>দেশে বেসরকারি খাতে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সরবরাহ শুরু করে বসুন্ধরা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেড। এখন দেশের বাজারে বসুন্ধরার হিস্যাই সবচেয়ে বেশি। এলপিজির বাজার, সরবরাহ পরিস্থিতি, ব্যবসার পরিস্থিতি, বিনিয়োগ ও ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মো. জাকারিয়া জালাল।
প্রথম আলো: ২০০০ সালের দিকে বসুন্ধরাসহ চারটি কোম্পানি কাছাকাছি সময়ে এলপিজি সরবরাহের ব্যবসা শুরু করেছিল। এখন বাজারে বসুন্ধরার অবস্থান কী?
জাকারিয়া জালাল: শুরুতে যে চারটি কোম্পানি ব্যবসা শুরু করে, তাদের বাজার হিস্যা মোটামুটি একই ছিল। এরপর গত দেড় যুগে বাজার অনেক বড় হয়েছে। বসুন্ধরার ব্যবসা বহুগুণ বেড়েছে। আমরা আমাদের হিস্যা ধরে রেখেছি, অন্যরা যেটা পারেনি। ফলে এখন বাজারে বসুন্ধরা এক নম্বর কোম্পানি। এটা সম্ভব হয়েছে ধারাবাহিক বিনিয়োগের কারণে।
প্রথম আলো: আপনারা কি দেশের সব জায়গায় এলপিজি সরবরাহ করতে পারেন?
জাকারিয়া জালাল: বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় আমরা ৩০ মিনিটের মধ্যে গ্যাস পৌঁছে দিতে সক্ষম। এমনকি সেটা পাহাড়ি এলাকা অথবা হাওরাঞ্চল হলেও। আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থা দেশজুড়ে বিস্তৃত।
প্রথম আলো: আপনাদের সক্ষমতা কী রকম?
জাকারিয়া জালাল: আমাদের এলপিজি মজুত রাখার ক্ষমতা ১৫ হাজার টন। এটা বাজারের প্রায় ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশে বসুন্ধরার সক্ষমতাই সবচেয়ে বেশি। এমনকি ২০২৫ সাল নাগাদ দেশে এলপিজির যে চাহিদা দাঁড়াবে, তার ৫০ শতাংশ পূরণ করার ক্ষমতা বসুন্ধরা এখনই অর্জন করেছে। সিলিন্ডার উৎপাদন ক্ষমতায় আমরা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর একটি।
প্রথম আলো: এলপিজির বাজার কি শহরে না গ্রামে দ্রুত বড় হচ্ছে?
জাকারিয়া জালাল: অনেকে মনে করেন, যেসব এলাকায় সরকারি কোম্পানির গ্যাসের সরবরাহ নেই, সেখানে এলপিজির চাহিদা বেশি। বিষয়টা আসলে উল্টো। এলপিজির চাহিদা শহরে বেশি। ঢাকায় নতুন নতুন যত ভবন হচ্ছে, সেখানে এলপিজিতে রান্না হয়। শহরে বহুতল ভবনে কাঠ পুড়িয়ে রান্নার সুযোগ নেই। তাই পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হিসেবে এলপিজি ব্যবহারের বিকল্প নেই।
প্রথম আলো: আমরা দেখছি বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে এলপিজির বড় বাজার তৈরি হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে রান্নায় এলপিজি ব্যবহারের প্রবৃদ্ধি কি কমবে? বাড়বে কোন খাতে?
জাকারিয়া জালাল: না। এখানে বাজার ধরার অনেক সুযোগ রয়েছে। কারণ, দেশের মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ এখন রান্নায় পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, বিশেষ করে গ্যাস ব্যবহার করে। আরও ৫০ শতাংশ বাজার ধরা এখনো বাকি। নানা কারণে ৩০ শতাংশ বাজার পরিবেশবান্ধব জ্বালানির বাইরে থাকবে। সব মিলিয়ে রান্নায় এলপিজির ব্যবহার বাড়বে। এর পাশাপাশি পরিবহন খাত একটি বড় সম্ভাবনা। ইউরোপের দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশে পরিবহন খাতে এলপিজির ব্যবহার খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাংলাদেশেও সেটা বাড়ছে। এর ফলে আমরাও এলপিজি ফিলিং স্টেশন তৈরি করছি। অবশ্য পরিবহনে এলপিজি ব্যবহার বাড়াতে সরকারি নীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা কোটি টাকা দিয়ে গাড়ি কিনতে পারে, তাদের কেন ভর্তুকিমূল্যের তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হবে। অবশ্য আগামী দিনগুলোতে সিএনজি আর এলপিজির দাম প্রায় সমান হয়ে যাবে। গ্রাহক কোনটা ব্যবহার করবেন, সেটা তাঁর বিষয়।
প্রথম আলো: যেসব গাড়ি এখন সিএনজিতে চলছে, সেটাতে কি এলপিজি ব্যবহার করা যাবে?
জাকারিয়া জালাল: এলপিজি ব্যবহার করতে হলে সিএনজির মতো কনভার্ট করিয়ে নিতে হবে। আমার জানামতে, কনভার্ট করাতে ৪০–৪৫ হাজার টাকা লাগে।
প্রথম আলো: এখন নাকি বহুতল ভবনে আপনারা কেন্দ্রীয়ভাবে এলপিজি সরবরাহ করেন?
জাকারিয়া জালাল: শহরে ভবনগুলোতে কেন্দ্রীয়ভাবে এলপিজি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে প্রতিটি বাসায় আলাদা মিটার থাকে। ফলে মানুষ যতটুকু ব্যবহার করে, ততটুকুর মূল্য পরিশোধ করে। এতে সুবিধা হলো, বারবার সিলিন্ডার পাল্টাতে হয় না।
প্রথম আলো: এলপিজিতে অনেক বিনিয়োগ এসেছে। আরও আসছে। বিনিয়োগ পরিস্থিতি এখন কেমন?
জাকারিয়া জালাল: ২০২৫ সালে এলপিজির চাহিদা যতটুকু দাঁড়াবে, সেটা সরবরাহের সক্ষমতা এখনই তৈরি হয়েছে। ফলে নতুন বিনিয়োগ এলে তাদের বাজারে হিস্যা তৈরি করা কঠিন হবে। তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে প্রতিটি কোম্পানি এখন ‘লুজিং কনসার্ন’। সবাই এখন বাজারে টিকে থাকার লড়াইয়ে আছে। দেশে ২০১৫ সাল থেকে এলপিজির বাজার লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। এখন সেটা স্থিতিশীল হয়েছে। আমার মনে হয়, আগামী বছরগুলোতে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের কম হবে। চীনে একসময় এ খাতে ২৫টি কোম্পানি ছিল, এখন ৪টিতে নেমেছে। ভারতে কোম্পানি ৩টি, শ্রীলঙ্কায় ২টি ও পাকিস্তানে ৩টি। বাংলাদেশে এতগুলো কোম্পানি হওয়ায় গ্রাহকদের সুবিধা হয়েছে, কিন্তু বিনিয়োগকারীরা বিপাকে আছে। আপনি আমাকে দেশের একটা এলাকা দেখান, যেখানে এখন এলপিজির সরবরাহ নেই।
প্রথম আলো: অনেকে তো বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে।
জাকারিয়া জালাল: আমার জানামতে, কিছু কোম্পানি বিনিয়োগের পরিকল্পনা গুটিয়ে নিয়েছে। দেশে যেগুলো আছে, ভবিষ্যতে কয়েকটি একীভূত হয়ে যেতে পারে।