সোনার বাড়তি দামে কমে গেছে ক্রেতা

দাম বেড়ে যাওয়ার পরে নতুন সোনার বিক্রি ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমে গেছে বলে জানান সোনা ব্যবসায়ীরা।

সোনা

দেশের ইতিহাসে সোনার দাম সম্প্রতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠার পর গতকাল শুক্রবার থেকে আবার কিছুটা কমেছে। ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা বিক্রি হচ্ছে ৭৯ হাজার ৫৪৮ টাকায়। তবে সামগ্রিকভাবে সোনার দাম এখন অনেক বেশি। উচ্চ মূল্যের কারণে সোনার অলংকারের ক্রেতা কমে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেন, নতুন করে সোনার অলংকার কেনার বদলে বাড়তি দামের সুযোগ নিতে অনেকেই এখন ব্যবহৃত বা পুরোনো স্বর্ণালংকার বিক্রি করতে দোকানে আসছেন। সোনার মূল্যবৃদ্ধির পর গত কয়েক দিন ঢাকা ও চট্টগ্রামের বেশ কিছু সোনার দোকান ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যম ডলারের বিনিময় হার নিয়ে গত কিছুদিন ধরে অস্থিরতা বিরাজ করছে। টানা কয়েকদিন ডলারের দাম বেড়েছে। এই অবস্থায় বিশ্ববাজারের পাশাপাশি দেশের বুলিয়ন মার্কেটেও সোনার দাম বেড়ে যায়। তাই দাম সমন্বয়ের জন্য গত রোববার সোনার দাম বাড়ায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। তবে গতকাল শুক্রবার থেকে সোনার দাম কিছুটা কমায় বাজুস। বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজার ও স্থানীয় বুলিয়ন মার্কেটে সোনার দাম কমেছে। কার্ব মার্কেটে মার্কিন ডলার ও অন্যান্য মুদ্রার দাম নিম্নমুখী। তাই দেশের বাজারে সোনার দাম সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে বাজার অস্থিতিশীল।

দাম কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় শুক্রবার থেকে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার অলংকার কিনতে লাগছে ৭৯ হাজার ৫৪৮ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেট ৭৫ হাজার ৯৩৩ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৬৫ হাজার ৮৫ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির সোনার অলংকারের ভরি বিক্রি হচ্ছে ৫৪ হাজার ২৩৮ টাকায়।

সোনা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক মাসে দেশে অনেকবারই সোনার দাম বেড়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এর প্রভাব পড়েছে সোনার বাজারে। সর্বশেষ দফায় গত ২২ মে মূল্যবৃদ্ধির পরে সোনার অলংকার বিক্রি ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের সোনা ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর আমিন জুয়েলার্সের নিউমার্কেট শাখার বিক্রয়কর্মী স্বপন মণ্ডল জানান, সাধারণ সময়ে তাঁদের দোকানে প্রতিদিন অন্তত ১২ থেকে ১৫ জন গ্রাহক গয়না কিনতে আসতেন। মূল্যবৃদ্ধির পরদিন গত সোমবার সেখানে মাত্র আটজন গ্রাহক এসেছেন। গত বুধবারও বিক্রির অবস্থা প্রায় একই রকম ছিল। তিনি বলেন, করোনার কারণে এমনিতেই বিক্রি ২০ শতাংশের মতো কমেছে। সেখানে সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধিতে আরও প্রায় ১০–১৫ শতাংশ বিক্রি কমে গিয়েছিল।

নিউমার্কেট এলাকার রিজভী জুয়েলার্সের ব্যবস্থাপক সুমন দাসও প্রায় একই কথা জানান। তিনি বলেন, ‘দাম এখন গ্রাহকদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। অধিকাংশ ক্রেতা এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। কেউ কেউ অবশ্য আসছেন, তবে দাম শুনেই চলে যান। বাড়তি দাম দিয়ে সোনা কেনার মানসিকতা তৈরি হতে ক্রেতাদের আরও কিছু সময় লাগবে। সে পর্যন্ত আমাদের ব্যবসা হয়তো ভালো যাবে না।’

সুমন দাস আরও জানান, তাঁদের বিক্রয়কেন্দ্রে এখন ব্রাইডাল সেটের মতো বড় গয়না বিক্রি একদমই কম হচ্ছে। সে তুলনায় আংটি, দুল ও চেইন—এসব ছোট অলংকার কিছু বিক্রি হচ্ছে।

পুরোনো সোনা বিক্রি বেড়েছে

সোনা ব্যবসায়ীরা জানান, ক্রেতারা এখন পুরোনো সোনা বিক্রির জন্য দোকানগুলোতে বেশি আসছেন। সাধারণত পুরোনো অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে বর্তমান ওজন থেকে ২০ শতাংশ বাদ দিয়ে মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। কম দামে কেনা পুরোনো সোনা বিক্রি করে বাড়তি লাভের আশায় দোকানগুলোতে সাধারণ গ্রাহকদের আনাগোনা বেড়েছে।

ঢাকা নিউমার্কেটের সানন্দা ডায়মন্ডসের বিক্রয়কর্মী মনজ কুমার ভৌমিক জানান, তাঁদের দোকানে এখন পুরোনো সোনা বিক্রি ও এর দরদামের খোঁজ নিতেই বেশি লোক আসছেন।

বাজুসের সহসভাপতি ও সিরাজ জুয়েলার্সের মালিক দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দাম বেশি থাকায় এমনিতে কিছুদিন ধরে দেশে সোনা বিক্রি কমেছে। আমাদের কয়েকটি বিক্রয়কেন্দ্রে এমনও দিন যায় কোনো ক্রেতার দেখা মেলে না। তবে এখন পর্যন্ত যা বোঝা যাচ্ছে, তাতে মূল্যবৃদ্ধির কারণে নতুন সোনা বিক্রি কমছে। আর কিছুটা বেড়েছে ব্যবহৃত পুরোনো সোনা বিক্রি। যেহেতু ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে, তাই অনেকে ব্যবহৃত সোনা বিক্রি করছেন।

চট্টগ্রাম নিউমার্কেটের নুর জুয়েলার্সের কর্ণধার নুরুল আবছার বলেন, বাড়তি দাম কার্যকর হওয়ার পর বেচাকেনা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ক্রেতারা সিদ্ধান্ত নিতে সময় নিচ্ছেন। ডলার ও দিরহামের বিনিময় মূল্য বাড়ায় দাম সমন্বয় ছাড়া উপায়ও ছিল না।

তবে শুক্রবার দাম কিছুটা কমায় সোনা বিক্রি আবার বাড়বে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা। তবে তঁারা বলছেন, বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে; তাই অনিশ্চয়তা থাকবেই।