চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত বাংলাদেশ। এ অগ্রযাত্রায় চালিকা শক্তি হিসেবে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগব্যবস্থার বৈপ্লবিক উন্নয়ন। ক্লাউড কম্পিউটিং, অ্যাপভিত্তিক টেলিফোনি কিংবা ই-কমার্সের মতো বিষয়ে বাংলাদেশ এখন অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। আর এ তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগব্যবস্থার অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে দেশীয় যে সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে ‘ব্রিলিয়্যান্ট’ তাদের অন্যতম।
বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতে ১০টির বেশি সর্বাধুনিক খুচরা ও পাইকারি বিক্রির সেবা দিয়ে দেশ ও বিদেশের লাখো গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে ব্রিলিয়্যান্ট। অনন্য এসব সেবার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইন্টারন্যাশনাল আউটগোয়িং সুবিধাসম্পন্ন টেলিফোনি অ্যাপ, পাবলিক ক্লাউড, আইপিটেলিফোনি, হোস্টেড পিবিএক্স, দেশব্যাপী ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ডেটাকানেক্টিভিটি, ন্যাশনাল ভয়েস ও ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ, ই-কমার্স ইত্যাদি।
ডিজিটাল বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে সমৃদ্ধ করার যে স্বপ্ন নিয়ে পথচলা শুরু করেছিল ব্রিলিয়্যান্ট, তার শুরুটা ছিল রোমাঞ্চকর। সম্পূর্ণ দেশীয় জনবল আর মেধা কাজে লাগিয়ে, পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের সমন্বয়ে প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করে ব্রিলিয়্যান্ট আজ যেখানে পৌঁছেছে, তা গর্ব করার মতো। দেশীয় টেলিযোগাযোগ আর তথ্যপ্রযুক্তি বাজারে বিদেশি সংস্থাগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য আর নানা রকম প্রযুক্তিগত অপ্রতুলতা জয় করে ব্রিলিয়্যান্ট স্থাপন করেছে দেশের প্রথম ওভার দ্য টপ টেলিফোনি অ্যাপ, প্রথম দেশীয় পাবলিক ক্লাউড কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম, এমনকি দেশের প্রথম ক্লাউড পিবিএক্স। এ ছাড়া নানা ধরনের আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিমূলক সেবাদানের দৃষ্টান্ত, যা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ও আনন্দের বিষয়।
গল্পের শুরুটা ছিল ২০০৮ সালের দিকে, নভোটেল নাম নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ভয়েস গেটওয়ে হিসেবে দেশীয় টেলিযোগাযোগ বাজারে পদার্পণের মাধ্যমে। নভোটেলের হাত ধরে ২০১২–তে ভয়েস থেকে ডেটা খাতে সম্প্রসারণের মাধ্যমে যোগ হয় আরও একটি পরিচয়—নভোকম। ঢাকা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত বিস্তৃত আইটিসি নেটওয়ার্ক, ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে, ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ ইত্যাদি সেবা নিয়ে নভোটেলের সমান্তরালে যাত্রা শুরু করে নভোকম, দেশের ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের চাহিদা পূরণে যার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ২০১৩ সালে রিটেইল টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা নিয়ে আগমন ঘটে ইন্টার ক্লাউডের, যার বর্তমান ব্র্যান্ড নামই হলো ব্রিলিয়্যান্ট। প্রাথমিকভাবে শুধু ইন্টারনেট, ডেটা সার্ভিস আর আইপিটেলিফোনি নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ব্রিলিয়্যান্ট তৈরি করেছে দেশের প্রথম ওভার দ্য টপ টেলিফোনি অ্যাপ ব্রিলিয়্যান্ট কানেক্ট, যার মাধ্যমে সর্বনিম্ন মূল্যে কল করা যাবে দেশ থেকে দেশান্তরে যেকোনো নম্বরে। এর পাশাপাশি ভার্চ্যুয়াল সার্ভার অথবা ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের চাহিদা মেটাতে তৈরি করেছে ব্রিলিয়্যান্ট ক্লাউড, যা বিদেশি ক্লাউড প্ল্যাটফর্মগুলোর তুলনায় অনেক বেশি সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক। এ ছাড়া রয়েছে ব্রিলিয়্যান্টপিবিএক্স এবং আরও নানা ধরনের তথ্য প্রযুক্তিমূলক সেবা ও পরিষেবা।
ব্রিলিয়্যান্টের এই সফল অভিযাত্রার পেছনে কাজ করছে প্রায় ২৫০ জনের চৌকস একটি দল। ব্রিলিয়্যান্টের প্রধান অফিস ঢাকার গুলশানের পার্শ্ববর্তী শাহজাদপুর এলাকায়। মূলত এখান থেকেই ব্রিলিয়্যান্ট তাদের সব কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
ব্রিলিয়্যান্টের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ছোট–বড় মিলিয়ে ২৭ হাজারের বেশি তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রায় এক যুগের কাছাকাছি সময় ধরে দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতে একের পর এক নিত্যনতুন মাত্রা সংযোজন করেছে ব্রিলিয়্যান্ট।