প্রথম আলো: হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক হামলা ও অগ্নিসংযোগ নিয়ে আপনাদের প্রতিক্রিয়া কী? নূরুল আমিন: দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে এই মতিঝিল-দিলকুশা এলাকা। এই এলাকাকে বাংলাদেশের ওয়ালস্ট্রিটও বলা হয়ে থাকে। আমরা মনে করি, এই এলাকায় সব ধরনের কর্মকাণ্ড, আচরণই সংযত ও সহনীয় হওয়া দরকার। আসলে কিছুদিন ধরে দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহিংসতার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। আর এবার আমরা দেখলাম আক্রমণগুলো হয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ভাঙা, দরজা-জানালা ভেঙে ভেতরে অবৈধ প্রবেশ। আসবাব ও দলিলপত্র নষ্ট হয়েছে, এটিএম বুথে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে কয়েকটি ব্যাংকের শাখাতে। এতে বিপুল অঙ্কের ক্ষতি হয়েছে ব্যাংকগুলোর। এটা খুবই খারাপ লক্ষণ ও উদাহরণ। সবাইকেই মনে রাখতে হবে, টাকা বা মূলধন নিরাপদে রাখতে হয়। যদি নিরাপদে না থাকে এবং তাতে যদি আমানতকারী বা মূলধন জোগানদাতার মধ্যে আস্থাহীনতা ও শঙ্কা তৈরি হয়, তাহলে কিন্তু বিপদের আশঙ্কাও থাকে। প্রথম আলো: বাংলাদেশ ব্যাংক মতিঝিল এলাকায়, বিশেষত শাপলা চত্বরে সমাবেশের অনুমতি না দিতে সরকারের কাছে লিখেছিল। আপনাদের কী মত? নূরুল আমিন: আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পুরোপুরিভাবে একমত। কথা হতে পারে শনিবারে সরকারি ছুটির দিনে সমাবেশ নিয়ে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এখন কিন্তু শনিবারও ব্যাংকের অনেক শাখা মানে বৈদেশিক বিনিময়কাজে যুক্ত (এডি) ব্যাংকের শাখা খোলা থাকে। এতে করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে নিকাশ (ক্লিয়ারিং) কাজও চলে। আর অটোমেটেড টেলর মেশিন তো (এটিএম) সব দিন সব সময় খোলা থাকে। ফলে তার নিরাপত্তা দরকার। আর এ দফাতে যে আক্রমণ আমরা প্রত্যক্ষ করলাম, এরপর আর মতিঝিলে সমাবেশ কোনোভাবেই হতে দেওয়া ঠিক হবে না। তা যে দল, গোষ্ঠী বা সংগঠনেরই হোক। দেশের স্বার্থেই আমাদের দল-মত সবাইকে এটা মানতে হবে।
প্রথম আলো: এই যে ব্যাংকগুলোতে হামলা করা হলো, ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হলো, এতে দেশ-বিদেশে আমাদের কোনো বাড়তি সমস্যা, খরচ যোগ হবে কি না?
নূরুল আমিন: আমরা যাঁদের সঙ্গে ব্যবসা করছি, তাঁরা আমাদের সম্পর্কে ভালো করেই জানেন। ফলে আমার মনে হয় না, গত দিনে একটা ঘটনাতেই কোনো সমস্যা যুক্ত হবে। আমাদের সহযোগী অপরপক্ষের বিবেচনা হচ্ছে, এমন এক-আধটা ঘটনা হঠাৎ করে হয়তো ঘটে যেতে পারে। ফলে এখনো আমাদের আগের মতোই যেমন এলসিতে অ্যাড কনফারমেশন দিতে হতো, তা-ই দিতে হচ্ছে। নতুন কোনো সমস্যায় এখনি পড়ছি না। তবে একই ঘটনা যদি বারবার ঘটে চলে এবং তাতে যদি তাঁদের সমস্যা হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদেরও সমস্যা হবে। অ্যাড কনফারমেশনে ব্যয় বাড়বে। আর রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে কান্ট্রি রিস্ক (সার্বিক ঝুঁকি) বেড়ে গেলে তার জন্য বাড়তি অর্থও গুনতে হবে। যেটা কারোরই কাম্য নয়।
[সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনজুর আহমেদ]