>
- ২০১১-১২ সালে সোনালী ব্যাংকের সময় ছিল খারাপ সময়
- জনতা ব্যাংক ছিল ভালো অবস্থানে
- ২০১৮ সালে পরিস্থিতি উল্টো
সময়টা ২০১১ ও ১২ সাল। হল–মার্ক কেলেঙ্কারির কারণে সোনালী ব্যাংক নিয়ে তখন তুমুল আলোচনা। এ ঘটনার কারণে ২০১২ সালে সোনালী ব্যাংক ২ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা নিট লোকসান করে। ঠিক তার পরের বছরে জনতা ব্যাংক ৯৫৫ কোটি টাকা নিট মুনাফা করে। ঈর্ষণীয় এ সাফল্য সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। অনেকেই জনতাকে ‘মডেল ব্যাংক’ হিসেবে অভিহিত করে।
তবে পরিস্থিতি এখন পুরো উল্টো। যেই গ্রাহকদের কারণে ২০১৩ সালে জনতার ঈর্ষণীয় মুনাফা, তারাই এখন ব্যাংকটির গলার কাঁটা। ২০১৮ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে ব্যাংকটির নিট লোকসান হয়েছে ৩ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। আর জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এখন ব্যাংক খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ, ১৭ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বড় ধরনের ‘নীতিগত ছাড়’ না দিলে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয় হবে। জনতা যখন ডুবছে, সোনালীর তখন সুদিন। সোনালী ব্যাংক ২০১৮ সালে ২ হাজার ৫৮ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করে, বছর শেষে প্রকৃত মুনাফাও থাকবে ৫০০ কোটি টাকার ঘরে।
এমন পরিস্থিতি শুনে সাবেক একজন জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার পর প্রথম দিকে গ্রাহকেরা নিয়মিত কিস্তি শোধ করেন। এতে ব্যাংকের সুদ আয়ও বাড়ে। যাতে ব্যাংকটির মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ঘটে। পরবর্তীকালে তারা কিস্তি দেওয়া বন্ধ করে দেয়, এতে আটকে যায় ব্যাংকের পুরো টাকা। এর ফলে অন্য আয় থেকে ব্যাংককে এ ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হয়। তাতে পুরো ব্যাংকটিই বিপদে পড়ে যায়।
জনতা ব্যাংক সূত্র জানায়, গত দুই বছরে জনতা ব্যাংকের আমানত যেভাবে বেড়েছিল, ঋণ ও অগ্রিম বেড়েছে তার চেয়ে বেশি গতিতে। ২০১৬ সালে ব্যাংকটির আমানত ছিল ৬৪ হাজার ১৮২ কোটি, ২০১৭ সালে যা বেড়ে হয় ৬৪ হাজার ৯৪৪ কোটি ও ২০১৮ সাল শেষে আমানত বেড়ে হয় ৬৭ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। আর ২০১৬ সালে ব্যাংকটির ঋণ ছিল ৪০ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে তা বেড়ে হয় ৪৫ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩ হাজার ৩৭০ কোটি টাকায়।
ব্যাংকটির ঋণ যেভাবে বেড়েছে, খেলাপি ঋণও সেভাবে বেড়েছে। ২০১৬ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে তা বেড়ে হয় ৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর গত বছর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের সব রেকর্ড ভেঙে হয় ১৭ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা।
ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ক্রিসেন্ট গ্রুপের ৩ হাজার ৬০০ কোটি এবং অ্যাননটেক্স গ্রুপের ৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েই মূলত বিপদে পড়েছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে ক্রিসেন্টের পুরোটাই এবং অ্যাননটেক্সের ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। এর মধ্যে অ্যাননটেক্সের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ নিয়মিত করার প্রক্রিয়া চলছে। আর টাকা পাচারের মামলায় ক্রিসেন্ট গ্রুপের কর্ণধার এম এ কাদের এখন কারাগারে।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা খেলাপি ঋণ আদায়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জানুয়ারিতে ১২০০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। মার্চের মধ্যে খেলাপি ঋণ ১২ হাজার কোটিতে নেমে আসবে। নিট মুনাফা নির্ধারণ হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনের পর।’