গ্রাহক চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে বাজার বড় হচ্ছে দেশি রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ কোম্পানিগুলোর। বিভাগীয়, জেলা ও মফস্বল শহর ছাড়িয়ে এখন গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে তাদের বাজার। দেশীয় ফ্রিজশিল্প খাতের সম্ভাবনা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন যমুনা গ্রুপের পরিচালক মনিকা নাজনীন ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম।
প্রথম আলো: রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজশিল্প খাতে যমুনা ইলেকট্রনিকসের যাত্রার প্রেক্ষাপট যদি বলেন?
মনিকা নাজনীন: মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা বিবেচনা করে সাশ্রয়ী মূল্য ও গুণগত মান বজায় রেখে ২০১৪ সাল থেকে বৃহৎ পরিসরে ইলেকট্রনিকস হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদন শুরু করে যমুনা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান যমুনা ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড অটোমোবাইলস লিমিটেড। আধুনিক প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি, দক্ষ জনবল, উন্নত কাঁচামাল ও প্রতিনিয়ত উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে উৎপাদন শুরুর মাত্র আট বছরেই দেশের ফ্রিজশিল্প খাতের শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছেছে যমুনা ব্র্যান্ড। আমাদের বিশাল এ কর্মযজ্ঞে দেশের কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
প্রথম আলো: দেশের অভ্যন্তরে ফ্রিজশিল্পের সম্ভাবনা কেমন?
মনিকা নাজনীন: রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ বর্তমান সময়ে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে দেশে এই খাতের বাজার শতকোটি ডলার (সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা) ছাড়িয়ে যাবে। অত্যন্ত আশার কথা হচ্ছে, ২০১০ সালে বাংলাদেশে যেখানে ৮০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার ছিল বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর দখলে, সেখানে ২০২২ সালে চিত্রটা পুরোপুরি পাল্টে গেছে। এখন বাজারের মাত্র ২০ শতাংশ শেয়ার বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর দখলে। সাশ্রয়ী মূল্য, গুণগত মান, দেশের মানুষের চাহিদা ও আবহাওয়া উপযোগী হওয়ার কারণে গ্রাহকেরা দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর ফ্রিজ কিনতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। শহরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মফস্বল ও গ্রামপর্যায়ে প্রতিনিয়ত ফ্রিজের ব্যবহার বাড়ছে।
প্রথম আলো: সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি এই শিল্পে কেমন প্রভাব ফেলেছে?
মনিকা নাজনীন: করোনা সংক্রমণ ও সাম্প্রতিক ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়েই রেফ্রিজারেটর তৈরির কাঁচামাল বিশেষ করে চিপ যন্ত্রাংশ সরবরাহে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। তা সত্ত্বেও দেশের চাহিদা বিবেচনায় আমরা ফ্রিজ উৎপাদনপ্রক্রিয়া সচল রেখেছি। শুধু তা-ই নয়, পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতেও পণ্যের দাম না বাড়িয়ে ক্রেতাদের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে তা সরবরাহ করছি।
প্রথম আলো: সরকারের কাছ থেকে কী ধরনের সহায়তা প্রত্যাশা করেন?
মনিকা নাজনীন: ফ্রিজ এখন নিত্যব্যবহার্য পণ্যে পরিণত হয়েছে। তাই আমরা আশা করছি, এই খাতে সরকার শিল্পবান্ধব নীতিসহায়তা ও কাঁচামাল আমদানি সহজ করবে। ফলে ফ্রিজশিল্প খাত আরও এগিয়ে যাবে এবং দেশের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে ব্যাপক অবদান রাখবে।
প্রথম আলো: ভালো ফ্রিজ বাছাইয়ে গ্রাহকদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
মনিকা নাজনীন: শুধু ব্র্যান্ডের নাম দেখে পণ্য কিনলেই হবে না, বরং ফ্রিজের স্থায়িত্ব, ডিজাইন, পাওয়ার সেভিং সিস্টেম, কমপ্রেসর, প্রযুক্তি, ওয়ারেন্টি ও বিক্রয়োত্তর সেবা প্রভৃতি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। এখানে সিলিকন জেল নিয়ে আরেকটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত করতে চাই, আমাদের অধিকাংশ ক্রেতা সেই দিকটাতে নজর দেন না। সিলিকন জেল মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এটি খাদ্যমান নষ্ট করে। অথচ আমাদের দেশের অনেক কোম্পানির রেফ্রিজারেটর তৈরিতে ক্ষতিকর এই উপাদান ব্যবহার করা হয়। যমুনা রেফ্রিজারেটর উৎপাদনপ্রক্রিয়ার কোথাও এটি ব্যবহার করে না। অনেক ফ্রিজে মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর আর১৩৪এ গ্যাস ব্যবহৃত হয়। আমাদের ফ্রিজগুলোতে ব্যবহার হয় আর৬০০এ, যা ক্ষতিকর নয়। অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল গ্যাস্কেট ব্যবহারের ফলে খাবারের মান ঠিক থাকে, বিদ্যুৎ খরচও ৭০ শতাংশ কম হয়।
প্রথম আলো: ক্রেতাদের কী সুবিধা দিচ্ছেন?
মনিকা নাজনীন: গ্রাহকের চাহিদা ও সন্তুষ্টির কথা মাথায় রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শুধু সংখ্যাতেই নয়, গুণে-মানেও আমরা সেরা প্রতিষ্ঠান হতে চাই। কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও আমরা তুলনামূলক কম দামে ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছি। আপনি দেখবেন আমাদের রেফ্রিজারেটরগুলোর বিক্রয়োত্তর সেবা নেওয়ার হার একদমই কম (০.০১ শতাংশ)। উৎপাদনপ্রক্রিয়ার ত্রুটিও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তুলনায় অনেক কম।