করোনায় সব ধরনের ব্যবসায় বড় ধরনের ধস নামিয়েছিল, তা নিয়ে দ্বিমত ছিল না কারোরই।কিন্তু কোন খাতে করোনার ক্ষতি কেমন হয়েছে, তা সুনির্দিষ্ট করে জানা যাচ্ছিল না। কিন্তু শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে করোনার ক্ষয়ক্ষতির চিত্রটি আস্তে আস্তে প্রকাশ হতে শুরু করেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে প্রতি প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করতে হয়। সেই অনুযায়ী কোম্পানিগুলো এপ্রিল–জুন প্রান্তিকের তথ্য প্রকাশ শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জহোলসিম ও হাইডেলবার্গ গতকাল বুধবার তাদের এপ্রিল–জুন প্রান্তিকের পাশাপাশি অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, এপ্রিল–জুন—এ তিন মাসে কোম্পানি দুটির বিক্রি গড়ে প্রায় সাড়ে ৩৯ শতাংশ কমে গেছে। এর মধ্যে বেশি কমেছে লাফার্জহোলসিমের।
দেশে করোনায় আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত মার্চের প্রথম ভাগে। দ্বিতীয় ভাগে এসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম রোগীর মৃত্যু হয়। এরপর সংক্রমণ ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।
এ সময় দেশজুড়ে জরুরি কিছু পণ্য ও সেবা খাত–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রায় সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ফলে এপ্রিল–মে—এ দুই মাস ছিল ব্যবসা–বাণিজ্যের জন্য খুবই খারাপ সময়। যার প্রভাব পড়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের দুই কোম্পানির আয় ও মুনাফায় সেই চিত্র ফুটে উঠেছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে কোম্পানি দুটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করা হয়।
ডিএসইতে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন—এই তিন মাসে লাফার্জহোলসিমের সিমেন্ট বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪১ শতাংশ কমে গেছে। টাকার অঙ্কে বিক্রি কমেছে ১৮৬ কোটি টাকার। এতে তিন মাসে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে প্রায় ১২ কোটি টাকা বা ২৭ শতাংশ।
সিমেন্ট খাতের অপর বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গের বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গত এপ্রিল–জুনে ৩৮ শতাংশ কমে গেছে। যার পরিমাণ প্রায় ১০৯ কোটি টাকা। যার ফলে কোম্পানিটি এপ্রিল–জুন সময়ে প্রায় ১৯ কোটি টাকা লোকসান করেছে। এ কারণে কোম্পানিটির উল্লিখিত তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি ৩ টাকা ৩১ পয়সা লোকসান করেছে। আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি ৭২ পয়সা লোকসান করেছিল।
কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, করোনায় বিক্রি কমে যাওয়ার কারণে উৎপাদনও প্রায় অর্ধেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে জুন থেকে সীমিত আকারে সবকিছু খুলতে শুরু করার পর সিমেন্ট খাতের ব্যবসারও একটু একটু উন্নতি হচ্ছে। মূলত সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। করোনার কারণে এপ্রিল–মে এই দুই মাস বলতে গেলে দেশজুড়ে সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে ছিল।
লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাকেশ সুরানা গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘করোনা বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে যে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে, তার বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে কোম্পানির কার্যক্রমে। তা সত্ত্বেও অবরুদ্ধের সময়ে অনলাইনেও আমরা আমাদের বিক্রি কার্যক্রম চালিয়ে গেছি।’ করোনার কারণে বছরের প্রথমার্ধে ব্যবসা খারাপ গেলেও দ্বিতীয়ার্ধে অবস্থার উন্নতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বর্তমানে দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সাতটি। এর মধ্যে দুটি বহুজাতিক আর বাকি পাঁচটি দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানি। গতকাল পর্যন্ত বহুজাতিক দুই কোম্পানিই জানুয়ারি–জুন সময়ের অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বাকি পাঁচটি কোম্পানি এখনো তা প্রকাশ করেনি। এ কারণে করোনার সময়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রি ও মুনাফা কত কমেছে, তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতির (বিসিএমএ) সভাপতি মো. আলমগীর কবির গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে এপ্রিল–জুন এ সময়কালে দেশি–বিদেশি সব সিমেন্ট কোম্পানির বিক্রি গড়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে ধীরে ধীরে।
বিসিএমএ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে উৎপাদনে রয়েছে দেশি–বিদেশি ৩৪টি সিমেন্ট কোম্পানি।