সেরা আর্থিক প্রতিবেদনের জন্য আইসিএবি পুরস্কার পেল ২২ প্রতিষ্ঠান

সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদদের সংগঠন ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) সেরা বার্ষিক প্রতিবেদন, সমন্বিত প্রতিবেদন ও করপোরেট সুশাসনের জন্য ব্যাংক, বিমা, উৎপাদনসহ ১৩টি খাতের ২২টি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ‘২৪তম আইসিএবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে এ সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। বিজয়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ—এ তিন শ্রেণিতে পুরস্কৃত করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থসচিব মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার, বাণিজ্যসচিব মো. সেলিম উদ্দিন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আইসিএবির সভাপতি মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দীন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘এ সময় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি সবচেয়ে বেশি জরুরি। টাকা-পয়সার হিসাব ঠিকমতো না রাখলে একসময় না একসময় ধরা পড়বেনই। অতীতে যাঁরা কোনো কিছুই তোয়াক্কা করতেন না, তাঁদের অবস্থা এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। প্রায় সব ব্যাংকের প্রতিবেদনই আমরা দেখছি, সেখানে প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না। তাই দুষ্টের দমন ও সৃষ্টের পালনের জন্য সঠিক নিরীক্ষা জরুরি।’

পুরস্কার পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরী বলেন, ‘অতীতে আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বচ্ছতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে আপস করতে দেখেছি। তবে ছাত্র–আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা একটি নতুন সূচনায় যেতে পেরেছি। আমরা পেছনের পথে যেতে চাই না।’

যেসব প্রতিষ্ঠান পুরস্কার পেল

আইসিএবি জানায়, এবার এই পুরস্কারের জন্য মোট ৭৬টি প্রতিষ্ঠান তাদের ২০২৩ সালের আর্থিক প্রতিবেদন জমা দেয়। সেগুলোর মধ্য থেকে মোট ২২টিকে সেরা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত করে জুরিবোর্ড। এর বাইরে ৮টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে সার্টিফিকেট অব মেরিট সম্মাননা।

খাতভিত্তিক পুরস্কারের মধ্যে বেসরকারি ব্যাংক খাত শ্রেণিতে যৌথভাবে স্বর্ণ পদক পেয়েছে ব্যাংক এশিয়া ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। এ ছাড়া সিটি ব্যাংক রৌপ্য এবং ব্র্যাক ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) যৌথভাবে ব্রোঞ্জ পুরস্কার বিজয়ী হয়েছে।

আর আর্থিক সেবা খাত থেকে স্বর্ণপদক পেয়েছে আইপিডিসি ফাইন্যান্স। এ ছাড়া আইডিএলসি ফাইন্যান্স ব্রোঞ্জ পুরস্কার জিতেছে।

উৎপাদন খাত থেকে আইসিবি স্বর্ণপদক পেয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ। ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ রৌপ্য ও রেকিট বেনকাইজার (বাংলাদেশ) ব্রোঞ্জ পুরস্কার পেয়েছে।

অন্যান্য খাতের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি শ্রেণিতে রৌপ্য পুরস্কার পেয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি।

ডাউভার্সিফায়েড হোল্ডিংস খাতে এসিআই লিমিটেডের প্রতিষ্ঠান অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ ব্রোঞ্জ পুরস্কার পেয়েছে।

জেনারেল ইনস্যুরেন্স তথা সাধারণ বিমা খাতে গ্রিন ডেলটা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি স্বর্ণপদক, রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্স রৌপ্য ও সিটি জেনারেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি ব্রোঞ্জ পুরস্কার লাভ করেছে।

লাইফ ইনস্যুরেন্স বা জীবনবিমা খাতে ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি ব্রোঞ্জ পুরস্কার পেয়েছে।

এনজিও বা এনপিও খাতে সাজিদা ফাউন্ডেশন রৌপ্য পুরস্কার ও শক্তি ফাউন্ডেশন ফর ডিজঅ্যাডভান্টেজড উইমেন ব্রোঞ্জ পুরস্কার পেয়েছে।

সেবা খাতে ব্রোঞ্জ পুরস্কার জিতেছে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস। কমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি খাতে রবি আজিয়াটা লিমিটেড স্বর্ণপদক, গ্রামীণফোন লিমিটেড রৌপ্য ও জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড ব্রোঞ্জ পুরস্কার পেয়েছে।

করপোরেট গভরন্যান্স শ্রেণিতে ব্যাংক এশিয়া স্বর্ণ, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক রৌপ্য ও ব্র্যাক ব্যাংক ব্রোঞ্জ পুরস্কার জিতেছে। এ ছাড়া ইনটিগ্রেটেড রিপোর্টিং শ্রেণিতে ব্যাংক এশিয়া ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক যৌথভাবে স্বর্ণপদক; আইডিএলসি ফাইন্যান্স রৌপ্য ও ব্র্যাক ব্যাংক ব্রোঞ্জ পুরস্কার লাভ করেছে।

আইসিএবি জানায়, এ বছর নির্ধারিত নম্বর না পাওয়ায় সরকারি খাতের ব্যাংক, অবকাঠামো, নির্মাণ ও কৃষি খাতে কোনো পুরস্কার দেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে ‘মেরিট’ সম্মাননা পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল), ঢাকা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, গ্রিন ডেলটা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), সিঙ্গার বাংলাদেশ, লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ, কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ও সোসাইটি ফর সোশ্যাল সার্ভিস।

অনুষ্ঠানে আইসিএবি আরও জানায়, এবার একাধিক প্রতিষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণিতে একাধিক পুরস্কার জিতেছে। এতে সার্বিকভাবে বিজয়ী হয়েছে ব্যাংক এশিয়া। বিজয়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে প্রতিটি খাতের তিনটি সেরা প্রতিবেদনকে আগামী সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টস (সাফা) প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য পাঠানো হবে।