মিয়ানমার থেকে আসছে ট্রলার বোঝাই গরু

কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডর দিয়ে মিয়ানমার থেকে আমদানি হওয়া পশু। এ মাসে ৪০ হাজার পশু আসার কথা। গতকাল বিকেলে। ছবি: প্রথম আলো
কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডর দিয়ে মিয়ানমার থেকে আমদানি হওয়া পশু। এ মাসে ৪০ হাজার পশু আসার কথা। গতকাল বিকেলে।  ছবি: প্রথম আলো

কাঠের ট্রলার বোঝাই করে মিয়ানমার থেকে সাগরপথে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডর দিয়ে আমদানি হচ্ছে কোরবানির পশু। মুহূর্তে সেই পশু ট্রাক বোঝাই করে সরবরাহ করা হচ্ছে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। দামে তুলনামূলক সস্তা হওয়ায় ব্যবসায়ীদের নজর এই করিডরের দিকেই।

পশু ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত পাঁচ দিনে (২ আগস্ট পর্যন্ত) মিয়ানমার থেকে ৫ হাজার ৪৯৬টি পশু আমদানি হয়েছে। ১১ আগস্ট রাত পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে আনা হবে আরও ২৫ হাজার পশু। কিন্তু বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় গত দুই দিন (শনি ও রোববার) আমদানি বন্ধ ছিল। জুলাই মাসে এ করিডর দিয়ে আমদানি হয়েছিল ১০ হাজার ৯৫টি পশু। এর বিপরীতে সরকারের রাজস্ব (প্রতিটি পশুর বিপরীতে ৫০০ টাকা) আয় হয়েছে ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা। চলতি আগস্ট মাসে পশু আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৪০ হাজার।

টেকনাফ শুল্ক স্টেশনের কাস্টমস সুপার মো. ময়েজ উদ্দিন বলেন, ‘করিডর দিয়ে পশু আমদানি বাড়াতে আমরা ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করছি। ইতিমধ্যে করিডর দিয়ে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পশু এসেছে।’

পশু আমদানির আড়ালে ইয়াবার চালান যেন না আসে, সেদিকে বিজিবি সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত এই পথে ইয়াবার চালান ধরা পড়েনি।

করিডর থেকে পশু কিনে টেকনাফ, কক্সবাজার নিয়ে যেতে কেউ যেন চাঁদাবাজির শিকার না হন, সে ব্যাপারে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে দাবি টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের।

বড় গরু দামে সস্তা

গতকাল বিকেলে করিডরে গিয়ে দেখা যায়, নাফ নদীর তীরের বেড়িবাঁধে বাঁধা কয়েক শ গরু–মহিষ। প্রতিটার ওজন চার থেকে সাত মণ। বেড়িবাঁধের পাশে নাফ নদী পর্যন্ত লম্বা জেটি। জেটির ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। জেটিঘাটের পাশে তিনটি কাঠের ট্রলার। ট্রলারগুলো গত শুক্রবার মিয়ানমারের আকিয়াব থেকে পশু বোঝাই করে করিডরে আসে। 

একটি ট্রলারের শ্রমিক ক্যা জা প্রু (৪৫) বলেন, শনিবার থেকে বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। এ কারণে ট্রলারগুলো মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারছে না। মিয়ানমারের আকিয়াব, টংগো, রাচিডং থেকেও পশু বোঝাই কোনো ট্রলার গত দুদিনে করিডরে পৌঁছাতে পারেনি। প্রায় ৩০০ কিলোমিটারের বঙ্গোপসাগর অতিক্রমের পর নাফ নদী পার হয়েই পশুবোঝাই ট্রলারগুলো করিডরে পৌঁছায়। 

২০০৩ সালের ২৫ মে শাহপরীর দ্বীপ বিজিবির চৌকিসংলগ্ন এলাকায় এ করিডর চালু হয়। দক্ষিণ চট্টগ্রামে পশু আমদানির এটিই একমাত্র করিডর। গত বছর ঈদুল আজহায় এই করিডর দিয়ে ৩৪ হাজার পশু আমদানি হয়েছিল।

বেড়িবাঁধের ওপর চলে পশুর বেচাবিক্রি। গতকাল পাঁচ থেকে ছয় মণ ওজনের ১২টি গরু ১২ লাখ ২৫ হাজার টাকায় কেনেন ঢাকার গাবতলীর পশু ব্যবসায়ী মতলুব মিয়া ও বজলুল কবির। এ ক্ষেত্রে প্রতিটা গরুর দাম পড়েছে ১ লাখ ২ হাজার টাকা করে।

মতলুব মিয়া বলেন, মঙ্গলবার বিক্রির জন্য পশুগুলো তোলা হবে ঢাকার বাজারে। প্রতিটি গরু দেড় লাখ টাকা দামে বিক্রির আশা করছেন তিনি।

শাহপরীর দ্বীপ করিডর পশু আমদানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুল্লাহ মুনির বলেন, আমদানি হওয়া ৫ হাজার ৪৯৬টি পশুর মধ্যে ৮০ শতাংশ গরু। ১৫ শতাংশ মহিষ ও ৫ শতাংশ ছাগল। ১২ জন ব্যবসায়ী ঈদুল আজহার আগের দিন পর্যন্ত আরও ২৫ হাজার পশু আমদানি করবেন।