ভাঙার অনুমতি নিয়ে বানানো হচ্ছে জাহাজ

খাজা শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে জাহাজ নির্মাণের কাজ চলছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের মাদামবিবির হাট এলাকায়। ছবি: সংগৃহীত
খাজা শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে জাহাজ নির্মাণের কাজ চলছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের মাদামবিবির হাট এলাকায়।  ছবি: সংগৃহীত

জাহাজভাঙার অনুমতি নিয়ে উল্টো জাহাজ বানানোর কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপকূলের দুটি জাহাজভাঙা কারখানা। এ জন্য কোনো অনুমতি নেয়নি তারা। জাহাজ বানানোর ক্ষেত্রে যে ধরনের অবকাঠামো ও ছাড়পত্র দরকার, তা–ও নেই ইয়ার্ড দুটির।

এই ইয়ার্ড দুটি হলো মাদামবিবির হাটের গোল্ডেন ইস্পাত এবং শীতলপুরের কবির শিপ ব্রেকিং লিমিটেডের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান খাজা শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড। কয়েক মাস ধরে প্রতিষ্ঠান দুটি জাহাজ ভাঙার পাশাপাশি লাইটার জাহাজ নির্মাণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠান দুটিকে নোটিশ দিয়ে শুনানিতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠান দুটি জাহাজ ভাঙার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তর থেকে ছাড়পত্র নিয়েছে। ভাঙার অনুমতি নিয়ে তারা এখন জাহাজ নির্মাণ করছে। কোনোভাবেই এ কাজ করতে পারে না তারা। তাই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠান দুটি বিনিয়োগ বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর, কলকারখানা অধিদপ্তর, ভূমি কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তর থেকে জাহাজ ভাঙার জন্য ছাড়পত্র নিয়েছে। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জাহাজ ভাঙার জন্য তাদের জমি ইজারা দিয়েছি, নির্মাণের জন্য নয়। এখন তারা জাহাজ নির্মাণ করলে তা শর্ত ভঙ্গের পর্যায়ে পড়ে।’

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, খাজা শিপইয়ার্ডে কারখানার ভেতরে এক পাশে একটি জাহাজের কাঠামো তৈরির কাজ চলছে। ১০-১২ জন শ্রমিক এই কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। অনেকের গায়ে নিরাপত্তার সরঞ্জামও নেই। একই ইয়ার্ডে জাহাজ ভাঙার কাজও চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, প্রায় এক বছর ধরে খাজা শিপইয়ার্ডে জাহাজ নির্মাণের কাজ চলছে।

একইভাবে কুমিরার গোল্ডেন ইস্পাত কারখানায়ও জাহাজ ভাঙার পাশাপাশি জাহাজ নির্মাণ করা হচ্ছে। অথচ বিনিয়োগ বোর্ড থেকে নেওয়া ছাড়পত্রে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, জাহাজ ভাঙার ছাড়পত্র।

বিনিয়োগ বোর্ডের চট্টগ্রামের পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শর্ত ভঙ্গ করে জাহাজ নির্মাণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিনিয়োগ বোর্ডের কর্মকর্তারা ইয়ার্ড পরিদর্শন করে আসার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের জাহাজ নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জাহাজ নির্মাণের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিনিয়োগ বোর্ড, কলকারখানা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই দুটি প্রতিষ্ঠান যথাযথ ছাড়পত্র নেয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোল্ডেন ইস্পাত লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক নূপুর চৌধুরী বলেন, গোল্ডেন স্টিল বার্জ (জাহাজ) নির্মাণ করছে। এ জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি রয়েছে। পরিবেশসহ অন্যান্য ছাড়পত্রও নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের কাছ থেকে আমরা সময় নিয়েছি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. হারুন অর রশিদ পাঠানসহ একটি দল ২১ ও ২৩ জানুয়ারি ইয়ার্ড দুটি পরিদর্শন করে। এ সময় তারা জাহাজ নির্মাণের প্রমাণ পায়। এরপর নোটিশ দেওয়া হয়।

অভিযোগ প্রসঙ্গে খাজা শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের মহাব্যবস্থাপক মো. মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘জাহাজ নির্মাণ করার জন্য আমাদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পরিবেশসহ কয়েকটি ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। তাই নোটিশ দিয়েছে।’