দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ পর্যটন স্পটগুলো খুলে দিচ্ছে। ফলে মনোরম সৌন্দর্যমণ্ডিত দ্বীপগুলো পর্যটকদের আবার হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ভ্রমণপিপাসুরাও ইতিমধ্যে তাঁদের পছন্দের জায়গাগুলোতে যেতে শুরু করেছেন।
বহুদিন পর এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রগুলো এক এক করে আবার খুলতে শুরু করেছে। এর মধ্যে কোনো কোনো দেশ পুরোপুরি, আর কিছু দেশ আংশিকভাবে পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুলে দিয়েছে। ফলে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার মনোরম সৌন্দর্যমণ্ডিত দ্বীপগুলো পর্যটকদের আবার হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ইতিমধ্যে পর্যটকেরাও এসব গন্তব্যে যেতে শুরু করেছেন।
২০২০ সালে করোনার সংক্রমণ যখন প্রায় নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছিল, ঠিক তখনই করোনার নতুন ডেলটা ভেরিয়েন্ট বা ধরন এসে সবকিছুতে তালগোল পাকিয়ে দেয়। ফলে পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করে সব দেশ। এখন আবার পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ায় এ অঞ্চলসহ ইউরোপ–আমেরিকার ভ্রমণপিপাসুরা তাঁদের পছন্দের জায়গাগুলোতে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
মালয়েশিয়া সম্প্রতি আন্দামান সাগরে ১০৪টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত লংকাউই দ্বীপমালা পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে। তবে দেশটির উপকূলীয় এলাকা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের এ দ্বীপমালায় এখন কেবল টিকা নেওয়া অভ্যন্তরীণ পর্যটকেরাই ভ্রমণের অনুমতি পান। মালয়েশীয় সরকার অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের জন্য শিগগির তিওম্যান দ্বীপ, জোহর, মেলাকা ও বোর্নিও দ্বীপ খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। মালয়েশীয় পর্যটন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে চতুর্থ ধাপের পরিকল্পনায় বিদেশি পর্যটকদেরও ভ্রমণের সুযোগ দেওয়া হবে।
দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম ও সবচেয়ে জনবহুল দেশ ইন্দোনেশিয়াও শিগগির পর্যটকদের স্বাগত জানানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। দেশটির জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে বালি, বিনতান ও বাতাম। দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয় সিএনবিসিকে জানায়, টিকা কার্যক্রমে ব্যাপক অগ্রগতি হওয়ার ফলেই পর্যটনকেন্দ্রগুলো চলতি অক্টোবর মাসেই দেশি–বিদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
সিঙ্গাপুর গত মাস থেকে আংশিকভাবে ট্যুরিস্ট ভিসা দিতে শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয়রাই অবশ্য অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এ ছাড়া দেশটি এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আপাতত হংকং, ম্যাকাউ, চীন ও তাইওয়ানের পর্যটকদের ঢুকতে দিচ্ছে। যেসব পর্যটক টিকা নিয়েছেন, তাঁরাই কেবল এয়ার ট্রাভেল পাসের আওতায় আবেদন করলে ঢুকতে দিচ্ছে দেশটি। সার্বিক পরিস্থিতি এখনকার মতো চলতে থাকলে অন্যান্য দেশের পর্যটকদেরও প্রবেশ করতে দেওয়ার কথা ভাবছে সিঙ্গাপুরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে পর্যটকেরা জুরং পার্ক, সাফারি পার্কে যাওয়াসহ কেব্ল কারে চড়ে সাগরের পাশে সন্তোসা আইল্যান্ডের নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
এশিয়ায় পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে থাইল্যান্ড। দেশটি গত ১ জুলাই অল্প কিছু পর্যটনকেন্দ্র খোলে। তবে বর্তমানে সেই দেশে বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশের পর্যটক ঢুকতে পারেন। তাঁরা চলতি বছরের শেষ দিকে আকর্ষণীয় অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্র ও শহরগুলো ভ্রমণকারীদের জন্য খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যেসব পর্যটক টিকা নিয়েছেন এবং করোনা নেগেটিভ হয়েছেন, তাঁরাই এখন কোনো রকম কোয়ারেন্টিন না করেও ফুকেটে ঢুকতে পারেন। থাই পর্যটন কর্তৃপক্ষের (টিএটি) তথ্যানুযায়ী, গত জুলাই ও আগস্ট দুই মাসে টিকা নেওয়া ২৬ হাজার ৪০০ পর্যটক ফুকেটে প্রবেশ করেছেন। এতে দেশটির পর্যটন খাতে ১৬৩ কোটি থাই বাথ বা ৪ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার আয় হয়েছে, যা বাংলাদেশের ৪১২ কোটি টাকার সমান (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। এ ছাড়া পর্যটকেরা বর্তমানে থাইল্যান্ডের কোহ্ সামুই এবং ক্র্যাবি ও ফ্যাঙ–এনগা প্রদেশে ভ্রমণ করতে পারেন। থাইল্যান্ডের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পর্যটন খাতের অবদান ১৮ শতাংশ।
ভিয়েতনামের বৃহত্তম দ্বীপ ফু কোঅক চলতি মাসেই টিকা নেওয়া পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। খোলার প্রথম তিন মাসে প্রতি মাসে দুই থেকে তিন হাজার পর্যটক সেখানে যেতে পারবেন। পরের তিন মাসের প্রতিটিতে পাঁচ হাজার থেকে দশ হাজার পর্যটক যাওয়ার সুযোগ পাবেন। সেই দেশের সরকারি মালিকানাধীন অনলাইন সংবাদমাধ্যম ভিজিপি এ খবর পরিবেশন করেছে। ফু কোঅক দ্বীপে যেতে রয়েছে কেব্ল কারব্যবস্থা। এটি বিশ্বের দীর্ঘতম কেব্ল কারগুলোর একটি, যা লম্বায় পাঁচ মাইল। দ্রুতগতির কেব্ল কারে চড়ে ওই দূরত্বে পৌঁছাতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লাগে।
কম্বোডিয়া গত মে মাসের শেষ দিক থেকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হয়। দেশটিতে প্রবেশের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করোনা পরীক্ষা করাতে হয়। পরে আবার পরীক্ষা করাতে ও কোয়ারেন্টিনে থাকতে হতে পারে—এ বিবেচনায় সম্ভাব্য খরচ বাবদ দুই হাজার ডলারও জামানত রাখতে হয়।
মালদ্বীপই এখন সম্ভবত এশিয়ার একমাত্র দেশ, যারা সব দেশের পর্যটককে স্বাগত জানাচ্ছে। তবে দেশটিতে প্রবেশের ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশি পর্যটকদের করোনা পরীক্ষা করাতে হয়।
দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশ তাইওয়ানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু দেশের পর্যটক ইতিমধ্যে টিকা নেওয়া সাপেক্ষে যেতে পারেন। তবে সেই দেশে ঢুকেই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন পালন ও চলে যাওয়ার ৭২ ঘণ্টা আগে করোনা পরীক্ষা করাতে হয়।
সূত্র: সিএনবিসি ও ট্রিপস্যাভি ডট কম।