ঈদের আগে গত এপ্রিলের মজুরি ও বোনাস যেসব শিল্প–কারখানা দেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন।
সংগঠনটির সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম আজ বুধবার শ্রমসচিবকে মজুরি ও বোনাস দিতে ব্যর্থ কারখানার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ত্রিপক্ষীয় কমিটির সভায় করোনাভাইরাসের কারণে গত এপ্রিলে কারখানা বন্ধের সময় ৬৫ শতাংশ মুজরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তার মধ্যে ৬০ শতাংশ চলতি মাসে এবং বাকি ৫ শতাংশ আগামী মাসে পরিশোধের কথা। তা ছাড়া ঈদের বোনাসের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন দাবি করেছে, গাজীপুর, সাভার-আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহসহ ছয়টি শিল্প এলাকার তৈরি পোশাকসহ ৯২০টি কারখানা শ্রমিকদের গত এপ্রিল মাসের মজুরি দেয়নি। তা ছাড়া ঈদ বোনাস পরিশোধ করেনি ১ হাজার ২৫৮টি কারখানা। ছয়টি শিল্প এলাকায় তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৮৮২। তাদের মধ্যে ১৬১টি মজুরি ও ৩৫৮টি কারখানা শ্রমিকদের বোনাস দেয়নি। তা ছাড়া বিকেএমইএর ১ হাজার ১০১টি সদস্য কারখানার মধ্যে ৬০টি মজুরি ও ৮৫টি বোনাস দেয়নি। অন্যদিকে বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সদস্য ৩৮৯টি সদস্য কারখানার মধ্যে ৪০টি মজুরি ও ৪৭টি বোনাস দেয়নি।
সংগঠনটি বলেছে, শ্রম আইন অনুযায়ী চলতি মাসের মজুরি পরবর্তী মাসের প্রথম সাত কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে সরকারের নির্দেশনা থাকলেও ২৪ মে পর্যন্ত অনেক কারখানা মজুরি ও বোনাস পরিশোধ করেনি। এ বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) মজুরি ও বোনাস দিতে ব্যর্থ শিল্পমালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর গণমাধ্যম–সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান খান মনিরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন মজুরি ও বোনাস পরিশোধে ব্যর্থ কারখানার যে সংখ্যা উল্লেখ করেছে, তার সঙ্গে বিজিএমইএর পরিসংখ্যান মিলছে না। সংগঠনের সচল ১ হাজার ৯২৬ কারখানার মধ্যে সরকারের গঠিত প্রণোদনা তহবিল থেকে ঋণ নিতে সনদ নিয়েছে ১ হাজার ৩৭৭টি। তার মধ্যে যেসব কারখানা ঋণ পেয়েছে, তাদের শ্রমিকদের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে সরাসরি মজুরির অর্থ পৌঁছে গেছে। সরকারের তহবিলের ঋণ না পেয়েও শতাধিক কারখানা মজুরি দিয়েছে। তবে দুর্ভাগ্যবশত অল্প কিছু কারখানা মজুরি দিতে পারেনি। কারণ, তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে এবং সরকারের প্রণোদনা তহবিল থেকেও ঋণ পায়নি।
জানতে চাইলে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি নাজমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ন্যায্য দাবি আদায়ে শ্রমিকেরা যখন আন্দোলন সংগ্রাম করেন, তখন তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। অনেক সময় শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। তাহলে অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়েও মালিকদের একটি অংশ যখন শ্রমিকের বেতন-বোনাস না দেয়, তখন অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত। তাদের কালো তালিকাভুক্তও করা উচিত। তিনি বলেন, মজুরি ও বোনাস না দেওয়ার তথ্য শিল্প পুলিশের কাছ থেকে নেওয়া।