কনটেইনার ডিপো

শীর্ষে সামিট, ৯ ধাপ এগোল ইস্পাহানি

সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড (এসএপিএল)
সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড (এসএপিএল)

আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার ব্যবস্থাপনার ব্যবসায়ে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড (এসএপিএল)। সামিট গ্রুপ ও অ্যালায়েন্স হোল্ডিংস লিমিটেডের যৌথ এ প্রতিষ্ঠানের তিনটি কনটেইনার ডিপো রয়েছে চট্টগ্রামের উত্তর পতেঙ্গায়। ২০২১ সালে আমদানি-রপ্তানি মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি মোট ১ লাখ ৭২ হাজার একক কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করেছে। সে অনুযায়ী এ খাতের ১৭ শতাংশ ব্যবসা রয়েছে সামিটের হাতে।

চট্টগ্রামে ১৬টি শিল্পগোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানের ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপো রয়েছে। এসব ডিপোর গত বছরের আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনারের সংখ্যা হিসাব করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। সব কটি ডিপো মিলে গত বছর (২০২১ সাল) মোট ১০ লাখ একক কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করেছে। এর মধ্যে সাত লাখ রপ্তানি পণ্যের ও তিন লাখ আমদানি পণ্যের কনটেইনার। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মোট যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়, তার প্রায় ৯০ শতাংশই পরিবহন করা হয় ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপো থেকে। আর বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা মোট কনটেইনারের মধ্যে গড়ে ২৩ শতাংশ খালাস হয় এসব ডিপো থেকে। আমদানি-রপ্তানি ছাড়াও খালি কনটেইনারও সংরক্ষণ করে বেসরকারি ডিপোগুলো। সেই হিসাব এ ক্ষেত্রে করা হয়নি।

এ ব্যবসায়ে নবীন ইস্পাহানি গ্রুপের যৌথ অংশীদারত্বের প্রতিষ্ঠান এক বছরে ৯ ধাপ এগিয়েছে। ইস্পাহানি গ্রুপ চার বছর আগে সামিট ও অ্যালায়েন্স হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে যৌথভাবে নতুন কোম্পানি গঠন করে কনটেইনার ডিপো গড়ে তোলে। ২০১৮ সালে চট্টগ্রামের কাট্টলিতে ভিক্টোরি জুট মিলের জায়গায় যাত্রা শুরু করে ইস্পাহানি-সামিট অ্যালায়েন্স টার্মিনাল লিমিটেড নামের এই ডিপো। তবে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৯ সালের অক্টোবরে। সর্বশেষে ২০২১ সালে এই ডিপো ৫৭ হাজার আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করেছে। সেই সুবাদে প্রতিষ্ঠানটি ৯ ধাপ এগিয়ে ৮ম স্থানে উঠে আসে।

কনটেইনার ডিপো মূলত নিয়ন্ত্রিত সেবা শিল্প। কারখানা থেকে রপ্তানি পণ্য এসব ডিপোতে এনে কনটেইনারে বোঝাই করা হয়। এরপর শুল্কায়ন শেষে ডিপো থেকে বন্দরে পাঠিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। আর ৩৭ ধরনের আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে নামানোর পর ডিপোতে নিয়ে খালাস করতে হয়। কনটেইনারবাহী আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ব্যবস্থাপনা করে নির্ধারিত মাশুল আদায় করে প্রতিষ্ঠানগুলো।

উদ্যোক্তাদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি ২০ ফুট লম্বা রপ্তানি কনটেইনারে গড়ে ৮ হাজার টাকা ও আমদানি কনটেইনারে ৬ হাজার টাকা আয় হয়। আর প্রতিটি খালি কনটেইনারে আয় হয় গড়ে ১৩০ টাকা। সেই হিসাবে গত বছর প্রায় ৭৭০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে ১৭টি প্রতিষ্ঠানের ১৯টি ডিপো।

জানতে চাইলে এসএপিএলের পরিচালক কামরুল ইসলাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বখ্যাত শিপিং কোম্পানি ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার কোম্পানিগুলো রয়েছে এসএপিএলের গ্রাহক তালিকায়। উন্নত সেবার কারণেই এসএপিএলের ডিপো বেছে নিচ্ছে তারা। ফলে ডিপোর ব্যবসায়ে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে এসএপিএল।

এসএপিএল চট্টগ্রামে তিনটি ডিপোর পাশাপাশি মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরে ধলেশ্বরী নদীর তীরে নৌ টার্মিনাল এবং কলকাতায় সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট ইস্ট গেটওয়ে প্রাইভেট লিমিটেড নামের টার্মিনাল পরিচালনা করছে। তবে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হয় চট্টগ্রামের তিন ডিপোতেই।

গত বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করেছে কেডিএস লজিস্টিকস লিমিটেড। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত এ ডিপো ১ লাখ ৪৭ হাজার কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করেছে।

এ ছাড়া এমজিএইচ গ্রুপের পোর্টলিংক লজিস্টিকস সেন্টার লিমিটেড তৃতীয়, এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড চতুর্থ ও ইনকনট্রেড লিমিটেড পঞ্চম স্থানে রয়েছে।

কনটেইনার ডিপো সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৫ সালে দেশে প্রথম বেসরকারি ডিপো ‘সি ফেয়ারাস লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৮ সালে যুক্ত হয় ওশান কনটেইনার লিমিটেড। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মূলত খালি কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করত ডিপোগুলো। ১৯৯৯ সাল থেকে তাদের প্রথমবারের মতো রপ্তানি কনটেইনার ব্যবস্থাপনার অনুমতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০০৭ সাল থেকে রপ্তানির পাশাপাশি নির্ধারিত আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দরের পরিবর্তে ডিপোতে নিয়ে খালাসের অনুমতি দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের ১ থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরত্বে এসব ডিপোর অবস্থান।

কনটেইনার ব্যবস্থাপনায় দেশের শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠান
অবস্থান নাম কনটেইনার সংখ্যা
১. সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট (৩টি) ১.৭২ লাখ একক
২. কেডিএস লজিস্টিকস ১.৪৭ লাখ একক
৩. পোর্টলিংক লজিস্টিকস সেন্টার ১.৩৭ লাখ একক
৪. এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ ০.৯৮ লাখ একক
৫. ইনকনট্রেড লিমিটেড ০.৯৬ লাখ একক
৬. বিএম কনটেইনার ডিপো ০.৭৭ লাখ একক
৭. ইস্পাহানি সামিট অ্যালায়েন্স টার্মিনাল ০.৫৭ লাখ একক
৮. শফি মোটরস ০.৩৬ লাখ একক
৯. ভারটেক্স অফডক লিজিস্টকস সার্ভিস ০.৩২ লাখ একক
১০. গোল্ডেন কনটেইনারস ০.৩২ লাখ