রোজার বাজারে এবার ছোলার সরবরাহ দেড় লাখ টন। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি আছে। ফলে ছোলার মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা কম।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সয়াবিন, গমসহ নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও দাম নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তবে শঙ্কা নেই ছোলার সরবরাহে। রোজা শুরুর প্রায় এক মাস আগেই বিপুল পরিমাণ ছোলা আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
শবে বরাত শেষে পাইকারি বাজারে রোজার পণ্য ছোলা বেচাকেনা পুরোদমে শুরু হচ্ছে রোববার থেকে। চাহিদার তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় এবার ছোলা নিয়ে সংকট হবে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, গত তিন অর্থবছরে দেশে গড়ে ২ লাখ ৩০ হাজার টন করে ছোলা আমদানি করা হয়েছে। রোজার সময় সবচেয়ে বেশি ছোলা ব্যবহৃত হয়। রোজার অন্তত দুই থেকে তিন মাস আগেই ছোলা আমদানি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। আমদানির ৯৯ শতাংশই আমদানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে রোজা ছাড়া প্রতি মাসে গড়ে ১০ হাজার টন করে ছোলা ব্যবহৃত হয়। আর রোজার সময় ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টনের মতো ছোলা দরকার হয়। গত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ছোলা আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার টন। মার্চের প্রথম সপ্তাহে আমদানি হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার টন ছোলা। ৩ মাসের গড়ে ১০ হাজার টনের চাহিদা বাদ দিলে রোজার বাজারে দেড় লাখ টন ছোলার সরবরাহ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে চাহিদার তুলনায় বাজারে ছোলার সরবরাহ বেশি।
গত সপ্তাহে খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে বাজারে ছোলার দাম বেড়েছিল। সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় যুদ্ধের পর দাম কমে যায়। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ছোলার দাম কমেছে দুই থেকে তিন টাকা। অর্থাৎ ছোলার দাম এখন পড়তির দিকে।
খাতুনগঞ্জের ডাল মিল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সঞ্জয় দেব প্রথম আলোকে বলেন, পাইকারি বাজারে যুদ্ধের আগে প্রতি কেজি সাধারণ মানের ছোলা বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকায়। এখন তা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের ছোলা ৬৫ টাকা থেকে কমে ৬১ টাকায় এবং ভালো মানের ছোলা ৬৯ টাকা থেকে কমে ৬৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া বছরে তিন লাখ টনের মতো ছোলা রপ্তানি করে। যুদ্ধের কারণে অনেক পণ্য নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলেও ছোলার বাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি। কারণ, খুব বেশি দেশ ছোলা আমদানি করে না। ন্যূনতম ১০ হাজার টনের বেশি ছোলা আমদানি করে এমন দেশের সংখ্যা ২৬।
এফএওর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ছোলা উৎপাদিত হয় ভারতে। ২০২০ সালে দেশটিতে ১ কোটি ১৪ লাখ টন ছোলা উৎপাদিত হয়। অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে দেশটি আমদানিও করে, যদিও রপ্তানি করে সামান্য।
তবে ছোলা রপ্তানিতে শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার ডালজাতীয় পণ্যের উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের সংগঠন পালস অস্ট্রেলিয়ার তথ্য, দেশটির উৎপাদিত ছোলার ৯৫ শতাংশই রপ্তানি হয়। বাংলাদেশে মোট আমদানির প্রায় ৯৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ এসেছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। ভারত ও মিয়ানমার থেকে খুব সামান্য পরিমাণে আমদানি হয়েছে।
গত বছরের তুলনায় ছোলার আমদানিমূল্য বাড়লেও চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ছোলা আমদানি হয়েছে। ফলে ছোলার দামে বিশেষ প্রভাব পড়বে না।আবুল বশর চৌধুরী, চেয়ারম্যান, বিএসএম গ্রুপ
কাস্টমসের তথ্যে দেখা যায়, সরবরাহ বাড়লেও গত বছরের তুলনায় ছোলা আমদানিতে খরচ বেড়েছে। মূলত জাহাজের ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় ছোলা আমদানিতে খরচ বেড়েছে। যেমন গত বছর ছোলা আমদানিতে গড়ে খরচ পড়েছে কেজিতে ৪৫ টাকা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ছোলা আমদানিতে কেজিতে খরচ পড়ে ৫৫ টাকা। খুচরা বাজারে দেখা যায়, সাধারণ মানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ টাকায়। মাঝারি মানের ছোলা ৭৫ টাকায় এবং সবচেয়ে ভালো মানের ছোলা প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ছোলাসহ ডালজাতীয় পণ্যের বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের তুলনায় ছোলার আমদানিমূল্য বাড়লেও চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ছোলা আমদানি হয়েছে। ফলে ছোলার দামে বিশেষ প্রভাব পড়বে না।