চলতি মূল্যে মাথাপিছু আয় হিসাব করার ক্ষেত্রে বাস্তব সমস্যা আছে। সব দেশের বাস্তবতা এক নয়।
মাথাপিছু আয়ে বাংলাদেশ টানা দুই বছর ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২১ সালে চলতি মূল্যে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে ২ হাজার ১৩৮ দশমিক ৭৯৪ ডলার। আর একই সময়ে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি হবে ২ হাজার ১১৬ দশমিক ৪৪৪ ডলার।
এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ভারত-বাংলাদেশে রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। ভারতের বিরোধী দলগুলো নিজ দেশের এই দুরবস্থায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারও যথারীতি এই সফলতার কথা ফলাও করে বলেছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদ সৈয়দ মইনুল আহসান বলেছেন, ডলারের চলতি মূল্যের সাপেক্ষে মাথাপিছু আয়ের তুলনা করা ঠিক নয়, এমনকি স্থির মূল্যে যে তুলনা করা হয়, তা–ও ঠিক নয়। কারণ, ভিত্তি বছরের পরিবর্তনের সাপেক্ষে অনেক পরিবর্তন ঘটে যায়। সে জন্য দুই বা ততোধিক দেশের মাথাপিছু আয়ের হিসাব পেতে পিপিপি বা ক্রয়ক্ষমতার সমতা সূচক ব্যবহার উচিত। পিপিপির হিসাবে ভারত বাংলাদেশের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে। ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তারা এ নিয়ে কথা বললেও দুই দেশের গণমাধ্যম নীরব থেকেছে।
গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব
কথা বলেন সৈয়দ মইনুল আহসান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।
ভারত বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে পড়ছে—এই রাজনৈতিক উত্তেজনায় কৌশিক বসুর মতো ভারতীয় অর্থনীতিবিদও ভেসে গেছেন। কৌশিক বসু টুইটে বলেছিলেন, ‘ভারত পাঁচ বছর আগে মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতের চেয়ে ২৫ শতাংশ এগিয়ে ছিল, কিন্তু এখন তারা পিছিয়ে পড়েছে—প্রকৃত অর্থেই ধাক্কা খাওয়ার মতো বিষয়।’
সৈয়দ মইনুল আহসান বলেন, ডলারের চলতি মূল্যে দুই দেশের মাথাপিছু আয়ের মধ্যে তুলনা করার কিছু বাস্তব সমস্যা আছে। সেগুলো হলো প্রথমত, দুই দেশের মূল্যস্ফীতির পার্থক্য; দ্বিতীয়ত, মুদ্রার বিনিময় হারে পার্থক্য; তৃতীয়ত, দুই দেশের চরম ও আপেক্ষিক মূল্যের ব্যবধান এবং তাদের মধ্যকার তুলনা অযোগ্যতা।
চলতি মূল্যে হিসাবের ক্ষেত্রে কেবল মোট জাতীয় আয় (জিএনআই) কিছুটা বিশ্বাসযোগ্য বলে মত দেন সৈয়দ মইনুল। এই সূচকে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিএনআই ১৯৯০-এর দশকেই ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন কিছুটা ভিন্ন দিকে আলোকপাত করেন। বলেন, বিদ্যমান তথ্য-উপাত্তের তুলনা কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা আছে। সৈয়দ মইনুল তার পথ বাতলে দিয়েছেন। কিন্তু সব দেশে একই পদ্ধতিতে পরিসংখ্যান করা হয় না। যেমন ভারত যেভাবে জিডিপির হিসাব করে, বাংলাদেশ একদম একইভাবে করে না। ভারত যেসব খাত জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে, ভিত্তি বছর যা নির্ধারণ করেছে, বাংলাদেশ সেভাবে করছে না। একসময় ২০০৫ সাল ছিল জিডিপির ভিত্তি বছর। এখন ২০১৫ সাল। এর সঙ্গে নতুন কিছু খাত যুক্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এমনকি বিশ্বব্যাংকও এসব চ্যালেঞ্জ করে না।
বিনায়ক সেনের কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেন সৈয়দ মইনুল। বলেন, ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে কার্যত সব পণ্যই ঘরে বসে পাওয়া সম্ভব—আমাজনের কল্যাণে। কিন্তু ঢাকায় বা বাংলাদেশে ঘরে বসে খুব কম পণ্যই পাওয়া যায়। আবার অপ্রাতিষ্ঠানিক এবং কালো অর্থনীতির রূপ ও আকার এক নয়। তবে আঞ্চলিক পরিসরে ভিন্নতা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া যায়।
অনুষ্ঠানে বিআইডিএসের গবেষক ও সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।