দেশে মোটরসাইকেলের ক্রেতা বাড়ছে। কেউ প্রথমবার মোটরসাইকেল কেনার চিন্তা করছেন, কেউ আবার পুরোনোটা বদলে নতুন কোনো মডেল কিনতে চাইছেন। নারীরাও এখন স্কুটি চালাতে আগ্রহী।
মোটরসাইকেল কেনার আগে আমাদের কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত। আপনার কোনটা দরকার, কোন বৈশিষ্ট্য না হলেও চলবে, অথবা কেমন মাইলেজ (জ্বালানি ব্যয়) দরকার—মোটরসাইকেল কেনার আগে এসব বিষয় মাথায় রাখতে হয়।
বাজেট নির্ধারণ
একটা বাইক কেনার ক্ষেত্রে সবার আগে আপনাকে বাজেট ঠিক করতে হবে। ধরুন আপনার বাজেট ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে সেরা মোটরসাইকেলটি আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে।
এ বাজেটে অনেক মোটরসাইকেল পড়বে। আপনি প্রথমে যেসব বাইক পছন্দ নয়, সেগুলো বাদ দিন। কোনো বৈশিষ্ট্য, কোনো রং, দেখতে কেমন, পারদর্শিতা ইত্যাদির ভিত্তিতে অনেকগুলো বাদ পড়ে যাবে।
যেমন, আপনার বাজেট আড়াই লাখ টাকা। আপনি একটা ‘রেসিং বাইক’ কিনতে চাইছেন। সেটার মানও ভালো হতে হবে। দেখা গেল আপনার বাজেটের ভেতর যে বাইকগুলো আছে, সেগুলোর তিনটি বাদে কেউ চার সেকেন্ডের ভেতরে ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতি তুলতে পারে না। তাহলে আপনার তালিকায় মোটরসাইকেল সংখ্যা তিনটিতে নামবে।
পরীক্ষামূলক চালানো
আপনার তালিকায় যে তিনটি মোটরসাইকেল রয়েছে, সেগুলো পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়ে দেখুন। যদি পরিচিত কারও না থাকে, তাহলে শোরুমে চলে যান। এখন প্রায় সব মোটরসাইকেল কোম্পানিই পরীক্ষামূলক বা টেস্ট রাইডের সুযোগ দিচ্ছে। কেনার আগে অবশ্যই কোন বাইকটি আপনার সঙ্গে মানানসই, সেটা বাস্তবিকভাবে অনুভব করে দেখুন। এভাবে আপনি আপনার শারীরিক কাঠামোর সঙ্গে সবচেয়ে ভালো মানায়, তা বাছাই করুন। তালিকায় সংখ্যা দুটিতে নামিয়ে আনুন।
পরিচিতজনের পরামর্শ
বাইকটি কিনতে চাইছেন সেটি সম্পর্কে আপনার পরিচিতজনদের পরামর্শ নিন। আশপাশের লোক, বন্ধু বা স্বজনদের মধ্যে কেউ মোটরসাইকেল চালালে তাঁদের মতামত নিন। কেউ না কেউ আপনাকে কোনো ভালো পরামর্শ দিতে পারে। হয়তো দেখা যেতে পারে ওই মোটরসাইকেলটি তাঁর আগে ছিল। আপনি চাইলে বাইক বিডির ফেসবুক গ্রুপে গিয়ে একটা জরিপ করে ফেলতে পারেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেবেন নিজে।
মাইলেজে নজর
আপনি যদি মোটরসাইকেল নিয়মিত ব্যবহার করতে চান, যদি ব্যয় সীমিত রাখতে চান, তাহলে মাইলেজের দিকে নজর দিন। কারণ, প্রতিদিনের লম্বা দূরত্বের রাস্তার জন্য মাইলেজ অনেক বড় একটা ব্যাপার। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকের একটা ধারণা আছে যে মাইলেজ ভালো মানেই বাইক ভালো, এটা কিন্তু একদম ঠিক না। মাইলেজের পাশাপাশি মোটরসাইকেলটির ইঞ্জিনের দিকেও নজর দিন।
