দেশীয় অর্থায়নে, দেশীয় উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি পদ্মা সেতু এ দেশের বিভিন্ন খাতের শিল্পোদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ সেতু প্রকল্পে দেশীয় পণ্য সরবরাহের পাশাপাশি উৎপাদন সক্ষমতাও বেড়েছে রড, সিমেন্টসহ আরও অনেক খাতের। পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের সঙ্গে জড়িত সিমেন্ট, রড, নির্মাণ খাতের শিল্পোদ্যোক্তারা তাঁদের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রথম আলোকে। কথা বলেছেন সুজয় মহাজন।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার কাজ করেছি। সেতুর সংযোগ সড়ক, মূল সেতু ও সংযোগ সেতু পিচ ঢালাই, ভাঙ্গার ইন্টারসেকশনের পিচ ঢালাই, সড়ক মার্কিংসহ নানা ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এসব কাজ করতে গিয়ে আমরা বিদেশ থেকে নির্মাণ খাতের নানা যন্ত্রাংশ কিনেছি। অবকাঠামো তৈরির নানা যন্ত্রপাতিতেও বিনিয়োগ করেছি। এসব বিনিয়োগের ফলে কনস্ট্রাকশন শিল্পে আমাদের সক্ষমতা অনেক বেড়ে গেল।
ভবিষ্যতে যেকোনো বড় অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে এসব সক্ষমতা বা যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা যাবে। সত্যি বলতে পদ্মা সেতু প্রকল্প আমাদের প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু আমাদের নয়, এ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধির এক প্রকল্পের নাম পদ্মা সেতু। বিদেশিদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে এমন অনেক অভিজ্ঞতা আমরা এ প্রকল্প থেকে অর্জন করেছি, যা ছিল আমাদের জন্য একেবারেই নতুন। বলা যায়, অবকাঠামো প্রকল্প তৈরির ক্ষেত্রে আমরা বৈশ্বিক মান বা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি এ প্রকল্পের মাধ্যমে। তাতে আমি মনে করি, এখন আমরা বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের যেকোনো দেশে অবকাঠামো প্রকল্পে কাজ করার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পের ফলে অবকাঠামো খাতের দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজে ব্যবহৃত ভারী ও আধুনিক যন্ত্রপাতিতে সমৃদ্ধ হয়েছে।
এ তো গেল প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের সক্ষমতা প্রমাণ ও বৈশ্বিক মানের কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের দিক। প্রকল্প হিসেবে পদ্মা সেতু এ দেশের অর্থনীতি ও শিল্পকারখানার সম্ভাবনার দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি, বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু উত্তরাঞ্চলে নতুন শিল্পকারখানা গড়ে তোলার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছিল। বগুড়া থেকে শুরু করে রংপুর, রাজশাহী অঞ্চলে আমরা তার ইতিবাচক প্রভাবও দেখেছি। পদ্মা সেতু এখন দক্ষিণাঞ্চলে অর্থনৈতিক বা শিল্পের নতুন করিডর গড়ে তোলার পথ খুলে দিয়েছে। পদ্মা সেতু দুই পারের যোগাযোগকে সহজ করার পাশাপাশি কৃষিনির্ভর শিল্প ও পর্যটন খাতের বিকাশে বড় ভূমিকা রাখবে। এখন আমরা শিল্পোদ্যোক্তারা এ সুযোগকে কতটা কাজে লাগাতে পারব, সেটি দেখার বিষয়। তবে এ ক্ষেত্রেও সরকারের নানা সহায়তা লাগবে।
আহসান খান চৌধুরী, চেয়ারম্যান ও সিইও, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