>• উত্তরার ভবনে কাল থেকে দাপ্তরিক কাজ শুরু হবে
• নতুন ভবন কাজের জন্য এখনো উপযোগী হয়নি
• হাতিরঝিল এলাকার ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে
কারওয়ান বাজারের পুরোনো ভবন থেকে নিজেদের মালপত্র উত্তরায় নির্মাণাধীন নতুন ভবনে স্থানান্তর শুরু করেছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনের বর্তমান নেতারা বলছেন, আদালতের নির্দেশনা মেনেই পুরোনো ভবনটি ছেড়ে দিচ্ছেন তাঁরা। কাল সোমবার নতুন ভবনে বিজিএমইএর দাপ্তরিক কাজ শুরু হবে।
এদিকে বিজিএমইএর একাধিক সূত্র জানায়, উত্তরায় নির্মাণাধীন নতুন ভবন দাপ্তরিক কাজের জন্য এখনো উপযোগী হয়নি। ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নেই। এমন কয়েকটি যুক্তিতে আরও কিছুদিন বর্তমান ভবনে থাকার জন্য ব্যবস্থা নিতে বর্তমান নেতৃত্বকে অনুরোধ করেছিল রুবানা হকের নেতৃত্বাধীন সংগঠনটির নবনির্বাচিত কমিটি। তবে বর্তমান কমিটি সেই অনুরোধ রাখেনি। জানা গেছে, সদ্য শেষ হওয়া বিজিএমইএ নির্বাচন নিয়ে নেতাদের মধ্যে প্রকাশ্যে সমঝোতা হলেও কারও কারও মধ্যে বিরোধ এখনো রয়ে গেছে। এরই প্রকাশ ঘটেছে ভবন স্থানান্তরের মধ্য দিয়ে।
জমির স্বত্ব না থাকা ও জলাধার আইন লঙ্ঘন করায় হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটি উচ্চ আদালতের নির্দেশে ভেঙে ফেলতে হবে। সে জন্য ভবনটি ছাড়তে গতকাল ১২ এপ্রিল পর্যন্ত বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষকে সময় দিয়েছিলেন আদালত। ভবনের কার্যক্রম সরিয়ে নিতে উত্তরা তৃতীয় পর্বে ১১০ কাঠা জমির ওপর বিজিএমইএ নতুন ভবন নির্মাণ করছে। ইতিমধ্যে ১৩ তলা ভবনের ৬ তলার কাজ শেষ হয়েছে। ৩ এপ্রিল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্মাণাধীন ভবনটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমান ভবনের মালপত্র উত্তরার নতুন ভবনে স্থানান্তরের কাজ চলছে। সোমবার থেকে আমরা সেখানে অফিস করব। প্রয়োজন হলে এক-দুটি বিভাগ পরে যাবে।’
বর্তমান ভবনে আরও কিছুদিন থাকার জন্য নবনির্বাচিত কমিটির অনুরোধ বিষয়ে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘ভবন ছাড়তে গত বছর আমরা আদালতের কাছে আর সময় চাইব না বলে অঙ্গীকারনামা দিয়েছিলাম। ফলে সময় বাড়ানোর আবেদন করার আর কোনো সুযোগ নেই। তা ছাড়া আজকের (গতকাল) মধ্যে ভবন না ছাড়লে আপনারা সাংবাদিকেরা তো কালই লিখবেন আদালতের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করল বিজিএমইএ।’
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিএমইএর নবনির্বাচিত কমিটির দুই নেতা বলেন, উত্তরার নতুন ভবনের কাজ চলমান। তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। নিরাপত্তা নিয়েও দুশ্চিন্তা আছে। নিজস্ব যানবাহন ছাড়া ভবনটিতে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। আশপাশে ব্যাংকের কোনো শাখাও নেই। ফলে তড়িঘড়ি করে নতুন ভবনে স্থানান্তরিত করলে বিজিএমইএর ইউডিসহ অন্যান্য সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। তাতে পোশাক রপ্তানিই হুমকির মধ্যে পড়ে যেতে পারে।
বিজিএমইএর পাশাপাশি হাতিরঝিলের ভবন থেকে গতকাল এক্সিম ব্যাংক নিজেদের মালপত্র সরানো শুরু করেছে। তবে ডিবিএলসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান ভবনটি ছাড়তে উদ্যোগ নেয়নি। ডিবিএলের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘ভবন ছাড়ার বিষয়ে আমরা এখনো কিছু জানি না। আমরা আজ (গতকাল) অফিস করছি।’
উত্তরায় বিজিএমইএর নতুন ভবনে দুটি টাওয়ার হবে। সেখানে দুটি বেসমেন্ট ছাড়া ১৩ তলা থাকবে। ভবনে মোট জায়গার (স্পেস) পরিমাণ ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৩ বর্গফুট। তার মধ্যে ৩ লাখ বর্গফুট নিজেদের ব্যবহারের জন্য রাখছে বিজিএমইএ। বাকি জায়গা ২৩টি প্রতিষ্ঠান কিনেছে। ভবনটিতে প্রদর্শনী কেন্দ্র, আধুনিক মিলনায়তন, দুটি সেমিনার কক্ষসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকবে। ভবনের পুরো নির্মাণকাজ আগামী বছরের জুনে শেষ হবে।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে ওই ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। রায়ে বলা হয়, ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হলো। পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। প্রথমে ছয় মাস ও পরে সাত মাস সময়ও পায় তারা। সর্বশেষ গত বছরের এপ্রিলে নতুন করে এক বছর সময় পায় সংগঠনটি। সে সময় তারা মুচলেকা দেয়, ভবিষ্যতে আর সময় চাওয়া হবে না।