>
- সংসদে অর্থমন্ত্রীর তালিকা প্রকাশ
- দেশে মোট ঋণখেলাপি ২ লাখ ৬৬ হাজার ১১৮ জন
- রাষ্ট্রমালিকানাধীন ৬ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৪ হাজার ২৮৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
- দেশে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৭টি তফসিলি ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ ১১ লাখ ১৫ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা।
নতুন করে দেশের ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পক্ষ থেকে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ তালিকায় শীর্ষ খেলাপি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নতুন করে যুক্ত হয়েছে জনতা ব্যাংকের আলোচিত গ্রাহক অ্যাননটেক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের দুটি করে প্রতিষ্ঠান।
তালিকা অনুযায়ী, অ্যাননটেক্সের খেলাপি দুই প্রতিষ্ঠান হলো সুপ্রোভ স্পিনিং ও সুপ্রোভ রোটর স্পিনিং এবং ক্রিসেন্টের রিমেক্স ফুটওয়্যার ও ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস। দেশের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির তালিকায় এ চার প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে জানিয়েছেন, ঋণখেলাপির যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে কিছুসংখ্যক ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়। তার জবাবে অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে খেলাপির তালিকা প্রকাশ করা হয়। সরকারি দলের সদস্য ওয়ারেসাত হোসেনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী দেশের শীর্ষস্থানীয় ২০ ঋণখেলাপির নাম–ঠিকানাও প্রকাশ করেন।
অর্থমন্ত্রী জানান, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ঋণখেলাপির সংখ্যা ২ লাখ ৬৬ হাজার ১১৮ জন। তবে কে কত টাকার ঋণখেলাপি, তা উল্লেখ করা হয়নি।
মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপি হচ্ছে কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস লিমিটেড, সামান্নাজ সুপার অয়েল লিমিটেড, বিআর স্পিনিং মিলস লিমিটেড, সুপ্রোভ স্পিনিং লিমিটেড, রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড, রাইজিং স্টিল লিমিটেড, কম্পিউটার সোর্স লিমিটেড, বেনিটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ম্যাক্স স্পিনিং মিলস, এসএ অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড, রুবাইয়া ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আনোয়ারা স্পিনিং মিলস, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড, সুপ্রোভ রোটর স্পিনিং লিমিটেড, ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ, চৌধুরী নিটওয়্যার লিমিটেড, সিদ্দিক ট্রেডার্স, রূপালী কম্পোজিট লেদার ওয়্যার লিমিটেড, আলফা কম্পোজিট টাওয়েলস লিমিটেড এবং এমএম ভেজিটেবল অয়েল প্রোডাক্টস লিমিটেড।
সরকারি দলের সাংসদ হাজি সেলিমের প্রশ্নের জবাবে সংসদে অর্থমন্ত্রী জানান, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয়টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ (সেপ্টেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত) ৪৪ হাজার ২৮৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ১২ হাজার ৫২৬ কোটি ৫৩ লাখ, জনতা ব্যাংকের ১২ হাজার ২২ কোটি ৫৪ লাখ, বেসিক ব্যাংকের ৮ হাজার ৪৪১ কোটি ৫৬ লাখ, অগ্রণী ব্যাংকের ৫ হাজার ৬৪৮ কোটি ৫৩ লাখ, রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ৮৭০ কোটি ৪৭ লাখ এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ৭৭৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
সরকারি দলের সদস্য ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) প্রতি আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বেইল আউট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকারি মালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন সরবরাহ করেছে।
সরকারি দলের সাংসদ দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল জানান, দেশে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৭টি তফসিলি ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ ১১ লাখ ১৫ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। একই সময়ে বিনিয়োগের পরিমাণ ৯ কোটি ২২ লাখ ৮৮৪ কোটি ৫ লাখ টাকা।
সরকারি দলের সাংসদ এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল জানান, ডিসেম্বর ২০১৮ মাসের হিসাব অনুযায়ী মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দৈনিক গড় লেনদেন সংখ্যা ৬৭ লাখ ৭৭ হাজার। এতে দৈনিক ১ হাজার ৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়।
এদিকে, এবারের খেলাপির তালিকায় শীর্ষ ২০-এ উঠে আসা অ্যাননটেক্স গ্রুপের কর্ণধার ইউনুছ বাদল। আর ক্রিসেন্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান রিমেক্স ফুটওয়্যারের কর্ণধার আবদুল আজিজ, তিনি আবার চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধারও। এ ছাড়া ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টসের কর্ণধার আবদুল আজিজের ভাই আবদুল কাদের। ঋণ কেলেঙ্কারি ও অর্থ পাচারের দায়ে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধেই মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। মামলার অভিযুক্ত আসামি আবদুল কাদের বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন।