বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আসন্ন দশম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে তিনটি বিষয়ে কণ্ঠ তুলবে বাংলাদেশ। এগুলো হচ্ছে শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানি প্রবেশাধিকার, সেবা খাতে বাজার সুবিধা এবং উৎসবিধি শিথিল করা।
ডব্লিউটিওর এই সম্মেলন সামনে রেখে এক প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এ কথা বলেন। ঢাকায় সচিবালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বাণিজ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক অমিতাভ চক্রবর্তীসহ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ এবং অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ১৫-১৮ ডিসেম্বর কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলনে ১৯ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন তোফায়েল আহমেদ।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে (এলডিসি) শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানি সুবিধা দেবে উন্নত দেশগুলো—এ সিদ্ধান্ত অনেক আগের। কিন্তু অনেক উন্নত দেশই তা মানেনি। তাই বাংলাদেশকে এখনো উচ্চ শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করতে হয়। তাই আসন্ন সম্মেলনে এই অধিকার বাস্তবায়নে তিনি আলোচনা করবেন, অন্যদের সমর্থনও চাইবেন বলে জানান।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ডব্লিউটিও এখন আগের জায়গা থেকে সরে গেছে। তার প্রমাণ হলো ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি। ১১টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই চুক্তি করেছে। এতে বাংলাদেশ নেই।
ডব্লিউটিও প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানি সুবিধার দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশসহ এলডিসিগুলো। ২০০৫ সালে হংকং সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলডিসির ৯৭ শতাংশ পণ্য শুল্ক ও কোটামুক্তভাবে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হয়। এর মধ্যে অবশ্য বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলো নেই। বরাবরের মতো এবারের সম্মেলনেও বাংলাদেশ এ বিষয়ে কথা বলবে বলে জানা গেছে।
এলডিসির সমন্বয়ক হিসেবে শুধু নিজের জন্য নয়, অন্যদের জন্যও বাংলাদেশ কাজ করবে বলে জানান তোফায়েল আহমেদ। তিনি এলডিসির জন্য তাই সেবা খাতে ছাড় পেতে আলোচনা করবেন। মন্ত্রী বলেন, এ সিদ্ধান্ত হয়ে আছে আগেই, কিন্তু উন্নত দেশগুলো আটকে রাখায় কার্যকর হচ্ছে না।
ডব্লিউটিও সেবা খাতের ১১টি শ্রেণি করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্যবসায়িক সেবা; যোগাযোগ, নির্মাণ ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল; বিপণন; শিক্ষা; পরিবেশবিষয়ক সেবা; স্বাস্থ্যসেবা; পানি ও পর্যটন-সম্পর্কিত সেবা; বিনোদন, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সেবা; পরিবহনসেবা ও বিবিধ সেবা।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে অনেক দেশই এখন হিংসা করে। অনেকে ভেবেছিল, স্বাধীনতার পরে আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা উন্নত হচ্ছি। আগে আমরা যে দেশের সঙ্গে ছিলাম, সেই পাকিস্তানের চেয়ে প্রায় সব দিক থেকেই আমরা এখন ভালো।’
যুক্তরাষ্ট্র অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) প্রত্যাহার করার পরেও দেশটিতে রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
গতকালের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের সময়ে এলডিসির বাণিজ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে একটি বৈঠক করবেন তোফায়েল আহমেদ। এর বাইরে অনানুষ্ঠানিক কিছু দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করবেন তিনি।