সংঘর্ষে অংশ নেওয়া হেলমেটধারীরা কারা?

সম্প্রতি রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় দোকানমালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। ভবিষ্যতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে করণীয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম

প্রশ্ন

প্রথম আলো: রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় দোকানমালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ কেন ঘটল? এটা কি কোনোভাবে থামানো যেত না?

ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম: ঘটনা শুরু হয় রাত ১১টার পরে। তখন দোকানমালিকদের মধ্যে সিংহভাগই বাড়ি ফিরে গেছেন। আর যাঁরা ঘটনা ঘটিয়েছিলেন, তাঁরাও তখন সেখানে ছিলেন না। পুলিশের নির্দেশনায় সব দোকান বন্ধ রাখা হয়েছিল। এখন কথা হচ্ছে, এ ঘটনা নিয়ন্ত্রণ বা থামানো যেত কি না, তা বলা সম্ভব নয়। যেভাবে ঘটনার কথা রটেছিল, তাতে কী করা সম্ভব ছিল, তা বলা মুশকিল। ছাত্ররা জেনেছে, দোকান কর্মচারীরা এক ছাত্রকে ছুরি মেরেছে। কর্মচারীরা জেনেছে, ছাত্ররা হামলা করতে আসছে। নিউমার্কেট ও চন্দ্রিমা মার্কেটে আগুনও দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। দুটি দোকানের দুজন কর্মচারীর সঙ্গে ছাত্রদের ঝগড়া থেকে এই ঘটনার সূত্রপাত—এটি জাতীয় ইস্যু হয়ে উঠল। কোনোভাবেই বিষয়টি কাঙ্ক্ষিত নয়।

প্রশ্ন

ঈদের মৌসুমে এ ঘটনা ব্যবসা-বাণিজ্যে কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে?

দেওয়ান আমিনুল ইসলাম: অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটা তো এখন সামাজিক ইস্যু হয়ে দাঁড়াল যে নিউমার্কেট এলাকায় দোকানকর্মীরা মারপিট করে। হয়তো অনেকে এই এলাকায় আসতে নিরুৎসাহিত বোধ করবেন। ঈদের আগের ১০ দিন ব্যবসার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় দোকান বন্ধ থাকলে বড় ক্ষতি হবে। তবে ক্ষতি যাতে না হয়, সেই ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।

প্রশ্ন

অনেকের অভিযোগ, দোকানকর্মীদের খারাপ ব্যবহারের কারণে ছাত্ররা ক্ষুব্ধ হয়। সে জন্য প্রায়ই এ এলাকায় মারামারি হয়।

দেওয়ান আমিনুল ইসলাম: বিষয়টি হলো, এটি ব্যক্তিপর্যায়ের ঘটনা। একজন আরেকজনকে দোষ দেয়। তবে এসব ঘটনা আমাদের সমিতির নজরে এলে আমরা দ্রুত সম্ভব সুষ্ঠু বিচার করার চেষ্টা করেছি।

প্রশ্ন

তবে এই এলাকায় প্রায়ই এ রকম সংঘর্ষ ঘটে। কিন্তু অন্য কোথাও এত বেশি ঘটে না, কারণ কী?

দেওয়ান আমিনুল ইসলাম: এই এলাকার সমস্যা হলো, পুরো এলাকার নাম নিউমার্কেট হয়ে গেছে। আর আমাদের মার্কেটের নাম হলো ঢাকা নিউমার্কেট। এ অঞ্চলের যেকোনো মার্কেটে ঘটনা ঘটুক না কেন, দোষ আমাদের ঘাড়ে আসে। আবার অনেক ঘটনার সূত্রপাত ফুটপাতের হকারদের সঙ্গে বচসা থেকে, কিন্তু তার দায়ও আমাদের ওপর আসে। আবার গতকাল অনেক গণমাধ্যমে বলা হলো, নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা রাস্তায় মারামারি করছেন। কিন্তু গতকাল তো এই এলাকার সব মার্কেট বন্ধ ছিল। ফলে সংঘর্ষে যারা লিপ্ত হয়েছে, তারা কারা; আবার ছাত্ররা অস্বীকার করছে, যারা হেলমেট পরে মারামারি করছে, তারা ছাত্র নয়। তাহলে এরা কারা। এই হেলমেটধারীরা মার্কেটের সামনের দিকের দোকানের ক্যাশ বাক্স ভেঙে টাকা নিয়ে গেছে, তার ফুটেজও আছে। তবে হকারদের অনেকে রাস্তায় নেমেছে, তা ঠিক। আরেকটি বিষয় হলো, এই এলাকায় ঢাকা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মিলনমেলা হয়।

প্রশ্ন

আবার মারামারির ঘটনায় চাঁদাবাজির সম্পৃক্ততা আছে বলে অভিযোগ আছে।

দেওয়ান আমিনুল ইসলাম: এখানে চাঁদাবাজি নেই। তবে ছাত্রদের জন্য ছাড়ের বিষয় আছে, এটাই চাঁদাবাজি হিসেবে পরিচিত। আমরা ব্যবসায়ীরাও চেষ্টা করি ছাত্রদের যত বেশি ছাড় দেওয়া যায়। তবে বিষয়টি যেন জোরজুলুমের পর্যায়ে না যায়। আমাদের প্রস্তাব, এই এলাকার ব্যবসায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ সবাইকে নিয়ে কমিটি গঠিত হোক। সমস্যা হলে তারা সমাধান করবে। কেউ কারও গায়ে হাত তুলতে পারবে না। আমি দোকানের কর্মচারীদের বলব, ব্যবহার ভালো করতে হবে। আর অন্যদেরও বলতে হবে, তাঁরা সংযত আচরণ করবেন।

প্রশ্ন

সরকারের তরফ থেকে কী বলা হলো?

দেওয়ান আমিনুল ইসলাম: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। তিনি বলেছেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সবাইকে নিয়ে আলোচনা হবে। থানার ওসিসহ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: এ সংঘর্ষে তো কুরিয়ার সার্ভিসের একজন ডেলিভারিম্যান মারা গেছেন। তাঁর জন্য আপনারা কিছু করবেন?

দেওয়ান আমিনুল ইসলাম: অবশ্যই, আমরা সমিতির পক্ষ থেকে যথাসম্ভব তাঁর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।