৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৮৭০ টাকা করার কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা, যা তিন বছর আগেও ৪৬৫-৫১০ টাকা ছিল।
সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আরও ১২ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিপণনকারী কোম্পানিগুলো। তাদের প্রস্তাবে ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের নতুন দাম ১৮০ টাকা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।
ভোজ্যতেল বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশন গতকাল রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে নতুন এই দর আগামীকাল মঙ্গলবার (১ মার্চ) থেকে কার্যকর হওয়ার কথা বলেছে।
অবশ্য সূত্র জানিয়েছে, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলোর এক বৈঠকে এখনই দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। আগে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) নতুন দাম আমদানি মূল্যের অনুপাতে যৌক্তিক কি না, তা বিশ্লেষণ করবে। তারপর দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হবে।
জানতে চাইলে ভোজ্যতেল বিপণনকারী কোম্পানি টিকে গ্রুপের পরিচালক (ফাইন্যান্স ও অপারেশন) মো. শফিউল আতহার তাসলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আশা করি, দু-এক দিনের মধ্যেই দাম নিয়ে আলোচনার জন্য আমাদের ডাকা হবে।’ তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ছেই। এ অবস্থায় দেশে যৌক্তিক দাম নির্ধারণ না করা হলে সরবরাহে ঘাটতি তৈরির আশঙ্কা থাকে।
নতুন প্রস্তাবে শুধু বোতলজাত সয়াবিন নয়, খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দামও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এখন খোলা সয়াবিনের নির্ধারিত দর লিটারপ্রতি ১৪৩ টাকা, যা কোম্পানিগুলো ১৫৭ টাকা করতে চায়। পাম সুপার তেল ১৪৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে করতে চায় ১৫০ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের বোতলের নির্ধারিত দর এখন ৭৯৫ টাকা, যা ৮৭০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, আমদানিমূল্য বিবেচনায় ৩ ফেব্রুয়ারি ১ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল ১৮৬ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে ভোক্তাদের কথা বিবেচনা করে ৬ টাকা ছাড় দিয়ে তারা ১৮০ টাকা নির্ধারণ করে বাজারে ছাড়তে চায়।
এর আগে সর্বশেষ ৬ ফেব্রুয়ারি সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বেড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব বলছে, ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি ৫ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৪৬৫ থেকে ৫১০ টাকা। বিশ্ববাজারে দাম যত বাড়ছে, সরকারের রাজস্ব বাড়ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর ছাড়ের অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েও সাড়া পায়নি।
এদিকে বাজারে খোলা তেলের সরবরাহে কিছুটা ঘাটতির কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ দোকানেই খোলা সয়াবিন ও পাম সুপার তেল নেই। বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি পড়েছে।
বাজারে এখন চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, ময়দা, মুরগি, গরুর মাংসসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপক চড়া। টিসিবির ট্রাকের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও সাধারণ মানুষকে পণ্য না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুঝলাম, ভোজ্যতেলের দাম বিশ্ববাজারে বেড়েছে। চাল, মাছ, মাংস, সবজির জন্যও কি আমাদের বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হয়?’