রিসেল ভ্যালু
আপনি যদি ঘন ঘন মোটরসাইকেল পরিবর্তন করেন, তাহলে রিসেল ভ্যালু বা পুনর্বিক্রয়মূল্য অনেক বড় একটা ব্যাপার। সে ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল কেনার আগে রিসেল ভ্যালুর দিকে নজর দিন। যে মোটরসাইকেলগুলো কয়েক বছর চালিয়ে বিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়া যায়, সেগুলো কিনুন।
অনুমোদিত পরিবেশক
যেকোনো মোটরসাইকেল কেনার ক্ষেত্রে কোম্পানির অনুমোদিত পরিবেশকের কাছ থেকে কিনুন। এতে কেনার পরে আপনাকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। অনেক দোকান আছে, যারা হয়তো কিছুটা কম দামে আপনার কাছে মোটরসাইকেল বিক্রি করবে, বিক্রয়–পরবর্তী কোনো সেবা দেবে না। মোটরসাইকেলের কোনো সমস্যা হলে দায়িত্ব নেবে না। এ জন্য নতুন বাইক কেনার আগে কোম্পানির পরিবেশকের নামগুলো যাচাই করে নিন।
এ ছাড়া আপনার বাসার বা অফিসের আশপাশে আপনার পছন্দ করা মোটরসাইকেলটির রক্ষণাবেক্ষণ বা সার্ভিসিং সেন্টার আছে কি না, সেটাও একটা বিবেচ্য বিষয় হতে পারে।
খুচরা যন্ত্রাংশের সহজলভ্যতা
ভাবুন, এমন মোটরসাইকেল কিনলেন, যেটির যন্ত্রাংশের দাম অনেক বেশি। সব সময় পাওয়াও যায় না। অনেকে মনে করতে পারেন, এটা নিয়ে চিন্তা করবেন কেন? ধরুন বাইকের ফুট পেগ (পাদানি) ভেঙে গেল। যা নতুন কিনতে হবে, কিন্তু শোরুমে নেই। কোথাও পাওয়া যায় না। একবার ভাবুন তো পাদানি ছাড়া আপনি বাইক চালাবেন কীভাবে?
নিজের পছন্দ আগে
সবার আগে গুরুত্ব দিন নিজের পছন্দকে। যে মোটরসাইকেলটি চালাতে আপনি স্বস্তি বোধ করেন, সেটাই নিয়ে নিন। সামান্য বেশি দাম অথবা কিছুটা বেশি মাইলেজের দিকে না তাকিয়ে আপনার পছন্দের দিকে তাকানোটা বেশি জরুরি। কারণ, দিন শেষে নিজের সন্তুষ্টিই আগে।
সবশেষ
সবকিছু বিবেচনার পর মোটরসাইকেলটি কিনে ফেলুন। নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন করাতে ভুলবেন না। নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা জরুরি। ভালো একটা মোটরসাইকেল কিনলেন, কিন্তু নিজের সুরক্ষার জন্য কিনলেন একটি নিম্নমানের হেলমেট; বিষয়টা কেমন হয়ে গেল না? একটু খরচ হলেও একটা ভালো মানের হেলমেট কিনুন। মোটরসাইকেল কেনার বাজেটে আগেই হেলমেটের দাম ঢুকিয়ে রাখুন। বেশির ভাগ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পাওয়ার ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় পড়লে ভালো মানের ‘ফুলফেস’ হেলমেট আপনার প্রাণ বাঁচাবে। সামান্য কিছু টাকা বাঁচাতে নিম্নমানের হেলমেট কিনবেন না।
ওয়াসিফ আনোয়ার: প্রধান সম্পাদক, বাইকবিডিডটকম