পৌষ মাসের দুপুরবেলা, তাপমাত্রার পারদ তেমন একটা নামেনি, রোদের তেজও নেই। মেলার জন্য এটিই উৎকৃষ্ট পরিবেশ। এমন পরিবেশে আজ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত রিহ্যাব আবাসন মেলার চতুর্থ দিন ভরদুপুরেও মানুষের ভিড় একদম কম ছিল না।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস আজ। সেই বিবেচনায় আবাসন মেলায় মানুষের আনাগোনা দেখে বোঝা গেল, আবাসনের বাজার বেশ চাঙা হয়েছে। মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেও তার সত্যতা মিলল। কিছু কিছু স্টলে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। তবে সব স্টলে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের একই রকম ভিড় ছিল না।
মেলার দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত মাঝারি আকারের তৈরি ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি। তার সঙ্গে প্লটের চাহিদা আছে। পূর্বাচল প্রবাসী পল্লি গ্রুপের স্টলে আজ দুপুরে মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। তাদের প্রকল্প নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাছে। রাজধানী থেকে দূরত্ব কম নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের স্টলে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বিক্রয়কর্মীদের দম ফেলার ফুরসত নেই। এমন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের জন্য সময় বের করা তাঁদের জন্য প্রকৃত অর্থেই কঠিন। আবার তাঁদের সময় না দেওয়াও বিব্রতকর। ফলে অনুরোধে ঢেঁকি গেলার মতো করেই প্রশ্নের জবাব দিল তারা। জানা গেল, তাদের জমির দাম প্রতি কাঠা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা থেকে ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। মেলাতে প্লট বুকিং দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। অনেকে বুকিংও দিচ্ছেন।
এত দূরের প্রকল্পে আগ্রহ কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মজিবর রহমান নামের এক ক্রেতা বলেন, রাজধানীর মূল অংশে জায়গা কিনে বাড়ি কেনা এখন আর মধ্যবিত্তের আয়ত্তের মধ্যে নেই। কিন্তু ফ্ল্যাটে থাকা তাঁর বিশেষ পছন্দের নয়। সে জন্য প্লটের খোঁজ নিচ্ছেন তিনি। দূরত্বের প্রসঙ্গে জানান, পূর্বাচল আবাসিক এলাকার কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে বা ৩০০ ফুট সড়কের কাজ শেষ হলে দূরত্ব অনেকটাই ঘুচে যাবে। নাগরিক সুবিধা সেখান পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
মেলায় দর্শনার্থীদের অনেকে স্টলে স্টলে ঘুরে খোঁজখবর নিচ্ছেন। বিক্রেতারাও যথাসাধ্য ক্রেতাদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছেন, ব্রোশিউর, লিফলেট দিচ্ছেন। ফলে অনেক ক্রেতার হাতেই কাগজ ও ব্যাগ জমে গেছে।
রাজধানীর বনশ্রী থেকে ভাইয়ের জন্য ফ্ল্যাটের খোঁজ করতে মেলায় এসেছিলেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। হাতে অনেকগুলো ব্যাগ ও কাগজপত্র। কী ধরনের ফ্ল্যাট খুঁজছেন, জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, রামপুরা, বনশ্রী ও আফতাবনগর এলাকায় ফ্ল্যাট খুঁজছেন তিনি। নিজে বনশ্রীতে থাকেন, সে জন্য ভাইয়ের জন্য আশপাশে ফ্ল্যাট খুঁজছেন। মনের মতো ফ্ল্যাট পেলেন কি, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একদম মনের মতো সব মিলছে না। আবার কোম্পানিগুলো তেমন একটা ছাড়ও দিচ্ছে না।
রিহ্যাব মেলায় ক্রেতাদের কী উপকার হচ্ছে, জানতে চাইলে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, উপকার বলতে মেলা একধরনের গেট টুগেদারের মতো। ক্রেতা-বিক্রেতাদের একধরনের যোগাযোগ হচ্ছে। এক ছাদের নিচে সব খবর পাওয়া যাচ্ছে—এটাই বড় বিষয়।
এদিকে আবাসন মেলায় আবাসন কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি গৃহের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণের পসরাও বসেছে। লিফট, বৈদ্যুতিক ও স্যানিটারি সরঞ্জামের স্টল বসেছে। তাদের ক্রেতা অবশ্য আবাসন কোম্পানিগুলো। একই সঙ্গে আকাশ ডিটিএইচের স্টলও আছে মেলায়। কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে বিক্রয়কর্মীরা বলেন, চার দিনে তিন শতাধিক আকাশ সংযোগ বিক্রি হয়েছে। মেলা উপলক্ষে কিছু ছাড়ও দিয়েছে তারা। ৪ হাজার টাকার আকাশ বেসিক সংযোগের ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে মেলায়।