আপাতত ভুটানকে ছাড়াই বিবিআইএন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে অবাধ গাড়ি চলাচলের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা বিবিআইএন নামে পরিচিত। ইতিমধ্যে এই চার দেশের মধ্যে বিবিআইএন মোটর ভেহিক্যালস অ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ) বা মোটরযান চলাচল চুক্তি হয়েছে। কিন্তু ভুটান আপাতত এই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী নয়। তাই ভুটানকে বাদ দিয়েই বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে গাড়ি চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই অবস্থায় অবাধ গাড়ি চলাচল চুক্তির প্রটোকল নিয়ে আজ বুধবার থেকে ভারতের বেঙ্গালুরুতে দুই দিনব্যাপী বৈঠক শুরু হচ্ছে। সেখানে ভুটানের কোনো প্রতিনিধিদল অংশ নিচ্ছে না বলে জানা গেছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ওই সভায় অংশ নেবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে কীভাবে গাড়ি চলাচল করবে, তা নিয়ে আলোচনা করতেই এই সভা। আলোচনায় থাকবে যাত্রী ও পণ্যবাহী বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য মোটরযান চলাচলের প্রটোকল তৈরির দিকনির্দেশনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যারা ইচ্ছুক, তাদের নিয়েই যান চলাচল শুরু করে দেওয়া উচিত। পরে কোনো দেশ যদি আগ্রহী হয়, তাহলে এতে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। তাই স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি), প্রটোকল ঠিক করে যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করা দরকার। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে।
এদিকে ভুটান বিবিআইএনে আপাতত যোগ দিচ্ছে না, তা সম্প্রতি বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। গত ২১ ও ২২ ডিসেম্বর কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও ভুটানের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিবিআইএন উদ্যোগে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তখন বিবিআইএন নিয়ে ভুটানের প্রতিনিধিরা নিজের অবস্থান জানান। সেখানে ভুটানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভুটানকে ছাড়াই যেন বাকি তিন দেশ (বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল) যেন অবাধ গাড়ি চলাচল উদ্যোগ এগিয়ে নেয়। ভুটানের সংসদের উচ্চকক্ষ এখনো চার দেশের মধ্যে যান চলাচল চুক্তির অনুমোদন দেয়নি। তাই ভুটান এখনো এই চুক্তির আওতায় চার দেশের মধ্যে গাড়ি চলাচলের জন্য প্রস্তুত নয়। তাই পুরো প্রস্তুতি নিয়ে পরবর্তীকালে ভুটান বিবিআইএন উদ্যোগে যোগ দেবে। উভয় পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করা ওই সভার কার্যপত্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দুই দিনের ওই সভায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্যসচিব শুভাশীষ বসু। ভুটানের নেতৃত্ব দেন অর্থনৈতিক সম্পর্কবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব দাসো ইয়েশি ওয়াংদি।
ওই সভায় অংশ নেওয়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব এহতেশামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন দেশের গাড়ি ভুটানে চলাচল করলে সে দেশের পরিবেশ নষ্ট হতে পারে—এই আশঙ্কায় ওই দেশের সংসদের উচ্চকক্ষ যান চলাচল চুক্তি অনুমোদন করেনি। পরে প্রস্তুতি নিয়ে ভুটান বিবিআইএনে যোগ দিতে আগ্রহী।
বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে মোটরযান চলাচল চুক্তি হয় ২০১৫ সালের জুন মাসে। ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে এ চুক্তি হয়। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এই চার দেশের মধ্যে যান চলাচলের কথা ছিল। ভুটানের সংসদের অনুমোদন না হওয়ায় গত দুই বছরেও চুক্তির বাস্তবায়ন আটকে ছিল। শুধু চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল সব।
এ চুক্তির মাধ্যমে ঢাকা থেকে পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী গাড়ি যেমন ভারত যাবে, আবার ভারত হয়ে নেপালও যেতে পারবে। এখন ভুটান আপাতত না থাকায় তিনটি দেশই পরস্পরের সড়কপথ ব্যবহার করতে পারবে। চুক্তির পরপরই এই পর্যন্ত দুটি পরীক্ষামূলক চালান গেছে। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে পরীক্ষামূলক চালান হিসেবে কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় গেছে ডিএইচএল এক্সপ্রেসের একটি চালান। কয়েক মাস পরে তৈরি পোশাকবাহী দুটি ট্রাক ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে দিল্লি গেছে।