যায় না। তাই এই বিষয়ে কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
যোগাযোগ করা হলে দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু অনলাইনে পাট কেনাবেচা করার জন্য পরীক্ষামূলকভবে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর কোনো কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। আর বিএসইসি যদি তার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে করে, তাহলে মন্ত্রণালয়সহ আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে।’
এদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এ বলা হয়েছে, এই অর্ডিন্যান্সের আওতায় নিবন্ধন ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের সিকিউরিটিজ লেনদেনে স্টক এক্সচেঞ্জ-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা, ব্যবহার করতে পারবে না। একই সঙ্গে অর্ডিন্যান্সে ভবিষ্যতে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, ‘কৃষিপণ্য, গবাদিপশু, মাছ, বনজ সম্পদ, খনিজ ও জ্বালানি পণ্যসহ উৎপাদিত যেকোনো পণ্য কমোডিটি এক্সচেঞ্জের আওতায় কেনাবেচা করা যাবে। এসব পণ্য কেনাবেচা বা লেনদেনের উদ্দেশে যে এক্সচেঞ্জ বা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, সেটিই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নামে পরিচিত হবে।’
এ ছাড়া ২০০৮ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিএসইসিতে পরিপূর্ণ কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার আবেদনও করেছেন ওয়ালিউল মারুফ মতিন। এ জন্য তিনি কমোডিটি অ্যান্ড ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ (সিডিএক্স) নামে আলাদা একটি কোম্পানিও প্রতিষ্ঠা করেছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য একটি সমীক্ষাও সম্পন্ন করেছে।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কী: কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে বিভিন্ন পণ্য কেনাবেচা হয়ে থাকে। সেই কেনাবেচাটা হয় কাগুজে বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে। মূল পণ্যটি কোনো গুদামে বা মাঠে থাকে। সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর এটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি বা হস্তান্তর হয়।
ধরা যাক, কমোডিটি এক্সচেঞ্জে আলু কেনাবেচা হলো। সরাসরি কৃষক বা হিমাগার মালিক, যার মালিকানায় পণ্যটি রয়েছে তিনি এই আলু বিক্রি করতে পারবেন। আর কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে যে কেউ এই আলু কিনতে পারবেন। আইনের মাধ্যমে এই আলু কেনাবেচার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য নির্ধারিত একটি সময় বেঁধে দেওয়া হবে। ওই সময় ক্রয় আদেশটি যার হাতে থাকবে, তাঁকে বিক্রীত ওই আলু বুঝিয়ে দেওয়া হবে।